সরবরাহ বাড়ায় একদিনের ব্যবধানে দিনাজপুরের হিলিতে দেশি পেঁয়াজের দাম কমেছে। ভারতীয় পেঁয়াজ দেশে ঢুকার কারনেই দেশী পেঁয়াজের দাম কমছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একদিন আগে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছিল। গতকাল রোববার তা কমে ৩২ থেকে ৩৬ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা।
এদিকে চাহিদা বাড়ায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে পেঁয়াজের আমদানি। তবে দাম কমেনি। বন্দরে ২৮ থেকে ৩০ টাকা দামেই বিক্রি হচ্ছে আমদানিকৃত পেঁয়াজ, যা আগে ২১-২২ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ভারতীয় পেঁয়াজের দাম বাড়লেও দেশি পেঁয়াজে মার খাচ্ছেন চাষিরা। তারা বলছেন, ৩০ টাকা কেজির কম দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে তেমন কোন লাভ হবেনা।
হিলি বাজারে পেঁয়াজ কিনতে আসা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাতদিন আগেও দেশি পেঁয়াজ ২২ টাকা থেকে ২৪ টাকায় কিনেছিলাম। সপ্তাহের ব্যবধানে সেই পেঁয়াজ এখন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। একে তো সব জিনিসের দাম বেশি, তার মধ্যে হঠাৎ করে পেঁয়াজের দাম বাড়ায় খুব সমস্যার মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
পেঁয়াজ বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, মাঘের হঠাৎ বৃষ্টিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেশি পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাজারে। সপ্তাহের ব্যবধানে যে পেঁয়াজ ২০ টাকা থেকে ২৪ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, দাম বেড়ে তা এখন ৪০ টাকায় ওঠে। যদিও একদিনের ব্যবধানে আবারও ৩২ থেকে ৩৬ টাকায় নেমেছে।
তিনি বলেন, ব্যবসায়ীদের ধারণা, বর্তমানে ভারত থেকে সেভাবে আমদানি না হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের ওপর চাপ বেড়েছে। এতে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। আমদানি বাড়লে আমরা যেমন কম দামে কিনতে পারবো, তেমনি কম দামে বিক্রিও করতে পারবো। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি করছি ২৮ থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে।
পেঁয়াজ ব্যবসায়ী স্বপন মুন্সি বলেন, বাজারে দেশি পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও দাম কম থাকায় আমদানিকৃত পেঁয়াজের চাহিদা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানির ইমপোর্ট পারমিট (আইপি) প্রদান বন্ধ করে দেয় সরকার।
তারপরও বন্দর দিয়ে আগের আইপির মাধ্যমে সীমিত পরিসরে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রেখেছিলেন আমদানিকারকরা। কিন্তু বাড়তি দামে কিনে কম দামে বিক্রি করতে হয়। লোকশানের কারণে আমদানির পরিমাণ আরও কমিয়ে দেন। তবে সম্প্রতি মাঘের হঠাৎ বৃষ্টিতে দেশি পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সরবরাহ কমায় দাম বেড়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন বলেন, বন্দর দিয়ে পেঁয়াজের আমদানি আগের তুলনায় বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার বন্দর দিয়ে যেখানে মাত্র দুটি ট্রাকে ২৯ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল। শনিবার ১৪টি ট্রাকে ৪০৩ টন পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে।
এর আগে রাজধানীর বাজারগুলোতে (১৮ ফেব্রুয়ারি ২২) এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে বেড়ে যায় প্রায় ১৫ টাকা। বিক্রেতারা বলছেন বাজারে সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছিল। একইসাথে দাম বেড়েছে তেল, আটাসহ ব্রয়লার মুরগিরও।
করোনা শুরুর পর থেকে নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা যেন কমছে না। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে নাভিশ্বাস ভোক্তাদের।শুক্রবার রাজধানীর বাজারে দেখা গেছে, পেঁয়াজের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি। সপ্তাহের ব্যবধানে দেশী পেঁয়াজের দাম কেজিতে বেড়েছে প্রায় ১৫ টাকা। বেড়েছে আমদানি করা পেঁয়াজের দামও।
এছাড়া চাল(মোটা), পামওয়েল (লুজ, সুপার), সয়াবিন (লুজ, বোতল), জিরা, পিয়াজ(দেশী,আম), মুরগী ব্রয়লার, গরু মাংস, চিনি, ডিম এর মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। চাল(মাঝারী), রসুন (দেশী) নতুন/পুরাতন, হলুদ(আম) এর মূল্য হ্রাস পেয়েছে। অন্যান্য পণ্যের মূল্য অপরিবর্তীত রয়েছে।
গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও, আজ রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। বিক্রেতারা বলছেন, বৃষ্টির কারণে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই কৃষক ফসল উত্তোলন করে ফেলায় সাময়িকভাবে সংকট তৈরি হওয়ার কারণে দাম বাড়ে। তবে, এখন কমছে।
ভোক্তাদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ক্যাব বলছে, বাজারের নিয়মিত তদারকি না হলে এবং পেঁয়াজ উৎপাদন বাড়ানো না গেলে সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে না।
বাজারে দাম বেড়েছে ভোজ্যতেল, আটা এবং মুরগিরও। প্যাকেটজাত আটা কেজিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪২ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে।
রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়েছে বলে দাবি আড়তদারদের। এ বিষয়ে আড়তদাররা বলেন, বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা বেশি আসায় পেঁয়াজের দাম কিছুটা বেশি হলেও ভবিষ্যতে আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সম্ভাবনা যেন সত্যি হতে চলেছে।
উল্লেখ্য, পাবনা মেহেরপুরসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবারে প্রচুর পরিমাণে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে সেসব এলাকার ক্ষেত থেকে পেঁয়াজ ওঠার ফলে দেশের বাজারে দেশীয় পেঁয়াজের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। সেইসঙ্গে দেশীয় পেঁয়াজের দাম অনেকটা কমে ১৮-১৯ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু উৎপাদন হলেও দাম বাড়তি হওয়ায় স্থানীয় বাজারগুলোতেও দাম বাড়তে শুরু করেছে।
এ কারণে দেশের বিভিন্ন মোকামগুলোতে আগে যেখানে ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা ছিল, এখন সেসব মোকামে দেশীয় পেঁয়াজের চাহিদা বেড়েছে। আর চাহিদা বাড়ার কারণে দাম বাড়ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
এতে দেশের বাজারে আমদানি হওয়া ভারতীয় পেঁয়াজের চাহিদা আগের তুলনায় অনেকাংশে কমে এসেছিল। এর পরেও হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে পেঁয়াজের আমদানি অব্যাহত রয়েছে। দেশের বাজারে চাহিদার তুলনায় পণ্যটির সরবরাহ বাড়ার কারণে দাম কম হওয়ার পর আবার দাম বাড়লো।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।