তালতলী(বরগুনা)প্রতিনিধি: দুই যমজ মেয়ের লাশের পরে এবার এলো মা সিমু আক্তারের লাশ। নিখোঁজের ৫ দিন পর গত কাল সিমু আক্তারের লাশ সুগন্ধা নদীতে ভেসে ওঠে। দাফনও হবে পাশাপাশি করবে। বাড়িতে প্রতিবেশিরা সিমুর কবর প্রস্তুত করলে নেই কন্নার আওয়াজ। সিমুর বাবা আজিজ মেয়ের লাশের খাটিয়ার পাশে দাড়িয়ে থেকে কিছুই বলার যেনো ভাষা নেই তার মুখে।

এর আগে গতকাল বুধবার(২৯ ডিসেম্বর) সকালে নদী থেকে লাশটি উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা ঝালকাঠি জেলা প্রশাসন। সিমুর ভাই হান্নান নিজেই গিয়ে তার বোনের লাশ সনাক্ত করেন।

জানা গেছে, বরগুনা তালতলী উপজেলার আগাপাড়া এলাকার আব্দুল আজিজের মেয়ে সিমু ও দুই নাতনি লামিয়া-সামিয়া,স্ত্রী দুলু বেগম (৫৫) ঢাকা থেকে বরগুনা আসতেছিল। তারা অভিযান-১০ লঞ্চে উঠেছিল বলে আব্দুল আজিজ জানতে পারেন। এরপর খবর আসে লঞ্চে আগুন লেগেছে। ওই আগুনে আব্দুল আজিজের দুই নাতনি পুড়ে মারা গেছেন।

লাশও পেয়ে দাফন করেন কিন্তু তখন মেয়ে নিঁখোজ ছিলো ও স্ত্রী হাসপাতালের আইসিউতে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। এ দিকে সিমুর স্বামী রবিউল দুই মেয়ে স্ত্রীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন।

বৃহস্পতিবার(৩০ ডিসেম্বর) ভোর রাতে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যমজ বোন লামিয়া-সামিয়া কবরের পাশেই তার মা সিমুর কবর প্রস্তুত হচ্ছে। প্রতিবেশিরা যাওয়া আসা থাকলেও বাড়িতে নেই কান্নার কোনো শব্দ। এলাকার লোকজন জানান,যেহেতু লাশটি অর্ধগলিত তাই ভোররাতেই দাফন সম্পন্ন করা হয়।

সাংবাদিকদের দেখে আব্দুল আজিজ হু-হু করে কেঁদে উঠে বলেন,মোর নাতীর(নাতনী) লাশ নিয়ে লইয়া আইছেন কয়দিন আগে। আইজগো আইছেন মোর মাইয়ার লাশটা নিয়ে। এ কেমন বিচার করলো আল্লাহ্। মুই কি ভুল হরছি আল্লাহ্’র ধারে যে হেই ভুলের এতো বড় শাস্তি দিলো মোরে। এহন মাইয়াডার মরা মুখটি খুলে দেন আমার মুখটি শেষবারের মতোই দেখবো।

তিনি আরও বলেন, আম্মেরা কেম্মে বোঝবেন যে সন্তানের লাশ বাবা কাঁেধ নিয়ে কবরস্থানে গিয়ে দাফন করা । এই কষ্টের ভার একজন বাবার কেম্মে মেনে নিবে। মেয়েডার লাশ সামনে রেখে কানতেও পারি না। এইটু কথা বলেই তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

সিমুর ভাই হান্নান বলেন, প্রতিদিনই বোনের লাশের খোঁজখবর নিতে ঝালকাঠি সেই ঘটনাস্থলে যাই। গতকাল জানতে পারি দুইটি মহিলার লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এমন সংবাদ পেয়ে ছুটে যাই গিয়ে দেখি আমার বোনের লাশটি পড়ে আছে মাটিতে। জেলা প্রশাসনের কাছে বোনের সকল তথ্য দিয়ে আমার বোনের লাশ নিয়ে বাড়িতে আসি।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কাওসার হোসেন বলেন,নিহতদের পরিবারকে দাফনের জন্য ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়েছে।