মিরু হাসান বাপ্পী,বগুড়া জেলা প্রতিনিধি: ঐতিহ্যবাহী জংশন স্টেশন বগুড়ার সান্তাহার, জনসাধারণের সেবার জন্য এই জংশন স্টেশনে আছে রেলওয়ে থানা। কিন্তু সেই রেলওয়ে থানাটিই আছে নানামুখী সংকটে।

থানায় দায়িত্বরত পুলিশদের দৈনন্দিন কার্যক্রম করতে হচ্ছে অনেকটাই কষ্টের মধ্যে। বিশেষ করে উদ্ধারকৃত মরদেহ সংরক্ষণের জন্য লাশঘরের বড়ই অভাব। নেই লাশবাহী গাড়ি এবং লাশ বহনের দায়িত্বে কোনো সরকারি ডোম। ফলে মরদেহটি অরক্ষিত অবস্থায় থাকায় বিড়ম্বনায় পড়তে হয় ভ্রমণকৃত যাত্রিসাধারণের। জানা যায়, সান্তাহার রেলওয়ে থানাটি পাকশি রেলওয়ে জেলার অন্তগর্ত।

এই রেলওয়ে থানার আওতাধীন ৩০টি স্টেশন, ৪টি জেলা, ১টি পুলিশফাঁড়ি ও ১টি ক্যাম্প আছে। উত্তরের জয়পুরহাট জেলার (পাঁচবিবি/ হিলি) থেকে দক্ষিণে নাটোর জেলার মালঞ্চি এবং পূর্বে বগুড়া জেলার সোনাতলা পর্যন্ত প্রায় ১৮৩.৩১ কি.মি. রেলপথের দায়িত্ব পালন করতে হয় এই থানায় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের।

বৃটিশ আমলের তৈরি এই জংশন স্টেশনে সম্প্রতি উন্নয়নের ছোঁয়া লাগলেও লাগেনি রেলওয়ে থানায়। মান্ধাতা আমলের স্থাপনাগুলোতেই খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে থানার কার্যক্রম। থানার ভেতরে নেই মহিলা হাজতখানা, ভালো টয়লেট। এছাড়া পুলিশ সদস্যদের জন্য আছে আবাসন সংকট এবং ব্যারাকে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের মধ্যে কষ্ট করে থাকতে হয় নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের। অপরদিকে এই রেলওয়ে থানার আওতায় কোথাও না কোথাও প্রায় প্রতিদিনই মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা ঘটছে। ঘটছে রেলদুর্ঘটনায় মৃত্যু ও আত্মহত্যার ঘটনাও। ঘটনাস্থল থেকে থানা হয়ে মর্গ পর্যন্ত রিক্যুইজিশন করার জন্য পুরনো একটি ভ্যানই পুলিশের শেষ ভরসা।

লাশ বহনের জন্য নেই নিজস্ব ভালো বাহন ও নিয়োজিত ডোম। সরকারি নিয়োগকৃত কোনো ডোম না থাকায় মরদেহ থাকছে অবহেলায়। আবার উদ্ধারকৃত ওই সকল মরদেহ সংরক্ষণের জন্য লাশঘর না থাকায় থানার পাশেই স্টেশন প্লাটফর্মে রাখা হয়। যার ফলে প্রচণ্ড গরম ও ঝড়-বৃষ্টিতে নষ্ট হয় আলামত। এছাড়া প্লাটফর্মে অরক্ষিত অবস্থায় লাশ রাখার কারণে অনেক সময় বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় স্টেশনে অপেক্ষমান যাত্রীদের। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের। স্টেশনে অপেক্ষমান এক যাত্রী বলেন, সান্তাহার থেকে প্রায় ট্রেনযোগে ঢাকা যাওয়া-আসা করি। মাঝে-মধ্যেই সান্তাহার রেলওয়ে থানার সামনে প্লাটফর্মের ওপরে রেলে কাটা লাশ দেখি ৷ যা দেখে কিছুটা বিব্রত হই। আরেক যাত্রী একই অভিযোগ করে বলেন, থানার পাশে রাখা লাশ থেকে রক্ত ও গন্ধ বের হয়। এতে করে ছোট বাচ্চারা ভয় পায়। ফলে প্লাটফর্মে দাঁড়ানো যায় না। এ বিষয়ে সান্তাহার রেলওয়ে থানার ওসি সাকিউল আযম বলেন, রেলসীমানা থেকে পুলিশ উদ্ধারকৃত যে লাশটি থানায় নিয়ে আসবে তার জন্য নেই লাশবাহী গাড়ি, নেই নিয়োজিত ডোম। বেসরকারিভাবে একজন ডোম কাজ করছে। তাকে দিয়ে সব কাজ করানো যায় না। তিনি আরও বলেন, থানায় লাশঘর না থাকার কারণে লাশ অরক্ষিত থাকে। ঝড়-বৃষ্টি এবং গরমের চাপে অনেক সময় লাশ বিকৃত হয়ে যায়। যার ফলে লাশের আলামত নষ্ট হয়ে যায়। এ জন্য থানাতে লাশবাহী গাড়ি, ডোম এবং লাশঘর প্রয়োজন। মামলা প্রক্রিয়ার কারণে লাশ ময়নাতদন্ত করতে হয়। এজন্য লাশ হেফাজতে রাখতে হয়। তাই সবার আগে একটি লাশঘর প্রয়োজন। এটি থাকলে লাশটি হেফাজতে রাখা যায়।