মাজেদুর রহমান( মাজদার), পুঠিয়া প্রতিনিধি: শীত পঞ্জিকার হিসাব এখনো অনেক দূর। শীত শুরু হয় উত্তরাঞ্চল দিয়ে এবং তা বিদায় নেয় উত্তরাঞ্চল দিয়েই। হেমন্ত ঋুুর শুরুতেই রাতে উত্তরাঞ্চলে হালকা শীত অনুভূূত হয়। হেমন্তঋতুর শেষ হতে আর কিছুদিন বাঁকি রয়েছে। এরমধ্যে রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলায় দু’সপ্তাহ থেকেই রাতে শীত অনুভূত হতে শুরু করেছে।
এর ফলে উপজেলার খেজুরগাছের চেহারা বদলাতে শুরু করেছে। গ্রামে খেজুরের সুমিষ্ট রস ও সুস্বাদু গুড়ের আশায় খেজুর গাছের পরিবর্যায় নেমেছে এলাকার গাছিরা। ভালো দামের আশায় পুঠিয়ার গাছিরা আগাম খেজুরের রস থেকে গুড় তৈরি করতে অন্যান্য বছরের ন্যায় চলতি বছরেও আশ্চিনের পর থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা।
কাঁচি হাতে খেজুর গাছের আগা পরিস্কার করে রস নামানোর কাজ করছেন। সংসারে স্বচ্ছলতার আশায় দিন রাত তাদের এ নিরন্তর প্রচেষ্টা চলবে খেৎুর রস থাকা কালীনসময়। এ সময় পুঠিয়া উপজেলার অধিকাংশ মানুষ সুস্বাদু খেজুরের গুড় উৎপাদনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন।
কারণ এ সুস্বাদু গুড় গাছিদের শীকালীন মৌসুমি ব্যবসা। এ ব্যবসা চলে পুরো শীতকাল। পুঠিয়া উপজেল াকৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, উপজেলার ২৯০ হেক্টর জমিতে খেৎুর গাছ রয়েছে ২১ হাজার ৭৫০টি। এতে খেজুর গুড় উৎপাদন হয় তিন হাজার ২৪১ মেট্রিকটন। যার বাজার মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
চলতি বছরও খেজুর গাছের আগাম পরিচর্যা শুরু করেছেন এ অঞ্চলের গাছিরা। খেজুরের রস সংগ্রাহের জন্য বিশেষ প্রক্রিয়ায় গাছের উপরদিক কেটে ফেলতে হয়। কাটা অংশের নিচে বাঁশ বা গাছের খিল লাগানো হয়। এর মাধ্যমে ফোঁটা ফোঁটার রস গাছের খিল দিয়ে হাড়িতে পড়ে।
সারা রাত হাঁড়ির ভিতর রস পড়ে ভর্তি হয়। গাছিরা ভোরেগাছ থেকে হাঁড়ি নামান। এভাবেই রস আহরণের কাজ করেন গাছিরা। আহোরিত খেজুরের রস দিয়ে পাটালি বা খুরি ও লালি দুই ধরনের গুড় তৈরি করা হয়। পাটালি বা খুরি বাজারজাত করার জন্য তৈরি করা হয়।
আগাম খেজুরের গুড় তৈরি করতে পারলে বেশি লাভবান হওয়া যাবে বলে তাদের এ প্রচেষ্টা। দড়ি, কাঁচি হাতে খেজুর গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত বানেশ্বর ইউনিয়নের পালাশবাড়ি গ্রামের কৃষক মোকসেদ আলী বলেন, গত সপ্তাহ থেকে খেজুরের রস অল্প অল্প নামা শুরু করেছে। প্রথম পর্যায়ে বাজারে গুড়ের আমাদানি কম থাকে। তাই দামও বেশ ভালো পাওয়া যায়।
এয়াড়াও একাধিক কৃষক জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এ বছর খেজুরের গুড় তৈরি করেঅধিক লাভবান হওয়া যাবে। উপজেলার উপজেলা সদরের কৃষ্ণপুর, কাঁঠালবাড়িয়া, পালোপাড়া, গোপালহাটি এবং বানেশ্বর ইউনিয়নের, নওদাপাড়া, ভুবননগর, শাহাবাজপুর, ফতেপুর, পালাশবাড়ি, মাইপাড়া, বিড়ালদহ, শিবপুর, নামাজগ্রাম, নায়াপাড়া,
জিউপাড়া ইউনিয়নের ধোপাপাড়া, গাঁওপাড়া, বাঁশপুকুরিয়া, ভালুকগাছি ধোকড়াকুল, ইউনিয়নের তেলিপাড়া, নন্দনপুর, নওপাড়া, গোটিয়া শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের কার্তিকপাড়া, ভিক্ষণপুর, লেপপাড়া, ছাতারপাড়া, শুকপাড়া, পচামাড়িয়া, চন্দনমাড়িয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় খেুজরের গাছ পরিচর্যা শুরু হয়েছে।
এসব এলাকার গাছিরা তাদের তৈরি গুড় পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরহাট ও ঝলমলিয়া হাট ছাড়াও আশে পাশের হাটগুলোতে বিক্রি করা হয়। পুঠিয়া উপজেলার উৎপাদিত সুস্বাদু গুড় এলাকার চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলা শহরের মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। শীতকালে খেজুরের রস ও গুড় দিয়ে পায়েস, বিভিন্ন ধরনের শীতকালীন পিঠা তৈরি করা হয়।
এ বিষয়ে পুঠিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামসুননাহার ভুইয়া বলেন, খেজুর গাছ চাষ করতে বাড়তি কোন জমির প্রয়োজন হয়না। জমির আইলে অথবা বাড়ির অঙ্গিনায় এই গাছ গুলো হয়ে থাকে। উপজেলার সব এলাকাজুড়ে এই গাছগুলো হয়ে থাকে। এছাড়াও উপজেলার সব এলাকায় খেজুরের গুড় তৈরি করা হয়। গুড় তৈরিতে শত শত মানুষ কাজ করে থাকে। এর ফলে পুঠিয়ার অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে বলে এ কর্মকর্তা মন্তব্য করেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।