কুমিল্লার মনোহরগঞ্জ উপজেলার সেই তিন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ভোটগ্রহণ আর হচ্ছে না। ফলে নৌকা প্রতীকের তিন চেয়ারম্যান প্রার্থীই ‘বিনা ভোটে নির্বাচিত’ থাকছেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, ওই তিন ইউনিয়নে চার স্বতন্ত্র প্রার্থীর ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের আইনগত কোনো সুযোগ নেই।
এর আগে চার প্রার্থীকে নির্বাচনে লড়ার সুযোগ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এক আদেশে গত মঙ্গলবার ছয় সপ্তাহের স্থগিতাদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ।
ইউপি নির্বাচনের ষষ্ঠ ধাপে আগামী ৩১ জানুয়ারি মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ভোট হওয়ার কথা। উপজেলার ১১টি ইউপির সবগুলোতেই আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থীদের গত ১৪ জানুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করেছিলেন রিটার্নিং অফিসার। এরই মধ্যে ঝলম উত্তর, লক্ষ্মণপুর ও সরসপুর—এই তিন ইউনিয়নের চারজন প্রার্থী গত ২০ জানুয়ারি উচ্চ আদালতের নির্দেশে তাঁদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। নানা নাটকীয়তার পর ২৫ জানুয়ারি তাঁদের প্রতীক বরাদ্দ দিয়ে ভোটগ্রহণের প্রস্তুতিও নেওয়া হয়।
ওই চারজনই আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী (স্বতন্ত্র) চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। তাঁরা হচ্ছেন—ঝলম উত্তর ইউনিয়নে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, সরসপুর ইউনিয়নে গোলাম সরওয়ার মজুমদার ও জসিম উদ্দিন এবং লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নে আবদুল বাতেন।
চার স্বতন্ত্র প্রার্থী রিট আবেদন করে উচ্চ আদালতের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে শেষ মুহূর্তে এসে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু সেই আদেশের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করেন এর আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষিত নৌকার তিন প্রার্থী। গত মঙ্গলবার বিকেলে সুপ্রিম কোর্টের আদেশ ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেন আপিল বিভাগ।
এ অবস্থায় বুধবার রিটার্নিং অফিসার রাজিবুল করিম জানান, এ বিষয়ে পরবর্তী করণীয় ইসি থেকে তাঁদের জানানো হবে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তাকে দেওয়া এক চিঠিতে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন ইসির পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) সহিদ আব্দুস ছালাম। শুক্রবার ওই চিঠির একটি কপি কালের কণ্ঠের হাতে এসেছে। সেখানে সহিদ আব্দুস ছালাম উল্লেখ করেছেন, ওই চার প্রার্থীর রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত যে আদেশ দিয়েছেন, তা ছয় সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন আপিল বিভাগ। এ কারণে ১৩ জানুয়ারি দেওয়া আগের আদেশের কার্যকারিতা বর্তমানে বহাল ও বলবৎ নেই। এ জন্য ওই চার প্রার্থীর ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠেয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের আইনগত কোনো সুযোগ নেই মর্মে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের জন্য জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তাকে বলেন তিনি।
শুক্রবার বিকেলে এই চিঠির সত্যতা নিশ্চিত করে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম বলেন, উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগের পরের স্থগিত আদেশের কারণে ওই চার প্রার্থীর সব কিছুই এখন বাতিল হয়ে গেছে। যার কারণে ওই তিনটি ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতই থাকছেন।
গতকাল বিকেলে এ প্রসঙ্গে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, ‘নির্বাচন হলে ওই প্রার্থীরা জামানত হারাবেন। এ জন্য তাঁরা নির্বাচনকে এত ভয় পান। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারা আমাদের নাগরিক অধিকার। আমরা আমাদের অধিকার আদায়ে আইনগতভাবেই শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাব। ’
আগামী ৩১ জানুয়ারি মনোহরগঞ্জের ভোট হবে। গত ১৮ ডিসেম্বর এই উপজেলার ১১টি ইউপির নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। তফসিল অনুযায়ী গত ৩ জানুয়ারি ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ৬ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র বাছাই হয়। ১৩ জানুয়ারি প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।