চাঁপাইনবাবগঞ্জে জমি ভাগ বাটোয়ারার জের ধরে দুই ছেলের বিরুদ্ধে মায়ের দাফন কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সমস্যার সমাধানের আশ্বাস দিলে মৃত্যুর ৯ ঘণ্টা পর রাতে দাফন করা হয়।

সোমবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সদর উপজেলার বারোঘরিয়া ইউনিয়ের জামাদার পাড়ার গুড়িপাড়া মহল্লায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৃত শাজাহানের স্ত্রী তারাফুল বেগম বার্ধক্যজনিত কারণে সোমবার দুপুর ১২টায় তিনি মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পর বাড়ির উঠানে লাশ রেখেই সম্পত্তির ভাগ-বাটোয়ারা নিয়ে সন্তানরা দ্বন্দ্বে লিপ্ত হন। সম্পত্তির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত লাশ দাফনেও বাধা দেন সাদিকুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম নামের দুই ছেলে।

স্থানীয়রা আরও জানান, শাহজাহান মোট ৯ শতক জমির মালিক ছিলেন। তিনি সম্পত্তি ভাগ করে না দেওয়ার আগেই তিনি মারা যান। পরে তার স্ত্রী তারাফুল মানবেতর জীবন যাপন করছিলেন। ছেলেরা তারাফুলের কোন খোঁজ রাখতেন না। ফলে একমাত্র মেয়ে শিরিনের বাড়িতে আশ্রয় নেন তারাফুল। একপর্যায়ে তিনি ৯ শতক জমির মধ্যে ৪ শতক জমি মেয়ের নামে লিখে দেন। ৯ শতক জমির সমান ভাগে ভাগ করার দাবিতে লাশ দাফন কাজে বাধা দেয় ছেলেরা। পরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদের উপস্থিতে শালিসি বৈঠকে বসে লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ছেলে সাদিকুল ও শফিকুল জানান, মা তারাফুল তাদের বাড়িতে ভালোই ছিলেন। তারা মায়ের দেখভাল করছিলেন। হঠাৎ সকালে তাদের মাকে জোর করে বোন শিরিন বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানে গিয়ে চিকিৎসার অভাবে তিনি মারা গেছেন।

তারা আরও জানান, দীর্ঘদিন ধরে তাদের মা ছোট বোন শিরিনের কাছে ছিলেন। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সে মায়ের কাছ থেকে সব সম্পত্তি নিজের নামে লিখে নিয়েছে।

অভিযুক্তদের বোন শিরিন বেগম বলেন, দীর্ঘদিন আগে বাবা মারা গেছেন তারপর থেকে মায়ের ভরণপোষণ আমি চালিয়েছি। মাকে কোনদিন আমার ভাইয়েরা দেখতে আসেনি। এমনি কোনদিন খোঁজ খবর নেয়নি। মা আমার বাড়িতেই থাকতেন। সে কারণে মা প্রথমে ৩ শতক ও চোখের অপারেশনের খরচের জন্য ১ শতক- মোট ৪ শতক জমি আমাকে লিখে দিয়েছিলেন। মা মারা যাওয়ায় জমির লোভে এসে তার ভাইয়েরা লাশ দাফনে বাধা দিয়েছে।

বারোঘরিয়া ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ফাইজুদ্দীন কালু বলেন, এ ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। এ ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই আমি ঘটনাস্থলে যাই। তাদের জমি-জমার বিষয়টির সমাধান করে দেবো বলে আশ্বস্ত করি। পরে তারা লাশ দাফন করতে রাজি হয়।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোজাফফর হোসেন জানান, স্থানীয়দের খবরের ভিত্তিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে জনপ্রতিনিধির সহায়তায় লাশ দাফন করা হয়।

 

কলমকথা/সাথী