মহান স্বাধীনতার মাসে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলায় কাফনের কাপড় পরে বীর মুক্তিযোদ্ধারা মানববন্ধন করেছেন। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি কর্তৃক নামঞ্জুর এবং দ্বিধাবিভক্ত সিন্ধান্তর তালিকায় নাম থাকা ও হয়রাণির প্রতিবাদে ১৪৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা এ মানববন্ধন করেন। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে এই মুক্তিযোদ্ধাদের কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত সিন্ধান্ত তালিকায় রাখা না হয় তাহলে তারা আত্মহুতি দিবেন বলে ঘোষনা দিয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার উপজেলার টুপুরিয়া গ্রামে নির্মিত হেমায়েত বাহিনী স্মৃতি যাদুঘরের সামনে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ঘন্টাব্যাপী চলে এ মানববন্ধন।
এ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধা সামচুল হক, সিরাজুল ইসলাম, মোমেনা বেগম, রমজান আলী, আব্দুল আজিজ, শেখ আব্দুল মান্নান, আবুল কালাম আজাদ দাড়িয়া বক্তব্য রাখেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আব্দুল কালাম আজাদ দাড়িয়া বলেন, যাচাই বাছাইয়ের নামে প্রকৃত বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হয়রানি করা হয়েছে। যাচাই বাছাইয়ের তালিকায় নাম থাকা ৩৩৬জনের কাজ থেকে কয়েক কোটি টাকা নেওয়া হয়েছে। যাচাই বাছাইয়ের এই কমিটি এক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার কাছ থেকে দেড় লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত নিয়েছে। আমরা পুনরায় যাচাই বাছাইয়ের দাবি জানাচ্ছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নন বলেন, যেহেতু এই যাচাই বাছাইয়ে কোটি কোটি টাকার বানিজ্য হয়েছে তাই এই যাচাই বাছাই বাতিলের দাবি জানাচ্ছি। সঠিক ভাবে যাচাই বাছাইয়ের জন্য আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমি কমিটির ৪ সদস্যকে ৫ লাখ টাকা দিয়েছি। এই ৫লক্ষ টাকা দেওয়ার পরেও আমার নামটি দ্বিধাবিভক্ত সিন্ধান্তর তালিকায় রাখা হয়েছে। আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। আমি ভারত থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত। আমার মতো এ ধরণের অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাকে দ্বিধাবিভক্ত সিন্ধান্তের তালিকায় রাখা হয়েছে। যদি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমাদেরকে কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত সিন্ধান্ত তালিকায় রাখা না হয় তাহলে আমরা আত্মহুতি দিবো।
এ বিষয়ের কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমানের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, নামঞ্জুর এবং দ্বিধাবিভক্ত সিন্ধান্তর তালিকায় নাম থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধারা আগামী ১এপ্রিল জামুকায় আপিল করতে পারবেন।
উল্লেখ্য: এ উপজেলায় ৬৮২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা গ্রহণ করছেন। এই ৬৮২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে থেকে ৩৩৬ জনের যাচাই বাচাই তালিকায় নাম আসে। এই ৩৩৬ বীর মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ২৬৩ জনের যাচাই বাচাই করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কমিটি কতর্ৃক ২৬জন নামঞ্জুর, ১১৮জন দ্বিধাবিভক্ত ও ১১৯জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহিত সিন্ধান্ত তালিকায় রাখা হয়। ৭৩ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাইয়ে অনুপস্থিত থাকায় কমিটি তাদের বিষয়ে কোন সিন্ধান্ত গ্রহণ করেনি।
৪ সদস্য বিশিষ্ট এই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে ছিলেন জামুকার প্রতিনিধি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ লুৎফর রহমান। সদস্য সচিব হিসেবে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার এস এম মাহফুজুর রহমান। স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রতিনিধি ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক সরদার ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা তৈয়াবুর রহমান সরদার।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।