রপ্তানিকারকদের বন্ড সুবিধার আওতায় আনা কাপড়সহ অন্যান্য কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। গতকাল বুধবার রপ্তানিকারকদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় ইস্যুটি ফের আলোচনায় এসেছে। অভিযোগ রয়েছে, দেশে বন্ড জালিয়াতির মাধ্যমে খোলাবাজারে বিক্রি হওয়া কাপড়ের একটি বড় অংশেরই বিকিকিনি হয় রাজধানীর ইসলামপুরের বিভিন্ন মার্কেটে। এর বাইরে অন্যান্য এলাকার নাম থাকলেও বন্ডের চোরাই কাপড়ের সঙ্গে পুরনো ঢাকার ইসলামপুর নামটি ব্যাপকভাবে জড়িয়ে গেছে।
গতকাল বাজেট আলোচনায় অংশ নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক ও বিকেএমইএর সিনিয়র সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম শুল্ক ও ভ্যাট বিষয়ে বিভিন্ন হয়রানি ও কষ্টের কথা তুলে ধরেন। এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘আমাদেরও অনেক কষ্ট আছে। ইসলামপুর গেলে আমাদের কষ্ট বেড়ে যায়।’
তবে পোশাক শিল্প মালিকদের দুই সংগঠনের পক্ষ থেকেই বলা হয়, নিয়মিত রপ্তানিকারকরা এর সঙ্গে জড়িত নন। বরং এর সঙ্গে একটি চক্র রয়েছে। এই চক্রকে ধরতে তারা এনবিআরকে সহযোগিতা করারও প্রস্তাব দেন। ড. রুবানা হক বলেন, ‘আমাদের (নিয়মিত রপ্তানিকারকদের) চোর বানালে খারাপ লাগে। এটি বন্ধ করতে হবে। একটি চক্র এই অনিয়ম করে। তাদের ধরতে হবে। দয়া করে ঢালাওভাবে বলবেন না।’ মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘এই চক্রকে চিহ্নিত করে তারা যাতে বাংলাদেশে ব্যবসা কিংবা কাজ না করতে পারে, সে ব্যবস্থা করুন। ইসলামপুর ইস্যুতে আমরা একসঙ্গে কাজ করব।’ এ সময় বিজিএমইএর পক্ষ থেকে এনবিআরকে জানানো হয়, এসব অনিয়ম রোধে ইউডি (কাঁচামালের প্রাপ্যতার ঘোষণা) ব্যবস্থাপনা অনলাইন করা হয়েছে। এখন থেকে শুল্ক বিভাগ যেকোনো সময় চাইলে ইউডি সংশোধনের বিষয়টি জানতে পারবে।
সমস্যা সমাধানে পুরো প্রক্রিয়ায় অটোমেশনে গুরুত্ব দিয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ বিষয়ে এনবিআর অনেক এগিয়েছে। পুরোদমে বাস্তবায়ন হলে হয়রানি কমবে এবং রাজস্ব প্রদান সহজ হবে। বিশ্বাস ও আস্থার (ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে) জায়গা বাড়বে।’
গতকালের আলোচনায় বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ছাড়াও বস্ত্রশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন।
বিজিএমইএ পোশাক রপ্তানির উৎসে কর বিদ্যমান ০.৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগের বছরের মতো ০.২৫ শতাংশ করা এবং তা চূড়ান্ত করদায় হিসেবে গণ্য করার দাবি জানায়। একই সঙ্গে বছর বছর এই করহার পরিবর্তন না করে আগামী পাঁচ বছরের জন্য তা স্থির রাখার দাবিও জানায়। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট মওকুফ ও ভ্যাট রিটার্ন জমা দেওয়ার শর্ত বাতিল করা, নগদ সহায়তার ওপর কর বাতিল করা, এই খাতের জন্য করপোরেট করহার আগামী পাঁচ বছরের জন্য বলবৎ রাখা, এইচএস কোড (পণ্য পরিচিতি নম্বর) সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করা, শিল্পের বিভিন্ন যন্ত্রের শুল্ককর প্রত্যাহার, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ খালাস প্রক্রিয়া সহজ করা, কারখানা সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে, একাধিকবার অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র আমদানির ক্ষেত্রে বিদ্যমান শর্ত সহজ করা, রপ্তানীকৃত পণ্য ফেরত এলে তা ফের রপ্তানিযোগ্য হিসেবে গণ্য করে সহজে খালাস দেওয়াসহ ১৬টি প্রস্তাব তুলে ধরা হয়।
এ ছাড়া বিটিএমএর পক্ষ থেকে সব ধরনের সুতার ওপর একই হারে ভ্যাট আরোপ করা এবং কাপড় আমদানিতে ট্যারিফ ভ্যালু আন্তর্জাতিক বাজারের দরের ভিত্তিতে ঠিক করা এবং কেজির পরিবর্তে মিটারে হিসাব করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সূত্রঃ কালের কন্ঠ
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।