আশা সকালে ফোন দিয়ে বলেছিল আমি যেন চারটার মধ্যে হাদিসপার্কে তার সাথে দেখা করি। এখন বাজে সাড়ে চারটা। যতটা সম্ভব দ্রুত হাটতেছি।মানিব্যাগে একটি টাকাও নেই। জাদুঘরে রাখার দরকার ছিল এমন একটি পয়সা আমার মানিব্যাগে ছিল। ১৯৭৪সালের এক পয়সা। সেটাও চারদিন আগে হারিয়েফেলেছি।

তাই আর সেই খালি মানিব্যাগের বুঝা বইতে ইচ্ছে করেনি। বাসায় রেখে এসেছি। . আমার বাসা থেকে হাদিস পার্কে রিক্সা করে আসতেও পঁচিশ মিনিট লাগে। আমার হেটে আসতে সময় লেগেছে পৌনে এক ঘন্টা। পার্কের সামনে গিয়ে আশাকে মিসকল দিয়েছি। অবশ্য মিসকলের পঁয়সাটাই অবশিষ্ট আছে। আশা ভিতর থেকে হেটে এসে আরেকটি টিকিট কিনল। দুজনেই ভিতরে ঢুকে পার্কের পূর্ব পাশের দিকের একটি বেঞ্চে বসে পড়লাম। . আমি জানি আমার বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ আছে।
গত চারদিন ধরে ফোন দেয়ার পর আজ সকালে ফোন রিসিভ করেছি। সেটাও রিসিভ হতনা। সকালে ঘুম ঘুম চোখে বুঝতে পারিনি কে ফোন দিয়েছে। রিসিভ করার সাথে সাথেই আশামনির একটাই কথা, “বিকাল চারটায় হাদিস পার্কে অপেক্ষা করব।” বলেই ফোনের লাইন কেটে দিয়েছে। আশাও ভাল করে জানে আমি আসব। গত সপ্তাহে আমার হাতে পঞ্চাশ টাকা ধরিয়ে দিয়ে বলেছিল “এই ঘোড়ার মত লম্বা লম্বা চুল যেন কাটা হয়”।পনেরো দিন ধরে এলাকার ছোট ভাইরা আবদার করেছিল তাদের যেন একটা টেনিস বল আর দুইটা কসটেপ কিনে দেই। আমিও আশার টাকা দিয়ে বল আর কসটেপ কিনে দিয়েছি। ক্রিকেট খেলায় মেতে উঠবে ছোট্ট ছেলের দল।.
আশা আমার হাতে একটি খাম ধরিয়ে দিয়ে বলল, – তোমার সাথে রাগে একদম কথা বলতে ইচ্ছে করছেনা। এটা বাসায় গিয়ে খুলবে, খবরদার রাস্তায়ও খুলবেনা। – তুমি কি চলে যাবে? – হ্যাঁ, আর নিশ্চয় হেটে এসেছো। এই ধর একশত টাকা।
এই নিয়ে দুই হাজার তিনশত পঞ্চাশ টাকা হল। চাকরী পেয়ে সব টাকা পরিশোধ করবে। মন চাইলে ফোন দিও, আমি অপেক্ষা করব,বলেই আশা হনহন করে বেরিয়ে গেল। আমার উপর তার অনেক বেশী অভিমান। কিন্তু আশা জানেনা গত সপ্তাহে দেখা করে যে কথাগুলো বলেছিল আমার হৃদয়টা টুকরো টুকরো হয়ে গিয়েছে। ভাঙ্গা মন নিয়ে পথ চলতেওতো অনেক কষ্ট। (মেয়েটা আমাকে অনেক বেশিই ভালবাসতো,কিন্তু কখনো তাকে একটুকুও বুঝতে চেষ্টা করিনি।আমার জীবনে একজনকেই ভাবতাম, সে হলো আমার মায়াবতী কিন্তু সেও ১১ বছরের সম্পর্ক নষ্ট করে দিয়ে চলে গেলো সারাজীবনের জন্যই অন্যের ঘরে) . আমি জানি আশা যে খামটি দিয়ে গেল খামের ভিতর একটি বিয়ের কার্ড আছে। আশার বিয়ের কার্ড দিতেই আশা আজ দেখা করতে বলেছে। গত সপ্তাহে এই পার্কে বসেই নিচের দিকে তাকিয়ে মৃদু স্বরে আশা বলেছিল কথাগুলো… ” বহু বছরের পরিচয় তোমার আর আমার।
জীবনের অনেকটা সময়তো তোমার পথ চলতে সাহায্য করেছি।অনেকতো বড় হয়েছো, এবার একটু একা একা পথ চলো। আমাকে তো কখনোই বুঝলেনা।অনেক অপেক্ষা করেছি তোমার জন্য। বাড়ি থেকে আমার বিয়ে ঠিক করেছে। ছেলে সরকারি চাকরি করে। বিয়ের পর আমাকেও সেখানে নিয়ে যাবে। ওখানে চলে গেলে এখনকার মত তো শাসন করতে পারবনা।
