কুবি প্রতিনিধি:
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) উপাচার্যের বক্তব্যকে ‘বিকৃত করে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের’ অভিযোগে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন কেন্দ্রীয় অনুমোদনপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু পরিষদ, কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপ।
এই সময় তারা ‘বিতর্কিত’ সংবাদ পরিবেশনকারী সংবাদকর্মীর শাস্তি, ক্ষমা চাওয়া এবং দুই দিনেও যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ায় ঐ সংবাদকর্মীর সাথে যুক্ত সাংবাদিক সংগঠনটির নিবন্ধন বাতিলের আহ্বান জানান।
বুধবার (২ আগস্ট) সকাল ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ রাসেল চত্বরে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সহকারী অধ্যাপক মো. জাহিদ হাসানের সঞ্চালনায় এই সম্মিলিত মানববন্ধন করেন তারা।
মানববন্ধনে কুবি অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি ও রেজিস্ট্রার দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, ‘উপাচার্য স্যারের নেতৃত্বে যখন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণায় এগিয়ে যাচ্ছে, গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে, সেই সময়ে যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে উপাচার্য স্যারকে হেয় করতে চেয়েছে। তাদের প্রতি তীব্র নিন্দা জানাই। যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করেছে তাদের সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল করতে হবে এবং তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের বহিষ্কার করতে হবে।’
মানববন্ধনে ৩য় শ্রেণির কর্মচারী পরিষদের সভাপতি দীপক চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য স্যার আসার পর প্রশাসনের সকল পর্যায় থেকে দুর্নীতি মুক্ত করেছেন। পেছনে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়টিকে এগিয়ে নিয়ে আন্তর্জাতিক মানে উন্নিত করেছেন। আজকে যারা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে পেছনে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছে তাদের বিচারের দাবিতে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে এই মানবন্ধনে বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাথে সম্মতি পোষণ করছি।’
এ সময় তৃতীয় শ্রেণীর কর্মচারী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. মহসীন বলেন, ‘আমাদের কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক উপাচার্য স্যারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করেছে এটার জন্য আমরা কর্মচারী পরিষদ তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। উনি আসার পর থেকেই দূর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করে যাচ্ছেন। এরপরও উনার বিরুদ্ধে যারা হলুদ সাংবাদিকতা করেছে তাদের দ্রুত তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হোক। অতিবিলম্বে তাদের নিবন্ধন বাতিল এবং বহিষ্কার করার পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
এই মানবন্ধনে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই গ্রুপ একসাথে অংশগ্রহন করেন। এই সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা ম. রকিবুল হাসান রকি বলেন, ‘উপাচার্য স্যারের বিরুদ্ধে মিথ্যা, ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশনের জেরে,বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাথে একাত্মতা পোষণ করছি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। ক্যাম্পাসের সব সাংবাদিক খারাপ নন। এই শোকের মাসে দেশ বিরোধী শক্তি কয়েকজন সাংবাদিকের মাধ্যমে তাদের দেশ বিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নেমেছে। ভিসি স্যার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন,তারা আমাদের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে ভিসি স্যারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। অনতিবিলম্বে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে অন্যথায় সংগঠনের নিবন্ধন বাতিল করার জোর দাবি জানাই।’
বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাবেক সভাপতি ও নৃবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান আইনুল হক বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্র-শিক্ষক, কর্মকর্তা- কর্মচারী এই হলুদ সাংবাদিকতার শিকার হয়েছে। একটি মিথ্যা সংবাদ অপপ্রচার করে আপনারা উপাচার্য স্যারকে হেয় করেছেন। বিগত সময়ে আপনারা অনেকবার সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে বিপথগামী হয়েছেন। তখন আমারা বুঝিয়েছি, তারপরও যদি আপনারা এরকম করেন তাহলে আমরা শিক্ষকরা সেই দায়িত্ব নিতে পারব না।’
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন সহযোগী অধ্যাপক এন এম রবিউল আউয়াল বলেন,
বলেন, ‘উপাচার্য স্যার আগে পরে কী বলেছেন, সেটা না জেনে মাঝখানে নিজেরা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে লিখে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করতে চাচ্ছেন তা সবাই বুঝতে পেরেছে। উপাচার্য স্যার তার বক্তব্যে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করেননি। যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব করছেন, দিনশেষে নিজদেরই সুনাম নষ্ট করছেন।’
মানববন্ধনে কেন্দ্রীয় অনুমদনপ্রাপ্ত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, ‘আপনারা যখন কিছু লিখবেন তখন এমন ভাবে বিকৃত করে লিখা উচিত না, যার কারণে সমাজে আমাদের সম্মানহানি হয়। এর আগেও আমরা এরকম অপসাংবাদিকতার শিকার হয়েছি । অতীতে দেখেছি এরকম খন্ডিত ও বিকৃত নিউজ দিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-, কর্মচারীদের হয়রানি করা হয়েছে। পাশাপাশি অপসাংবাদিকতার সাথে যুক্ত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির পক্ষ থেকেও ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আহবান করছি।’
মানববন্ধন শেষে তারাবিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবির এবং উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের সাথে এই দাবিগুলো নিয়ে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় উপাচার্য তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বক্তব্য বিকৃতির অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন বলে মানববন্ধনকারীদের আশ্বস্ত করেন।
এর আগে গত ৩১ জুলাই, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের নবীন বরণ ও বিদায় অনুষ্ঠানে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আব্দুল মঈনের একটি বক্তব্যকে ভিত্তি করে সংবাদ প্রকাশ করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের যায়যায়দিনের প্রতিনিধি ইকবাল মনোয়ার। সেখানে উপাচার্য শিক্ষার্থীদের ‘ক্রিটিকাল থিংকিং’- এর বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উদাহরণ হিসেবে একটি প্রসঙ্গ যোগ করেন।
তিনি বলেন, “প্রচলিত ধারণা হচ্ছে যে, দুর্নীতি অর্থনৈতিক উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত করে। এখন কোন শিক্ষার্থী ভাবতে পারেন, এ ধারণা সঠিক কিনা। যেমন দুর্নীতির মাধ্যমে মানুষ আয় করলে তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। এর ফলে বাজারে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বাড়ে এবং কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। যেমন, তুমি দুর্নীতির
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।