স্টাফ রিপোর্টার, বাঘারপাড়াঃ বাঘারপাড়ায় কৃষি অফিসের গাফিলতিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বাড়তি দামে রাসায়নিক সার বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ফলে কৃষকরা অতিরিক্ত ব্যয়ে দিশেহারা।
উপজেলা কৃষি বিভাগের কোনো তদারকি না থাকায় ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা কৌশলে এভাবে চাষীদের কাছে বেশি দামে সার বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের অর্থ । চাসীদের এক প্রকার বাধ্য হয়ে বেশি দামেই সার ক্রয় করতে । এমন কি ক্যাশ মেমোয় সার বিক্রি হচ্ছে না বাঘারপাড়ায। যার ফলে বাধ্য হয়ে বাড়তি দামে বিক্রি করছেনা ডিলাররা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ইউরিয়া সারের সরকার নির্ধারিত দাম ৮০০ টাকা। যার প্রতি কেজির দাম ১৬ টাকা। উপজেলায় বিসিআইসি (বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা) ডিলার রয়েছেন ১৪ জন, তারা ইউরিয়া সার বিক্রি করবে আর বিএডিসির (বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন) ডিলার আছেন ২৩ জন তারা শুধু মাত্র নন-ইউরিয়া সার (টিএসপি, ডিএপি, এমওপি) বিক্রি করবেন। তবে বিএডিসি ডিলারের মধ্যে বিসিআইসি ডিলারও কয়েকজন রয়েছেন, তারা সব সারই বিক্রি করছেন। এছাড়া সরকার নিধার্রিত খুচরা ব্যবসায়ী প্রতি ইউনিয়নে ৯ জন করে ৮১ জন রয়েছেন। তবে এর মধ্যে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। কৃষি বিভাগের চাহিদা অনুযায়ী সারের সরবরাহ নিশ্চিত করবে বিসিআইসি ও বিএডিসি। গত মাসে (আগস্ট) বরাদ্দ ছিল ৩৯০ মেট্রিক টন। উত্তোলন করা হয়েছে ৩৬৩ মেট্রিক টন।
ধূপখালী গ্রামের কৃষক গোলাম খয়বার জানান, সাত বিঘা জমিতে এ পর্যন্ত ছয় বস্তা ইউরিয়া দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দুই বস্তা ইউরিয়া ৯৫০ টাকা এবং চার বস্তা ইউরিয়া ৯২০ টাকা করে কিনেছি। সরকারি দাম কত জানি না। আমি দোকান থেকে এই দামেই সার কিনেছি।’
পাইকপাড়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম (বাবলু) জানান, ৮-৯ বিঘা জমিতে চাষ করেছেন। ১০-১২ বস্তা ইউরিয়া সার কিনেছেন। ৯০০ থেকে শুরু করে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত বস্তা প্রতি কিনেছেন। প্রায় সব দোকানেই এরকম দামে বিক্রি হচ্ছে। কৃষি বিভাগের মনিটরিং না থাকায় চড়া দামে সার কিনতে হয়েছে বলে অভিযোগ করেন এই কৃষক।
নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক দোহাকুলা এলাকার কৃষক তিনি অভিযোগ করে বলেন, কোনো উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠে নামে দেখেন না। চাষীদের খোঁজখবর নেয় না। জিম্মি হয়ে সাড়ে ৮০০ টাকা দরে ইউরিয়া কিনেছি, যার সরকারি দাম ৮০০ দাম।
খুচরা সার বিক্রেতা জিয়াউর রহমান বলেন, বাজারে ইউরিয়া সারের কিছুটা সারের সংকট রয়েছে। যার কারনে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
চাষিদের অভিযোগ, সার ডিলারদের কাছে সরকারি দরে ক্যাশ মেমোসহ সার কিনতে গেলে সার নেই বলে জানিয়ে দেয়। আর বেশি দামে নিলেই পাওয়া যায় পর্যাপ্ত সার। তাই ডিলাররা সারের ১-৫ বস্তার মেমো না করে বিভিন্ন দোকানদারের নামে শত শত বস্তার মেমো করছেন। আর সাধারণ চাষিদের কাছে মেমো ছাড়া বেশি দামে বিক্রি করছেন। সাড়ে ৮০০ থেকে শুরু করে প্রায় ১ হাজারের মধ্যে এক একজনের কাছে এক এক দামে সার বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। কৃষি বিভাগ তদারকি করলে চাষীদের এমন ক্ষতির মুখে পড়ার সম্ভাবনা ছিল না। শুধু তাই নয় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও তেমন খোঁজ খবর নেন না।
বাঘারপাড়া উপজেলা সদরে বিসিআইসি সাব ডিলার হারুন অর রশিদ বাবলুর কাছে পরিচয় গোপন রেখে সারের দাম জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি মোটা ইউরিয়া সাড়ে ৮০০ টাকা ও চিকুনটা নেই বলে জানিয়ে দেন। চিকুন ইউরিয়া কত করে বিক্রি করছেন জানতে চাইলে ১ হাজার টাকা মত। পরে সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া হলে সংযোগ বিছিন্ন করে দেন পরে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
বিসিআইসি সাব ডিলার ও বিএডিসির ডিলার বিএম কবীর হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বেশি দামে সার বিক্রি করা হচ্ছে না। বরং ৮০০ টাকার নিচে সার বিক্রি করা হচ্ছে। চাষীরা ক্যাশ মেমো চাইলে তাদের দেওয়া হয়।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, সারের কোনো সংকট নাই। ঘাটতিও নাই। কোনো ডিলার বা ব্যবসায়ী কৃষকের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।