রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে টনসিল অপারেশনে মোস্তাকিম ( ৮) নামে এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় দুই চিকিৎসকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে রাজবাড়ীর ১ নম্বর আমলি আদালতে শিশুটির মা কাকলী খাতুন বাদি হয়ে এ মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার আসামিরা হলেন রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের নাক, কান ও গলা বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. তাপস চন্দ্র মণ্ডল; অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. ইকরামুল করিম উল্লাস ও রাজবাড়ী সদর হাসপাতাল সংলগ্ন ডিজিটাল ক্লিনিকের ম্যানেজার চরনারায়ণপুর এলাকার মো. আতাউর মণ্ডল।
মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ২৪ আগস্ট বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে কাকলী খাতুন তার ৮ বছর বয়সী ছেলের টনসিলের সমস্যা নিয়ে রাজবাড়ী মেডিকেল সেন্টারের নাক, কান ও গলা রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. তাপস মণ্ডলের কাছে যান। তিনি রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর অপারেশন করার পরামর্শ দেন এবং বেশ কিছু পরীক্ষা করাতে বলেন। এ সময় সদর হাসপাতাল সংলগ্ন ডিজিটাল ক্লিনিকের ম্যানেজার আতাউর মণ্ডল কাকলী খাতুনকে তার ক্লিনিকে নিয়ে যান এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার পাশাপাশি কম খরচে ওই ডাক্তারকে দিয়ে অপারেশন করিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। এ জন্য আতাউর মণ্ডল ওই শিশুর মায়ের কাছ থেকে অপারেশন খরচ বাবদ সাড়ে ৬ হাজার টাকাও নেন।
অভিযোগ রয়েছে, আতাউরের কথা মতো কাকলী তার ছেলেকে নিয়ে ২৮ আগস্ট রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে আসেন এবং জরুরি বিভাগ থেকে টিকিট নিয়ে বহির্বিভাগে ডা. তাপস মণ্ডলকে দেখান। ডা. তাপস রোগীর অপারেশনের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হতে বলেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগী পরদিন ২৯ আগস্ট হাসপাতালে ভর্তি হয়। ওইদিন বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে শিশু মোস্তাকিমের টনসিল আপারেশন করা হয়।
অপারেশনের আগে ডাক্তার রোগীর মাকে বলেন, ৩০-৩৫ মিনিটের মধ্যেই অপারেশন শেষ হবে এবং তার ছেলেকে বেডে দেওয়া হবে। এরপর ৩-৪ ঘণ্টা পার হয়ে গেলেও রোগীর জ্ঞান না ফেরায় ডাক্তাররা অপারেশন থিয়েটারে কালক্ষেপণ করতে থাকেন।
একপর্যায়ে রাত ৯টার দিকে রোগীকে অজ্ঞান অবস্থায় অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করা হয়। পরে তাকে ফরিদপুরে রেফার করা হয়। তাৎক্ষণিক রোগীর আত্মীয়-স্বজন রোগীকে নিয়ে প্রথমে ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে গেলে তারা রোগী গ্রহণ না করে ফেরত পাঠায়। এরপর ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানকার চিকিৎসকরা তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। এরপর অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেওয়ার পথে রাজবাড়ীর বসন্তপুর এলাকায় মোস্তাকিম মারা যায়।
রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এস এম এ হান্নান বলেন, ‘টনসিলের সমস্যা নিয়ে ভর্তি হওয়া শিশুটিকে ফরিদপুরে রেফার করা হয়েছিল। তবে শিশুটির মৃত্যুর খবর আমার জানা নেই। অপারেশনকালীন শিশুর ব্লাড সুগারের মাত্রা ৫০ এমএল ছিল বলে তিনি স্বীকার করেন। ’
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।