ঢাকা জেলার পুলিশ সুপারের বাড়ির প্রধান ফটকে গত শুক্রবার বিকেলে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া পুলিশ সদস্য মেহেদী হাসান ছিলেন পরিবারের স্বপ্ন ও সম্পদ। তিনি মারা যাওয়ায় পুরো পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে গেছে। গতকাল শনিবার (৭ আগস্ট) সকালে মেহেদী হাসানের গ্রামের বাড়ি ঘাটাইল উপজেলার আনেহলা গ্রামে গেলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। ছেলের মৃত্যুর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার বাবা-মা ও ছোটভাই।
প্রতিবেশীরা কিছুতেই তাদের সান্ত্বনা দিতে পারছিলেন না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বিলাপের সুরে মা মরিয়ম বেগম বলছিলেন, ‘বাপ আমার সাথে শুক্রবার বিকালে ফোনে কত কথা কইল, খাওয়াদাওয়ার কথা কইল, শরীরের যত্ন নিবার কইল। তার আধা ঘণ্টা পরেই খবর আইল আমার পোলা নাই। এহন আমি ওরে ছাড়া কিবায় বাঁচমু। পোলাডা আমার স্বপ্ন-সম্বল দুটাই আছিল।’
মেহেদী হাসানের বাবা একজন কৃষক। পাশাপাশি গ্রামে পশু চিকিৎসা করে থাকেন। দুই ছেলের মধ্যে মেহেদী বড়। ছোট ছেলে মাসুদ রানা স্থানীয় খায়েরপাড়া শহীদ ছালাম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী। মেহেদীর বাবা আব্দুল হানিফ বলেন, ‘এর আগে সে মিলব্যারাক পুলিশ লাইন, আশুলিয়া পুলিশ ফাঁড়িতে কর্মরত ছিল। গত জুলাই মাসের শেষের দিকে এসপি স্যারের ওখানে যোগদান করেছে। ছেলের বিয়ে ঠিক করছিলাম। আগামী বছরের ৩ জানুয়ারি ওর চাকরির দুই বছর অবো। তখন অনুমতি নিয়া বউ তুইলা আনমু। আমার সব শখ খানখান অইয়া গেল।
শুনতাছি আত্মহত্যা করছে। এইডা হবার পারে না। আমার হাসিখুশি ছেলেডা এইভাবে মরতে পারে না। মেহেদীর ছোট ভাই মাসুদ রানা জানায়, ‘শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে মোবাইলে হোয়াটসঅ্যাপ দিয়ে ভিডিও কল দিয়ে বাবা-মা ও আমার সাথে কথা বলেছে। তখনও সে খুব হাসিখুশি ছিল। ফোন রাখার কয়েক মিনিটের মধ্যে কিভাবে এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটল তা বুঝতে পারছি না।’ মেহেদীর শেষ ফেসবুক স্ট্যাটাসের বিষয়টিও মানতে নারাজ মাসুদ।
মেহেদীর প্রতিবেশী সাবেক ইউপি সদস্য আমিনুল ইসলাম জানান, টানাটানির সংসারে মেহেদী ছিল তাদের একমাত্র সম্বল। মেহেদীকে কেন্দ্র করেই ছিল তাদের সংসারের সব পরিকল্পনা। তাকে হারিয়ে পরিবারটির সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। আনেহলা ইউপি চেয়ারম্যান তালুকদার শাহজাহান বলেন, ‘মেহেদী ছিল পরিবারের অন্যতম উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তাকে হারিয়ে পরিবারটি অসহায় হয়ে পড়েছে।
পরিবারটির প্রতি সরকারের সুদৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।’ গতকাল শনিবার দুপুরে ঢাকা থেকে মেহেদী হাসানের লাশ তার গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। এ সময় ঘাটাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম সরকার উপস্থিত ছিলেন। পুলিশ সদর দপ্তর ও জেলা পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে ৫৫ হাজার টাকা প্রাথমিক অনুদান দেওয়া হয়েছে বলে জানায় মেহেদী হাসানের পরিবার। পরে তার লাশ আছরের নামাজের পর পাড়াগ্রাম গোরস্তানে দাফন করা হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।