ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক ফোনালাপের অডিও ফাঁস হওয়ায় গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক এইচ এম আনিসুজ্জামানকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
ওই বিভাগের ডিন ড. মো. মোজাহার আলীকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওই বিভাগের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মোরাদ হোসেন স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই আদেশে বলা হয়েছে, কৃষি বিভাগের ডিন ড. মো. মোজাহার আলীকে বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০১ এর ২৫(৩) ধারা মোতাবেক কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যানের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হলো। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান এইচ এম আনিসুজ্জামানের স্থলাভিষিক্ত হবেন। এ আদেশ পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
ছাত্রীর সঙ্গে অনৈতিক ফোনালাপের অডিও ফাঁস হওয়া প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. মোরাদ হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তদন্ত রিপোর্টের প্রেক্ষিতে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
গত ২৩ জানুয়ারি কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান এইচ এম আনিসুজ্জামানের বিরুদ্ধে রেজিস্ট্রার দপ্তরে কৃষি বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নানা অনিয়ম, দুর্নীতি ও এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন। শিক্ষার্থীদের এসব অভিযোগের মধ্যে রয়েছে—পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, পরীক্ষার নম্বরপত্র গড়মিল করা, উত্তরপত্রে নিজের ইচ্ছামাফিক নম্বর বসিয়ে দেওয়া, শিক্ষাসফরের অর্থনৈতিক অনুদান ও তার হিসাব নিকাশে অস্বচ্ছতা, ছাত্র-ছাত্রীদের ইচ্ছাকৃতভাবে পরীক্ষায় ফেল করানোর হুমকি দেওয়া।
এ বিষয়ে প্রক্টর ড. রাজিউর রহমান বলেন, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে নৈতিক স্খলন, অর্থ আত্মসাৎসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে। আমি শুনেছি এসব অভিযোগ তদন্তের স্বার্থে কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক এইচ এম আনিসুজ্জামানকে বিভাগীয় চেয়ারম্যানের পদ থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি এক ছাত্রীর সঙ্গে এইচ এম আনিসুজ্জামানের আপত্তিকর ফোনালাপের অডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
এ ব্যাপারে আনিসুজ্জামান অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো সম্পূর্ণ বানোয়াট। ভাইরাল হওয়া অডিওর কণ্ঠ তার না দাবি করে তিনি বলেন, এটা সম্পূর্ণ শত্রুতামূলক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) সাবেক উপাচার্য থেকে শুরু করে বেশ কয়েকজন শিক্ষকের নামে যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। প্রতিটি অভিযোগ তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হলেও কোনো কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনই আলোর মুখ দেখেনি। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থাও নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য ও বর্তমান বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে তার গৃহকর্মী যৌন হয়রানি ও শ্লীলতাহানির অভিযোগ আনেন। ২০১৮ সালের ২২ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য প্রফেসার ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এক নারীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগের ভিডিও ভাইরাল হয়। ২০১৭ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেন একই বিভাগের এক ছাত্রী। ২০১৯ সালে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান মো. আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে ওই বিভাগের দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।