তাই বুঝে শুনেই চলো। তোমাকে ছেড়ে থাকতে আমারো অনেক কষ্ট হবে। কিন্তু মেয়ে হয়ে জন্মেছি, পরের ঘরেতো যেতেই হবে। যেখানেই যাই তোমাকে ভুলবনা। ” কথাগুলো শেষ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, -কি হল তুমি কিছু বলবানা? – কি আর বলব? এটাতো খুশির কথা। ছেলে সরকারি জব করে, বাহিরে থাকে, ভাল ছেলের সাথে তোমার বিয়ে হবে আর আমি খুশি হবনা? তুমি অবশ্যই সুখী হবে।
– নিজের কথা বললেনা? আমি চলে গেলে কিভাবে চলবে? – আমার কথা ভাবতে হবেনা। এতদিনতো শাসন করে করে এটা ওটা করতে বলতে। এখন থেকে নিজেই করার চেষ্টা করব। আচ্ছা যাই তাহলে আমি। আর এই নেও পঞ্চাশ টাকা, মাথার চুল ঘোড়ার মত যেন আর বড় না দেখি। আর চাকরি পেলে সব টাকা পরিশোধ করে দিবে।আর এখন থেকে সারারাত জেগে থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ঘুমানোর অভ্যাসটা চেন্জ করো।আমিতো তোমায় কোনদিনই ঠিক করতে পারলামনা।
আর হ্যা যেদিন একটা ভাল চাকরি পাবে, পারলে সেদিন আমাকে অব্যশই জানাবে। ভয় নাই তোমাকে টাকা ফেরত দিতে হবেনা।সারাজীবন ধরে তোমার এই একটা দিনের অপেক্ষা করেছিলামতো আমি, তাই মন চাইলে জানাইও,,, আমি গেলাম তাহলে,নিজের খেয়াল রেখো। সেদিন আশা যাওয়ার সাথে সাথেই আমার হৃদয়টা ভেঙ্গে গিয়েছিল। আজ বিয়ের কার্ডই ধরিয়ে দিল।তারপর বলে দিল বাসায় গিয়ে খুলতে হবে। বাইরে বের হয়ে রিক্সা নিলাম। একদম হাটতে ইচ্ছে করছেনা।আশা অনেক টাকা দিয়েছে আমাকে।
চাকরী পেলে পরিশোধ করে দেব। আশা যদি স্বামীর সাথে বাহিরে চলে যায় তাহলে তার টাকাগুলো দিব কিকরে তার কাছে জানতে হবে। দেখতে দেখতে ৭টা বছর কাটিয়ে দিলাম আশার সাথে। ওর সাথে পরিচয়টা হয়েছিলো ওদের বাড়িতে, ওর বড় বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানে। তারপর থেকে আমাদের পথচলাটা শুরু। প্রথম দিকে ঐ আমাকে অপরিচিত নং থেকে মাঝে মাঝে ফোন করতো।
তারপর থেকে শুরু নতুন পথযাত্রা।সত্যকথা বলতে ওকে প্রথমদিকে আমি পাত্তা দিতাম না।আমি অন্য একটা মেয়েকে ভালবাসতাম।আশাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আমি,অনেক।আমাকে পাবেনা জানার পর থেকে আমার সাথে আশা সব যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় ২-৩ বছর।মাস দুই হয়ে গেল আমার মায়াবতী আমাকে ছেড়ে চলে গেছে,আমার কষ্টের কথা জানতে পেরে আশা আবার যোগাযোগ করে, যেন আমি কোন কারনেই কষ্ট না পাই।
পাগলিটা আমাকে সত্যিই অনেক ভালবেসেছিলো, বিনিময়ে তাকে আমি চোখের পানি ছাড়া কিছুই দিতে পারিনি। আজ যাবার বেলায় শুধু একটা কথাই বলে গেল,,,তুমি নিজেও কিছু পেলেনা, আর আমাকেও পেতে দিলেনা।
তরুণ লেখক;
লিটন রায়
মণিরামপুর, যশোর
Seen by Nahid Hassan at 12:43 AM