জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসাইনের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুন্নের অভিযোগ ওঠেছে।বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সনাতনধর্মালম্বী শিক্ষার্থীকে ধর্ম নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। তবে অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আকতার হোসেইন।
এঘটনায় শুক্রবার (২ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসাইনের কাছে অভিযোগপত্র দিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ। অভিযোগপত্রে সংগঠনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্তর স্বাক্ষর রয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, গত ২৩ জানুয়ারি সরস্বতী পূজার আমন্ত্রণ জানাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের কাছে যান সনাতন ধার্মালম্বী শিক্ষার্থীরা। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগরে ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জয় শর্মা ও তার সতীর্থদের সঙ্গে অহেতুক চড়াও হন এবং ধর্ম নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। এতে হিন্দু ধর্মালম্বী শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হন।
অভিযোগ পত্রে আরও বলা হয়, ছাত্রলীগ নেতা এসএম আকতার হোসাইনের সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষপ্রসূত উক্তি ছাত্রলীগের ভাবমূর্তিকে ক্ষুন্ন করার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিরুদ্বচারণ করেছেন। একই সঙ্গে ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে যাতে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করে সেজন্য জয় শর্মাকে নানানভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানান তারা।
এ বিষয়ে জানতে ভুক্তভোগী জয় শর্মার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা বিভাগের পক্ষ থেকে অন্যান্য সহপাঠীরাসহ আকতার ভাইকে পূজার দাওয়াত কার্ড দিতে গিয়েছিলাম। তখন কিছু বুঝে ওঠার আগেই অকথ্য ভাষায় গালি দেন এবং ধর্ম তুলে বাজে মন্তব্য করেন। পরে আমরা তাৎক্ষণিক বিষয়টি সহকারী প্রক্টর মাহি স্যার ও নিউটন স্যারকে জানিয়েছি। তারা বিষয়টি নিয়ে একদিন বসবেন বলে জানিয়েছেন।’
তবে অভিযোগের বিষয় অস্বীকার করেছেন শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হোসেইন। তিনি বলেন, ‘এটা যে ভূয়া ও বানোয়াট তা তারা (হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ) ইতোমধ্যে জানতে পেরেছে। আর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমরা পূজার সময় নিরাপত্তার জন্য কাজ করেছি। আমরা সবার কার্ড নিয়েছি, সবার সাথে কথা বলেছি। কারোর সাথে কোনো মনোমালিন্যও হয়নি। সনাতন ধর্মী অনেক শিক্ষার্থীও আমাদের সাথে ছাত্রলীগ করে। এরকম হলে তো তারা আমাদের সাথে ছাত্রলীগই করতো না।’
এবিষয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘আমরা ঘটনা জানার পর ওবায়দুল কাদের সাহেব ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে ই-মেইলে অভিযোগপত্রটি দিয়েছিলাম। এর মধ্যে ওবায়দুল কাদের সাহেবের অভিযোগপত্রটি ভাইরাল হয়। এরপর থেকে দুইদিনে ধিরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জয় শর্মাকে এপ্রোচ করছিল অভিযোগটা তুলে নিতে। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরও তাকে বলেছে একটা সুরাহা করতে আগামীকাল বসার জন্য। এদিকে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নির্মল চ্যাটার্জি আমাকে ফোন করে জানিয়েছেন সবাইকে নিয়ে বসে আলোচনা করবে। এখন কি হয় সেটা দেখে আমরা পরবর্তী ব্যবস্থা নিবো।’
বসাবসির বিষয়টা নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মোস্তফা কামাল বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কারও সাথে কথা হয়নি। সহকারী প্রক্টর নিউটন হাওলাদার বিষয়টি দেখছেন।’ এবিষয়ে সহকারী প্রক্টর নিউটন হাওলাদারকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাকে একজন জানিয়েছে কাল সবাইকে নিয়ে বসবে।’ এ বিষয়ে জানতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেনকে একাধিকবার মুঠোফোনে ফোন দেওয়া হলেও যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।