শেখ নাসির উদ্দিন, খুলনা প্রতিনিধি: দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে খুলনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। শিক্ষার্থীদের প্রাণোচ্ছ্বল হাসি আর তাদের পদচারণায় মুখরিত বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। সবারই চোখে-মুখে আজ খুশির ঝিলিক। স্কুল প্রাঙ্গণ আবারও সেই চিরচেনা রুপে। যেখানে শিক্ষার্থীরা আবার স্বশরীরে ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন আর শিক্ষকরাও পাঠদান করছেন। এ নিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সবার চোখে-মুখেই ছিল খুশির ঝিলিক। তবে এ আনন্দের সঙ্গে অভিভাবকদের আছে উদ্বেগও। তবে সব মিলিয়ে আনন্দে আপ্লুত শিক্ষার্থীরা। যে কারণে রোববার সময়ের অনেকে আগেই স্কুলে চলে এসেছে তারা। খুলনা মেট্রো পুলিশ লাইন্স হাই স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী সাথী বলেন, স্কুল খোলার আগের দিনগুলো খুব বোরিং ছিল। আর বাসায় বসে থেকে কিছুটা আলসে ভাব ধরে যায়। আজকে স্কুল খোলার পর থেকে অনুভূতিটা একটু অন্যরকম। স্কুলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সবার সঙ্গে এক মিলন মেলা।
আমরা চেষ্টা করবো স্বাস্থ্যবিধি মেনে লেখাপড়ার। বঙ্গবন্ধু প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামসুন্নাহার বলেন, এতোদিন অনলাইনে ক্লাস করেছি। এখন স্কুলে এসে ক্লাস করবো। এখন সহপাঠী এবং স্যার-ম্যাডামদের সাথে কথা বলতে পারবো, ক্লাস করতে পারবো। খুবই ভালো লাগছে। খুলনা মেট্রো পুলিশ লাইন্স হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খোলা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে এসেছে খুবই ভালো লাগছে। করোনার কারণে দীর্ঘ দেড় বছর স্কুল বন্ধ ছিল। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুল খুলে দেওয়ার জন্য। শিক্ষার্থীদের আগমনে স্কুল আজ প্রাণ ফিরে পেয়েছে। উল্লেখ্য, করোনার কারণে বাংলাদেশে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এরপর ৫৪৩ দিন পর চালু হয়েছে সশরীরে ক্লাস। খুলনা জেলা শিক্ষা অফিসার খন্দকার রুহুল আমীন জানান, নির্দেশনা মেনে জেলার সকল সরকারি-বেসরকারি স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা খুলে দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে ৪২০টি স্কুল, ১২৫টি মাদরাসা ও ৭৩টি কলেজ রয়েছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সূত্রে জানায়, খুলনা জেলায় ১ হাজার ১৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৪২০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে মহানগরে ১৫৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ১শ’টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বাকিগুলো জেলার নয়টি উপজেলায় অবস্থিত। খুলনা সরকারি মহিলা কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক বিকাশ রায় জানান, বন্দিদশা ছেড়ে আবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরেছে শিক্ষার্থীরা। এটা আসলে কতটা আনন্দের তা ভাষায় ব্যক্ত করে বোঝানো যাবে না। মাদরাসাতুল ইত্তিহাদের প্রিন্সিপাল জহির আমিন বলেন, অনেকদিন পর বাচ্চাদের কোলাহলে মুখরিত হয়ে গেল মাদরাসা আঙিনা। ঘণ্টাধ্বনির শব্দ পেল শিক্ষার্থীরা। তাদের পদচারণায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোববার প্রথম দিনে খুলনা জেলা স্কুল, সরকারি করোনেশন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়, খুলনা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা সরকারি ল্যাবরেটরি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি ইকবাল নগর বালিকা বিদ্যালয়, সেন্ট জোসেফস উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, কেডিএ খানজাহান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি মহসিন উচ্চ বিদ্যালয়, খুলনা বিদ্যুৎ কেন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেক বেশিই ছিল।
এদিন অধিকাংশ স্কুলের সামনেই দীর্ঘ যানজট তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা গেছে অভিভাবকদেরও। খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সাদিকুর রহমান খান বলেন, জেলা শিক্ষা পরিবার ও জেলা প্রশাসন স্কুল খোলার আগে প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে বসেছিল। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, বিদ্যালয়ের প্রস্তুতি এবং শিক্ষার্থীদের নির্দেশনা নিয়ে ওসব বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। আশা করছি সরকারি যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা প্রতিপালনের মধ্য দিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম আগামী দিনে চলমান রাখা যাবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।