আজিজুল ইসলাম বারী, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মিরু তার সরকারি অফিসে বসেই তিনি মাদক খান বলে দীর্ঘদিন থেকেই অভিযোগ উঠেছিল। অবশেষে অফিসেই মাদক খাওয়ার ভিডিও ফাঁস হয়েছে। ওই ভিডিওতে মিরুকে এলাকার একজন চিহ্নিত মাদক কারবারির কাছ থেকে ফেনসিডিলের বোতল অফিসের চেয়ার থেকে উঠে নিজের পকেটে নিতে ভিডিওতে দেখা গেছে।

জানা গেছে, হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের নতুন ভবনের নিচতলায় তার অফিসকক্ষ। ওই ভবনেই বসেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ অন্য দপ্তরের কর্মকর্তাগণ। ফেনসিডিলের মতো মাদক নিয়ে নির্দিষ্ট সরবরাহকারী সরাসরি ওই ভবনে থাকা ভাইস চেয়ারম্যানের কক্ষে গিয়ে দীর্ঘ সময় বসে থাকেন। পরে ওই অফিসে লোক থাকায় মাদক ব্যবসায়ের কাছে গিয়ে পকেটে ফেনসিডিলের বোতলটি দিতেও বলেন। ঘনিষ্ঠ মাদকাসক্তদেরও কেউ কেউ মাদক সেবন করে থাকেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

মোবাইলে ধারণ করা দুই মিনিট ৫৫ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আনোয়ার হোসেন মিরু নিজের চেয়ার থেকে উঠে টয়লেটে প্রবেশ করেন। টেবিলের অন্য প্রান্তে তখন একজন পুরুষ ও একজন নারী বসে ছিলেন। টয়লেট থেকে বের হয়ে তিনি সোজা চলে যান টেবিল থেকে কিছুটা দূরে সোফার কাছে, সেখানে বসা লুঙ্গি পরিহিত এক ব্যক্তির সামনে। কিছু সময় পর লুঙ্গির ভাঁজে লুকিয়ে রাখা একটি ফেনসিডিলের বোতল মিরুর হাতে তুলে দেন ওই ব্যক্তি। মিরু কিছুটা আড়াল করে সেই বোতল নিয়ে আবারও ঢুকে পড়েন টয়লেটে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ভাইস চেয়ারম্যান মিরুকে যিনি ফেনসিডিলের বোতল দিয়েছেন তিনি উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের কানিপাড়া গ্রামের জাফর আলীর ছেলে ইউসুফ (৪২)। যার নামে একাধিক মাদক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক মাদক কারবারি বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান মিরু প্রায় সময় ফেনসিডিলের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন। ফ্রিতে ফেনসিডিল না দিলে বিভিন্ন হুমকিধমকি দেন।’

তবে মাদক কারবারি ইউসুফ বলেন, ‘আমার নামে শুধু একটা মাদক মামলা রয়েছে। আমি ভাইস চেয়ারম্যান মিরুর কাছে টাকা পাই। সেই টাকা আনতে গিয়েছিলাম।’ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যন আনোয়ার হোসেন মিরু সাংবাদিকদের বলেন, ‘না, আমি মাদক নেইনি। ইউসুফ (মাদক সরবরাহকারী) আমার কাছে টাকা পায়। সেই টাকার জন্য সে আমার কাছে এসেছিল।

হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজির হোসেন বলেন, অফিসকক্ষে বসে মাদক সেবন বড় অপরাধ। যেহেতু ভাইস চেয়ারম্যানরা উপজেলা চেয়ারম্যানের তত্ত্বাবধানে সেহেতু তার অপরাধ প্রমাণিত হলে উপজেলা চেয়ারম্যান ব্যবস্থা নেবেন। হাতীবান্ধা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মামুন বলেন, যদি সত্যি তিনি অফিসে বসে মাদক সেবন করেন তাহলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।