সরকারি-বেসরকারি ব্যাংক থেকে বেনামি ঋণ নেওয়ায় গভীর সংকট তৈরি হয়েছে ব্যাংক খাতে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে বন্ধকি জমির ভুয়া ও জাল দলিল। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর এক পরিচালক অন্য পরিচালকদের সঙ্গে যোগসাজশ করেও ঋণ নিয়ে থাকেন এবং পরস্পরকে ঋণ দিয়ে থাকেন। এসব কারণে একদিকে খেলাপির পরিমাণ ও সংখ্যা বেড়েছে, অন্যদিকে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা ঋণ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। পাশাপাশি বাড়ছে বিদেশে হুন্ডিতে টাকা পাচার। দেশের ব্যাংক খাতে বর্তমানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। আর দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ পর্যন্ত পাচার হয়েছে ৮ লাখ কোটি টাকা।
ভুয়া ও বেনামি ঋণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। গত বছরের ৫ ডিসেম্বর এক বিবৃতিতে ভুয়া ও বেনামি ঋণ জালিয়াতি প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে অবিলম্বে ব্যক্তিমালিকানাধীন খাতে ‘প্রকৃত মালিকানার স্বচ্ছতা’ আইন প্রণয়নের সুপারিশ করে সংস্থাটি। এ ছাড়া পাচার হওয়া অর্থের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে দেশে-বিদেশে সকল প্রকারের লেনদেনের তথ্য আদান-প্রদান সহায়ক কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডে অবিলম্বে যুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, বিভিন্ন নামে তৈরি করা ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে অন্যের জমি রেজিস্ট্রেশন করা হয়। ব্যাংকে সেই জমির দলিল বন্ধক রেখে নেওয়া হয় ঋণ। এমনকি ব্যাংকে ঋণের জামিনদার (গ্যারান্টার) হিসেবে যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র জমা দেওয়া হয় তা-ও ভুয়া। ভুয়া দলিলের ফাঁদ পেতে সংঘবদ্ধ চক্র পরিকল্পিতভাবে ব্যাংকের বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাৎ করছে। ব্যাংকে জমা দেওয়া দলিল ও অন্যান্য নথি একপর্যায়ে ভুয়া প্রমাণ হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও দেখা গেছে, জমা দেওয়া দলিলপত্রে যে জমির আকার ও বিবরণ রয়েছে বাস্তবে সেই জমি অস্তিত্বহীন এবং ঋণ গ্রহণকারী কোম্পানির ঠিকানায় গিয়ে কোম্পানি দূরের কথা, কোম্পানি বা ব্যক্তির নামে কোনো সাইনবোর্ড পর্যন্ত পাওয়া যায় না।
সরকারি জমির ভুয়া বা জাল দলিল তৈরি করে ঋণ নেওয়ার প্রমাণও পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এভাবে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে আত্মসাতের অভিযোগে গত বছরের ১৫ এপ্রিল দুজনকে গ্রেফতারও করেছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র্যাব)। কখনো ভুয়া দাতা, কখনো আবার জমির মালিককে না জানিয়েই জাল দলিল করেছেন তারা। ওই দলিল জামানত রেখেই ব্যাংক থেকে বিপুল অঙ্কের ঋণ নেওয়া হয়েছে। এসব জমি জামানত হিসেবে নিয়ে বিপাকে পড়ছে ব্যাংক। মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বিদেশে পাচার করছে জালিয়াত চক্র। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর পরিচালকরাও একজন আরেকজনের যোগসাজশে ঋণ নিচ্ছেন। নিজেদের ব্যাংক থেকে ঋণ নেওয়ার সুযোগ না থাকায় তারা এ পথ অবলম্বন করে হাজার হাজার কোটি টাকা বের করে নিচ্ছেন। সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক বছরে সুইস ব্যাংকে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ জমা করেছেন বাংলাদেশিরা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।