নিরেন দাস, জয়পুরহাট প্রতিনিধি: আলু উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম জেলা হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাটে চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করা হয়েছে। আলু চাষ সফল করতে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানায়, নিবিড় বার্ষিক ফসল উৎপাদন কর্মসূচির আওতায় চলতি ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় ৩৮ হাজার ৩৬৫ হেক্টর জমিতে আলু লাগানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। রোপা আমন ধান কাটার পরেই কৃষকরা এখন জমিতে আলুর বীজ রোপণের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছেন। বিশেষ করে আগাম জাতের রোপা আমন ধান কাটার পরেই ইতোমধ্যে আগাম জাতের আলু লাগানো শুরু হয়েছে জেলার আক্কেলপুর উপজেলার জামালগঞ্জ এলাকায়। জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের আলু বীজ বোপনের জন্য মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে বলে জানায় কৃষি বিভাগ।
উপজেলা ভিত্তিক আলু লাগানোর লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রয়েছে জয়পুরহাট সদর উপজেলায় ছয় হাজার ৭৬০ হেক্টর, পাঁচবিবি উপজেলায় সাত হাজার ১৫৫ হেক্টর, ক্ষেতলাল উপজেলায় আট হাজার ১০৫ হেক্টর, কালাই উপজেলায় ১০ হাজার ৬১০ হেক্টর ও আক্কেলপুর উপজেলায় পাঁচ হাজার ৭৩৫ হেক্টর জমি। এতে আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯ লাখ ২০ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য জেলায় পাঠানো সম্ভব হয়ে থাকে। এবার হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ধরা হয়েছে ২৪ টন আলু।
কৃষি বিভাগ আরো জানায়, আলু চাষ সফল করতে জেলায় সারের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। নভেম্বর মাসের মজুদ সারের পরিমাণ ছিল ইঊরিয়া তিন হাজার ৭৫৭ টন, টিএসপি দু’হাজার ৩৬৬ টন, এমওপি তিন হাজার ৩৫০ টন ও ডিএপি দু’হাজার ১৭৫ টন।
এর সাথে ডিসেম্বর মাসের চাহিদার মধ্যে রয়েছে ইঊরিয়া পাঁচ হাজার ৩৪৫ টন, টিএসপি এক হাজার ৩১৮ টন, এমওপি এক হাজার ৯৩১ টন ও ডিএপি এক হাজার ৭৮৮ টন সার। কৃষি বান্ধব সরকারের বিভিন্ন ধরনের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণের ফলে রাসায়নিক সারের কোনো প্রকার সঙ্কট নেই জয়পুরহাটে।
বিএডিসি’র বীজ বিপণন বগুড়া ও জয়পুরহাট অঞ্চলের উপ-পরিচালক মো: জাকির হোসেন বলেন, উন্নত জাতের আলুবীজ ডিলার পর্যায়ে প্রতিকেজি প্রকার ভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকা এবং কৃষকপর্যায়ে প্রতিকেজি প্রকারভেদে সাড়ে ৩০ টাকা থেকে সাড়ে ৪২ টাকা পর্যন্ত বিক্রির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডিলারদের চাহিদা অনুযায়ী এবার বীজ সরবরাহ করা হচ্ছে এবং বাজারে পর্যাপ্ত বিএডিসি আলুবীজ সরবরাহ রয়েছে। ভালো মানের কারণে বিএডিসির উচ্চ ফলনশীল এ্যাস্টোরিক জাতের আলুবীজের চাহিদা একটু বেশি বলে জানান, উপ-পরিচালক মো: জাকির হোসেন।
জেলায় আলু চাষ সফল করতে কৃষক পর্যায়ে প্রশিক্ষণসহ উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক মনিটরিং ও কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করছেন বলে জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো: শফিকুল ইসলাম। জয়পুরহাটের আলু উন্নত মানের হওয়ায় গত বছর দেশের গন্ডি পেরিয়ে ৯টি দেশে রফতানি করা হয়েছিল। প্রাচীন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত জয়পুরহাট জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অধিক পরিমাণ জমিতে আলুর চাষ হয়ে থাকে।
গত বছর আলু উৎপাদন হয়েছিল ৮ লাখ ১৫ হাজার টন। ফলন ভালো হওয়ায় জেলায় গ্যানোলা, মিউজিকা, ডায়মন্ড, এস্টোরিকস, কার্ডিনাল, ও রোজেটা জাতের আলু বেশি চাষ করে থাকেন কৃষকরা। জেলার ১৫ টি কোল্ড স্টোরেজে প্রায় দেড় লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় বলে জানিয়েছেন জেলা কৃষি বিভাগ।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।