সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সংখ্যা দিনকে দিন কমছে। অবস্থা আশঙ্কা জনক বলে মনে করছেন শিক্ষকরা।
তারা বলছেন, এ প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে শহরতলী ও গ্রামের স্কুলগুলোতে।
এর কারণ প্রসঙ্গে প্রাথমিকের একাধিক শিক্ষক নেতা জানান, করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকলেও মাদ্রাসা খোলা থাকা, প্রাথমিকে নিচের শ্রেণিতে ধর্মীয় পাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীদের মাদ্রাসা গমনের প্রবণতা, পরিকল্পনা ছাড়া ও কোনোরূপ অনুমতি ব্যতিরেকে নুরাণী মাদ্রাসা গড়ে তোলা, অভিভাবকদের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে শিশুদের সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিমুখ করছে মাদ্রাসাগুলো।
ফেনী শহরতলীর শহরতলীর বিজয় সিংহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, ২০২০ সালে প্রাক-প্রাথমিকে প্রায় ৫০ জন ভর্তি হলেও এ বছর এখন পর্যন্ত ২২ জন ভর্তি হয়েছে। প্রথম শ্রেণিতে দুই বছর আগে ৫৬ জন ভর্তি হলেও এ বছর ভর্তি হয়েছে ৩২ জন। এর মধ্যে অল্প কিছু নতুন ভর্তি ব্যতিত বেশিরভাগই উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী। একইভাবে প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ভর্তি কমেছে বলে জানিয়েছেন সিলোনীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু তালেব, রামপুর হাজী শামছুল হক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক আশেক এলাহী।
আশেক এলাহী জানান, কেবলমাত্র ফেনী পৌর ১৭ নম্বর ওয়ার্ডেই ১১টি নুরানী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
সদর উপজেলার ফরহাদনগরে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে এখনো কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয়নি। এমন তথ্য জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয় পরিচালনা পর্যদের এক ব্যক্তি।
সম্প্রতি ফেনীতে আসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব গোলাম মো. হাসিবুল আলম। ফেনী পিটিআইতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শিক্ষকদের সঙ্গে প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে নির্দেশনা দেন তিনি। এ সময় শিক্ষকরা উপরোক্ত সমস্যার কথাগুলো সেখানে তুলে ধরেন।
প্রসঙ্গক্রমে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নূরুল ইসলাম জানান, চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রাথমিকে শিক্ষার্থী ভর্তি কার্যক্রম চলবে। তাই শিক্ষার্থী বেড়েছে বা কমেছে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে উক্ত সময়ের পর।
প্রাথমিকে পাঠদান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ব্লেন্ডেড রুটিন অনুসরণ করে পাঠদান চলছে। করোনা মহাহারিতে সাপ্তাহে একদিন শ্রেণি পাঠদান, সংসদ টিভিতে পাঠদান, রেডিও ও গুগল মিটে পাঠদান চলছে। তাছাড়া শিক্ষকরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্কুলে ভর্তি কার্যক্রম গতিশীল রাখার চেষ্টা করছে।
তৌহিদুল আলম নামে এক শিক্ষার্থী ২০১৯ সালে প্রাথমিকে ভর্তি হলেও এখন পৌর ১৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে। তার বাবা শামছুল আলম শাকিল জানান, দীর্ঘদিন স্কুল বন্ধ ছিল। খোলার পর সাপ্তাহে একদিন করে ক্লাস হচ্ছিল। পরীক্ষা ও পড়ার চাপ না থাকায় সে পড়ালেখায় অমনোযোগী হচ্ছিল। তার সমবয়সী যারা মাদ্রাসায় ভর্তি হয়েছে, সবার শ্রেণি কার্যক্রম স্বাভাবিক। এতে সে পড়ালেখায় পিছিয়ে পড়েছে। তাই স্কুল বাদ দিয়ে মাদ্রাসায় ভর্তি করেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন স্কুল প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, করোনার অতিসংক্রমণকালে সব স্কুল বন্ধ করে কেবল হিফজ মাদ্রাসা খোলা রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। এ সুযোগে অন্যান্য মাদ্রাসাগুলো খোলা রেখে অভিভাবকদের প্রভাবিত করেছে।
উল্লেখ্য জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, ২০২১ সালে ফেনীতে ৫৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৯৩১ বিদ্যালয়ে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৮০৮জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।