ঠাকুরগাঁও বুখারি শরিফের শেষ সবক গ্রহণ করলেন কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা:-

 

ঠাকুরগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া ইব্রাহীমিয়া দারুসালাম কওমি মাদ্রাসা যা গোয়ালপাড়া মাদ্রাসা নামে পরিচিত আজ রবিবার সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত আলোচনা ও দুয়ার মাধ্যমে এই মাদ্রাসার দারুল হাদিস জামাতের ছাত্রদের শেষ বুখারী শরীফের সবক আনুষ্ঠানিক ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
ঠাকুরগাঁও সহ বাংলাদেশের বড় বড় কওমি মাদরাসাগুলিতে প্রতিবছর বুখারি শরিফের শেষ সবক উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন করা হয়৷ খতমে বুখারি অনুষ্ঠান নামে পরিচিত হলেও আদতে তা কওমি মাদরাসার সমাবর্তন অনুষ্ঠান। কওমি মাদরাসার অন্যান্য ঐতিহ্যের মতো এ অনুষ্ঠানও এখন ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে ৷ যেসকল শিক্ষার্থী দাওরায়ে হাদিস সম্পন্ন করেন, তাঁদের উপলক্ষ করেই অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন৷

দাওরায়ে হাদিস জামাতে সিহাহ সিত্তাহসহ আরও বেশকিছু হাদিসের কিতাব পড়ানো হয়৷ বুখারি শরিফের দরস শুরু হয়ে যায় বছরের প্রথমদিন থেকেই৷ অন্যান্য কিতাবের পাঠদান ক্লাসেই সম্পন্ন করা হয়। কেবল বুখারি শরিফ কিতাবটিই আনুষ্ঠানিকভাবে খতম করা হয়৷ পূর্বসূরি ওলামাদের থেকে এই আমলের সমর্থন পাওয়া যায়৷ অনেক আলেমই মনে করেন, হাদিসের কিতাবসমুহের মধ্যে নানাদিক থেকে সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য কিতাব হচ্ছে বুখারি শরিফ।

বুখারি শরিফ খতমের দিনে অনেক মাদরাসায় দাওরায়ে হাদিস সমাপনকারী শিক্ষার্থীদের সম্মানসূচক পাগড়ি প্রদান করা হয়। এবং তাঁদেরকে আনুষ্ঠানিকভাবে আলেম ঘোষণা করা হয়৷ এই দিনটি নিয়ে মাদরাসা-অঙ্গনে ভীষণ উৎসাহ ও আবেগ লক্ষ করা যায়। এই দিনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে ছাত্রদের দীর্ঘ মেহনতের ফলাফল ও স্মৃতি। একদিকে পড়ালেখার ইতিপ্রান্তে পৌঁছে যাবার আনন্দ, অপরদিকে মাদরাসার প্রতিটি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ধুলিকণা বিয়োগের বেদনা। মায়ের কোলের মতো মাদরাসার অভ্যন্তরে থেকে, প্রতিটি ক্লাসরুম, আঙিনা, পড়ালেখার কিতাবপত্র, মাদরাসার বোর্ডিংয়ের খাবার–সবকিছুর সঙ্গেই এক গভীর মমতার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। বিদায়ের দিন শেষ মূহুর্তে সবকিছু পেছন থেকে আবেগে আক্রান্ত করে ফেলে। এই ক্লাসরুমে আর কোনোদিন বসা হবে না। যেসকল আসাতিজায়ে কেরামের কাছে এতকাল পড়াশোনা করেছি, আজকের পর থেকে তাঁদের দরসে আর বসা হবে না।

বুখারি শরিফ খতমের মূল অনুষ্ঠানের কার্যক্রমগুলি হলো, শিক্ষকদের পক্ষ থেকে বিদায়ী দিকনির্দেশনা, ফারেগিন ছাত্রদের পাগড়ি প্রদান, বুখাড়ী শরিফের সর্বশেষ হাদিসের দরস, এবং দুয়া-মোনাজাত।

প্রতি বছরের সমাবর্তনকে স্মরণীয় করে রাখতে ফারেগিন শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেন৷ বার্ষিক স্মরণসংখ্যা ও ডায়েরি প্রকাশ ইত্যাদি অন্যতম৷ এই সমাবর্তন শুধু ফারেগিনদের জন্যই নয়, সকল স্তরের শিক্ষার্থী, আসাতিজায়ে কিরাম, মহল্লাবাসী এবং শিক্ষার্থীদের অভিভাবক–সকলের জন্যই একটি বিশেষ আনন্দের উৎসব। এর সঙ্গে প্রতি বছরই পুরনোদের পাশে নতুনদের স্মৃতি এসে দাঁড়ায়৷ তৈরি হয় ভালোবাসার এক অভূতপূর্ব মেলবন্ধন।