প্রায় দেড় বছর পর রোববার সকাল থেকে রাজধানীসহ সারাদেশের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে সশরীরে পাঠদান শুরু হয়েছে।  দেশব্যাপী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন উচ্ছ্বাস রয়েছে তেমনি স্বাস্থ্যবিধি ও সংক্রমণ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন অনেক অভিভাবক। 

গত ৫ সেপ্টেম্বর শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এদিকে দীর্ঘদিন পর ক্লাসে বসার আনন্দে মাতোয়ারা ছাত্রছাত্রীরা। এক সপ্তাহ ধরে তারা স্কুলব্যাগ, ড্রেস, জুতা ইত্যাদি কিনে স্কুলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের স্বাগত জানাতে বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও প্রস্তুত।

বিশেষ করে শহরাঞ্চলের স্কুল-কলেজ অনেকটাই নতুন রূপে সাজানো হয়েছে। এছাড়া বিশেষ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তবু অভিভাবকরা কিছুটা অস্বস্তি আর উদ্বেগে আছেন।

এদিকে, স্কুলগুলোর ফটকে শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মেপে প্রবেশ করানো হচ্ছে। তাদেরকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। ফটকে স্কুলের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে শিক্ষকদেরও অবস্থান করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়ার আয়োজন করা হয়েছে।

এদিকে বিদ্যালয় খোলার পর কীভাবে চলবে, সে সংক্রান্ত ১৬ দফা নির্দেশনা গত শুক্রবার প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর।

নির্দেশনাগুলো হলো : দৈনিক সমাবেশ বন্ধ থাকবে। শিক্ষার্থীরা শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে নিরাপদ দূরত্ব রেখে নিজেদের আসনে বসে হালকা শারীরিক কসরত (পিটি) করবে। কেউ প্রয়োজন মনে করলে পিটি করা থেকে বিরত থাকতে পারবে। শিক্ষার্থীরা জিগজ্যাগ তথা ‘জেড’ বিন্যাসে বসবে। প্রতি বেঞ্চে একজনের বেশি বসবে না। শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে একই শ্রেণিকে একাধিক দলে ভাগ করে একাধিক কক্ষে ও একাধিক শিক্ষকের সহায়তায় পাঠদান চালাতে হবে।

পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিকের শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শ্রেণি কার্যক্রম সপ্তাহের ৬ দিন চলবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত অন্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে এক দিন আসবে। একই দিনে একই সময়ে সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির শিক্ষার্থীকে বিদ্যালয়ে আসার ব্যবস্থা রেখে টিফিন বিরতি ছাড়া শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। সর্বোচ্চ ৩ ঘণ্টার মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করতে হবে।

নির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, শ্রেণিকক্ষ ও শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনায় রেখে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে একাধিক শিফট কিংবা সপ্তাহের একেক দিন একেক শ্রেণির বা সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির পাঠদানের ব্যবস্থা রেখে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ হালনাগাদ পাঠ্যসূচি অনুসরণ করবে। তবে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা সম্ভব হলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে পাঠদান পরিকল্পনা নেয়া যাবে। শ্রেণি কার্যক্রমে দলীয় কাজ ও দুজনের কাজের মতো সম্ভাব্য স্বাস্থ্যঝুঁকি সৃষ্টিকারী শিখন কাজ আপাতত বাদ রাখতে হবে। শিক্ষকরা মাস্ক পরেই ক্লাস নেবেন। শিক্ষার্থীদেরও মাস্ক পরা নিশ্চিত করবেন তারা।

এছাড়া ক্লাস শেষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সারিবদ্ধভাবে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয় ত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। সব শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের একত্রে শ্রেণিকক্ষ ত্যাগ করতে দেয়া যাবে না। শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে একের পর এক কক্ষের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় ত্যাগ করবে। নির্দেশনা অনুযায়ী একাধিক শিফটে ক্লাস চললে আগের শিফট ও পরের শিফটের ক্লাস শুরুর মাঝে অন্তত ৩০ মিনিটের বিরতি রাখতে হবে। শিক্ষার্থীরা যার যার পানির বোতল নিয়ে বিদ্যালয়ে আসবে।

শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের পাশাপাশি ঘরে বসে শিখি, বাংলাদেশ বেতার ও সংসদ টেলিভিশনে পাঠদান কার্যক্রম, গুগলমিটের মাধ্যমে অনলাইন পাঠদান কার্যক্রম ক্লাসরুটিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অব্যাহত রাখতে হবে। যে শিক্ষার্থী নিজে বা পরিবারের সদস্যদের কোভিড লক্ষণ বা আক্রান্তের কারণে বিদ্যালয়ে আসতে পারবে না, তারা ঘরে বসে শিখি এবং অনলাইন পাঠদানে অংশ নেবে। একই কারণে ওই শিক্ষার্থীকে ক্লাসে অনুপস্থিত গণ্য করা যাবে না।

এতে আরও বলা হয়, কোনো এলাকায় কোভিড সংক্রমণের হার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশিত বিপদসীমা পার হলে উপজেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করে সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর কার্যক্রম সাময়িককভাবে বন্ধ ঘোষণা করবে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর জারি করা নির্দেশিকা প্রযোজ্য ক্ষেত্রে প্রতিপালন করতে হবে।

প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ক্লাস শুরু : প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টা থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হবে। ক্লাসে প্রথম ১০ মিনিট কোভিড-১৯ সচেতনতা বিষয়ে অবহিত করবেন শ্রেণিশিক্ষক। এরপর ৯টা ৪০ মিনিটে পাঠদান শুরু হবে। পাঁচ মিনিট পরপর পর্যায়ক্রমে দিনে তিনটি বিষয়ের শ্রেণি কার্যক্রম চলবে। সর্বোচ্চ দুটি শ্রেণির পাঠদান অনুষ্ঠিত হবে প্রতিদিন। শ্রেণি কার্যক্রম চলবে প্রতিদিন তিন ঘণ্টা। দিনের শ্রেণি কার্যক্রম শেষ হবে প্রতিদিন দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে।

প্রথম দিন পঞ্চম শ্রেণির গণিত ক্লাস ৯টা ৪০ মিনিটে শুরু হবে। তার আগে সকাল সাড়ে ৯টা থেকে ১০ মিনিট পর্যন্ত কোভিড-১৯ সচেতনতা বিষয়ে অবহিত করবেন শ্রেণিশিক্ষক। গণিত ক্লাস ১০টা ২৫ মিনিটে শেষ হবে। পাঁচ মিনিট পর পঞ্চম শ্রেণির বাংলা ক্লাস সকাল সাড়ে ১০টায় শুরু হয়ে চলবে সকাল সোয়া ১১টা পর্যন্ত। পাঁচ মিনিট পর দিনের শেষ ক্লাস ১১টা ২০ মিনিটে শুরু হয়ে চলবে ১২টা ৫ মিনিট পর্যন্ত। এ দিন তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে আসতে হবে।