জয়পুরহাটে দুই থেকে তিন শ টাকা বেশি দামে প্রতি বস্তা আলুবীজ ও টিএসপি সার কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। আবার এসব কৃষিপণ্য কেনার পর রসিদও দেয়া হচ্ছে না।

রোপণ মৌসুমের শুরুতেই নায্যমূল্যে উচ্চ ফলনশীল আলুবীজ ও ট্রিপল সুপার ফসফেট বা টিএসপি সার কিনতে বাড়তি টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

দুই থেকে তিন শ টাকা বেশি দামে প্রতি বস্তা আলুবীজ ও টিএসপি সার কিনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। আবার এসব কৃষিপণ্য কেনার পর রসিদও দেয়া হচ্ছে না।

নায্যমূল্যে না পেয়ে প্রয়োজনের স্বার্থেই এসব কৃষিপণ্য বেশি দাম দিয়ে কিনতে তারা বাধ্য হচ্ছেন। জেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

 

জয়পুরহাটে এ বছর ৪০ হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে আলু রোপণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ। যেখানে উচ্চ ফলনশীল বীজ আলুর চাহিদা ৪৬ হাজার মেট্রিক টন।

কৃষি বিভাগ জানায়, জেলায় এ পর্যন্ত ১ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা আলু রোপণ করেছেন। জেলায় উচ্চ ফলনশীল আলুবীজের চাহিদা ৪৬ হাজার টন। যেখানে সরকারি বিএডিসি, ব্র্যাক, এসিআইসহ অন্য বেসরকারি কোম্পানির আলুবীজের বরাদ্দ মাত্র ১০ হাজার টন।

ব্র্যাক অনুমোদিত প্রথম শ্রেণির আলুবীজ ডিলার ক্ষেতলালের চৌমুহনী বাজারের শাহজামান তালুকদার বলেন, ‘গত বছর ব্র্যাকের আলুবীজ রোপণ করে উৎপাদন বেশি হওয়ায় কৃষকরা লাভবান হয়েছেন। এ জন্য ব্র্যাকের আলুবীজে এবার কৃষকদের আগ্রহ বেশি। খুচরা ব্যবসায়ীরা বাজারে এই বীজ দুই-তিন শ টাকা বেশি দামে বিক্রি করছেন। তবে তাদের নিয়ন্ত্রণ তো আমরা করতে পারব না।’ তিনি প্রশাসনিকভাবে বাজার মনিটরিংয়ের দাবি জানান।

ব্র্যাকের অ্যাস্টেরিক জাতের এ গ্রেড ৪০ কেজির এক বস্তা আলুবীজের দাম ১ হাজার ৭২০ টাকা। বি গ্রেডের ১ হাজার ৬৪০ টাকা। আর ডায়মন্ড জাতের এ গ্রেড আলুবীজ ১ হাজার ৫৬০ টাকা এবং বি গ্রেডের ১ হাজার ৪৪০ টাকা।

জেলার বিভিন্ন বাজারে ব্র্যাকের প্রতি বস্তা আলুবীজ নির্ধারিত দামের চেয়ে অতিরিক্ত দুই-তিন শ টাকা বেশি দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গত বছর গাছে মড়ক দেখা দেয়ায় বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কপোরেশন বা বিএডিসির আলুবীজের চাহিদা কমে গেছে।

বিএডিসির অ্যাস্টেরিক জাতের এ গ্রেড আলুবীজের ৪০ কেজির প্রতি বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০ টাকা এবং বি গ্রেড আলুবীজ বিক্রি হচ্ছে ৯৮০ টাকা।

অন্য দিকে আলু মৌসুমে সারের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অসাধু সার ব্যবসায়ীরা কৃষকদের বেশি দামে সার কিনতে বাধ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সার বিক্রির সময় কোনো রসিদও দেয়া হচ্ছে না।

টিএসপি সারের দাম বস্তাপ্রতি তিন থেকে চার শ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে বলে কৃষকরা অভিযোগ করেছেন।

সরকার নির্ধারিত ৫০ কেজির এক বস্তা টিএসপি সারের দাম ১ হাজার ১০০ টাকা হলেও কৃষকরা তা কিনছেন তিন থেকে চার শ টাকা বেশি দিয়ে।

ক্ষেতলালে বেলগাড়ি গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ইটাখোলা বাজার থেকে তিনি ১ হাজার ৫০০ টাকা বস্তায় টিএসপি সার কিনেছেন।’

একই গ্রামের কৃষক কফির উদ্দিন বলেন, ‘ইটাখোলা বাজার থেকে সার কেনার পর রসিদ চেয়েও তিনি পাননি।’

আক্কেলপুরের সোনাই মাগুরা গ্রামের কৃষক আব্দুল জলিল বলেন, ‘ব্র্যাকের ৪০ কেজির এক বস্তা আলুবীজের দাম ২ হাজার ২০০ টাকা চাওয়ায় ক্ষেতলালের বটতলী থেকে ১ হাজার ৬০ টাকা দামে বিএডিসির ২০ বস্তা আলুবীজ কিনেছি। তবে ১ হাজার ৩০০ টাকার নিচে টিএসপি সার কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না।’

বেশি দামে টিএসপি সার বিক্রির কথা স্বীকার করে ক্ষেতলালের বটতলী বাজারের বিসিআইসির অনুমোদিত সার ব্যবসায়ী দুলাল মিঞা সরদার বলেন, ‘প্রান্তিক পর্যায়ে সারের দাম কিছুটা বেশি। এ মাসে যা বরাদ্দ পাওয়া গেছে তা বাজারে দ্রুত সরবরাহ হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জেলায় চলতি মাসে ইউরিয়া ৫ হাজার ৪২২, টিএসপি ২ হাজার ৭১, এমওপি ৪ হাজার ৬২০ এবং ডিএপি সার ৪ হাজার ৬০৩ মেট্রিক টন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া গত মাসেরও বরাদ্দ রয়েছে।

‘বিসিআইসির ৫৮ জন, বিএডিসির ১১১ জন এবং কার্ডধারী ৩২৩ জন সার ব্যবসায়ীর মাধ্যমে কৃষকরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে এসব সার কিনতে পারবেন। কৃষি উপকরণ কৃষকরা যেন নায্যমূল্যে কিনতে পারেন তার জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো প্রকার শৈথিল্য মেনে নেয়া হবে না।’