এস আহমেদ ফাহিম, নোবিপ্রবিঃ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আনিকা বিনতে ইউসুফের আত্মহত্যায় প্ররোচনাকারী ও এই ঘটনায় অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
রবিবার(১২ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ সমাবেশে এই দাবি জানায় শিক্ষার্থীরা।বিক্ষোভ সমাবেশে আনিকার সহপাঠী ইংরেজি বিভাগের ১২ ব্যাচের শিক্ষার্থী মিসবাহ উদ্দিন জিসান,১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী মো.নাঈম উদ্দিন, আনিকার ছোট বোন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অবনী বিনতে ইউসুফসহ অন্যান্যরা বক্তব্য রাখেন।
বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, স্বামীর শারীরিক-মানসিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে যে মেধাবী শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করলো তার মৃত্যু নিছক আত্মহত্যা নয়। আমাদের চারপাশে নারীর প্রতি ভয়াবহ নির্যাতনের প্রতিচ্ছবি৷ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন মেধাবী শিক্ষার্থী, যার অপার সুযোগ-সম্ভাবনা বিকশিত হওয়ার সুযোগ ছিলো, তার আগেই কেন আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হলো তা গভীরভাবে বিবেচনা করা জরুরি।
বক্তারা আরোও বলেন,প্রবাসী স্বামীর মানসিক নির্যাতনের মাত্রা কতটা ভয়াবহ হলে এই আত্মহননের সিদ্ধান্ত নিতে হলো! আবার স্বামী প্রবাসে থাকায় কোন সামাজিক ও আইনগত প্রতিকার পাওয়ার সম্ভাবনা না দেখে একজন শিক্ষার্থীকে যখন আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হয় তখন আমাদের আইনী প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা দৃশ্যমান হয়৷ ফলে অপরাধী দেশে কিংবা দেশের বাইরে যেখানেই থাকুক তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে না পারলে কার্যত অসংখ্য নারীর অসহায় আত্মহননের পথ বন্ধ হবে না।
সমাবেশে আনিকার আত্মহত্যায় প্ররোচনাকরী ফারহিন হামিদ ওহীকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতার ও দেশে এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা এবং দেশে অবস্থানকারী অন্যান্য সহযোগীদের দ্রুত গ্রেফতারেরও দাবি জানানো হয়।
একই সাথে আনিকার স্বামী ফারদিন আহমেদ ওহি যাতে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত কোনো দেশে স্থায়ী নাগরিকত্ব না পায় তারজন্য বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের হাই কমিশনে নোবিপ্রবি প্রশাসনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, প্রবাসী স্বামী ফারদিন আহমেদ ওহির পরকীয়া, নির্যাতন ও শ্বশুরবাড়ির অসহযোগিতা সইতে না পেরে গত ২৫ এপ্রিল বিষপান করে আত্মহত্যা করে আনিকা।এ ঘটনায় গত ৩০ এপ্রিল আনিকার বাবা মো.ছায়েফ উল্ল্যাহ্ নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ১নং আমলী আদালতে আত্মহত্যা প্ররোচনার মামলা করেছেন।মামলায় স্বামী ফারদিন আহমেদ ওহি(৩১) কে ১নং আসামি, শ্বশুর আকতার হামিদ(৬৭) কে ২ নং আসামি ও শ্বাশুড়ি নূর জাহান বেগমকে ৩ নং আসামী করা হয়েছে।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়,নিহত আনিকা বিনতে ইউসুফ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী বিভাগে অনার্সে অধ্যয়নরত অবস্থায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে অভিযুক্ত ফারদিন আহমেদ ওহির সাথে পরিচয় হয়। এরপর প্রেমের সম্পর্কে জড়ালে পারিবারিক সিদ্ধান্তে ২০২২ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হয় দুজনের। বিবাহের কিছুদিন পর পুনরায় মাল্টায়(বিদেশ) চলে যায় ফারদিন। বিদেশ যাওয়ার পর আনিকা তার স্বামীর ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামের আইডিতে বিভিন্ন মেয়ের সাথে অন্তরঙ্গ অবস্থায় ছবি এবং নেশা জাতীয় দ্রব্য গ্রহণের ছবি দেখ পায়।
এজাহার সূত্রে আরো জানা যায়, আনিকা তার স্বামী ওহিকে বিষয়গুলো জানালে আনিকার উপর ক্ষিপ্ত ও উত্তেজিত হয়ে যায় সে। স্বামী দেশে আসার পরেও সারাদিন বিভিন্ন মেয়েদের সাথে দীর্ঘ আলাপচারিতায় ব্যস্ত থাকতে দেখেন আনিকা। এমন কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করলে আনিকা ফের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
এজাহারে জানা যায়, ঘটনার দিন একটি মেয়ে তার ফেসবুক আইডি থেকে থেকে ম্যাসেঞ্জারে আনিকাকে তার স্বামীর অশালীন বার্তার কিছু স্কিনশর্ট পাঠায়। স্কিনশর্ট গুলোতে দেখা যায় যে,অই মেয়েকে বিভিন্ন যৌন উত্তেজক অশালীন বার্তা পাঠায় আনিকার স্বামী ওহি। পরবর্তীতে ঘটনার দিন সকালে স্ক্রিনশট গুলো স্বামীকে পাঠালে আনিকার সাথে ফের চরম দুর্ব্যবহার ও অকথ্যভাষায় গালিগালাজ করে ফারদিন আহমেদ ওহি।এমন আচরণের পর শশুর-শাশুড়িকে জানালে উলটো আনিকাকেই দোষারোপ করা হয় বলে জানা যায়। পরবর্তীতে আনিকা তার স্বামীর অন্যায় ও অনৈতিক আচরণ সইতে না পেরে রাগে ক্ষোভে বিষ পানে আত্মহত্যা করেন।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।