রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।এ সময় পাল্টাপাল্টি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে উভয় পক্ষ।আর ঘটনার তিনদিন পর উভয় পক্ষের অভিযোগ এজাহারভুক্ত করেছে পুলিশ।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়,রোববার বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।পরে চিকিৎসায় অবহেলা ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলায় জড়িদের গ্রেপ্তারসহ নয় দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে মানববন্ধন ও মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে তারা।
দাবিগুলোর হলো-
১. শাহরিয়ারের মৃতদেহের পাশে অবস্থানকালে তার সহপাঠীদের ওপর নৃশংস হামলা হত্যাচেষ্টা এবং শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয় এবং আনসারদের অতিদ্রুত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং তাদের প্রত্যেককেই তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনতে হবে।
২. রামেকের পরিচালকের অসংলগ্ন আচরণ ও প্রত্যক্ষ মদদে বর্বরোচিত হামলার ঘটনাটি ঘটে। এই পরিচালকের অপসারণ করতে হবে।
৩. রামেকের অব্যবস্থাপনা ও জরুরি মুহূর্তে কর্মালিটিজের নামে সাধারণ মানুষের হয়রানি, চাঁদাবাজি এবং ক্লিনিকগুলোর সঙ্গে যোগসাজশ বন্ধ করতে হবে।
৪. রামেকে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। ডাক্তারদের দোষ ওয়ার্ড বয়দের ওপর, ওয়ার্ড বয়দের দোষ ডাক্তারদের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি আর চলবে না।
৫. এমপি বাদশার বেশামাল, অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে। অসংলগ্ন কথাবার্তার জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে।
৬. ইন্টার্ন ডাক্তারদের স্বেচ্ছাচারিতা, রোগী এবং রোগীর অভিভাবকদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ, অভিযোগ জানাতে গেলে অভিভাবকদের ওপর অস্ত্রোপাচার সামগ্রী দিয়ে আক্রমণের বদোভ্যাস পরিহার করতে হবে। সর্বোপরি মানবিক ও আন্তরিক হতে হবে।
৭. জরুরি বিভাগে সিনিয়র ডাক্তারদের উপস্থিতিতে জরুরি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।ডাক্তারদের দায়িত্ব চলাকালীন নার্স/ওয়ার্ডবয় দিয়ে প্রক্সি দেওয়ানো চলবে না।
৮. আইসিইউ ব্যবস্থা সহজ করতে হবে।ভিসি এবং প্রক্টর স্যারের সিগনেচারের নামে টালবাহানা করে যে কালক্ষেপণ করা হলো তা দ্বিতীয় কারও সঙ্গে করা হবে না- এই নিশ্চয়তা দিতে হবে।
৯. অনতিবিলম্বে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে।
রামেকের ডাক্তার-নার্সরা মনগড়া, বানোয়াট, কাল্পনিক, অসত্য যে ঘটনা সাজিয়েছে তার চিত্র প্রকাশ করে সবাইকে প্রকৃত সত্য ঘটনা জানার সুযোগ করে দিতে হবে।
একই সময় হাসপাতালের জরুরী বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে ইন্টার্ন চিকিৎসকরাও।এ সময় তারা হাসপাতালে ভাঙচুর ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের মারধরে জড়িত বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের গ্রেপ্তার, হাসপাতালে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত ও নিহত রাবি ছাত্র শাহরিয়ারের মৃত্যু রহস্য উৎঘাটনের দাবি জানান তারা।এ সব দাবি মানা না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে ঘোষণা দেয় ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান হোসেন।
এদিকে, হাসপাতালে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনার তিনদিন পর হাসপাতাল ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পৃথক দুইটি অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করেছে পুলিশ।শনিবার রাতে রাজপাড়া থানায় মামলা দুইটি রেকর্ড করা হয়।
রাজপাড়া থানার ওসি এএসএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘‘দুই পক্ষের অভিযোগ এজাহার হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। অভিযোগ তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’’
অপরদিকে,শনিবার দুপুর থেকে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের তিনদিনের কর্মবিরতিতে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগিরা।তাদের হাসপাতালে ফেরানোর চেষ্টা চলছে বলে জানিয়ে ঘটনার সময় পুলিশের অবহেলার অভিযোগ তুলেন হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানি।
তিনি বলেন, ‘‘ঘটনার সময় আমি পুলিশের সঙ্গে একাধিবার যোগোযোগ করেছি।কিন্তু তাদের কাছ থেকে যে সহযোগিতা পাওয়ার কথা তা পায়নি। বিশেষ করে অবরুদ্ধ চিকিৎসকদের উদ্ধারে পুলিশ এগিয়ে যায়নি।’’
উল্লেখ্য,গত বুধবার রাত আটটার দিকে হলের তৃতীয় তলার বারান্দা থেকে পড়ে যান মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র শাহরিয়ার।পরে হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এর পর চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ তুলে হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় রাবি শিক্ষার্থীরা। একপর্যায়ে ইন্টার্ন চিকিৎসক ও রাবি শিক্ষার্থীরা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।