শিক্ষাজীবনের স্বর্নযুগ হিসেবে অতিবাহিত হয় ক্যাম্পাসের দিনগুলো। সেই ক্যাম্পাস জীবন যদি অবহেলায়, অদক্ষতায় ও অনিয়মে জর্জরিত হয় তাহলে স্বর্নযুগ হয়ে উঠে প্রশ্নবিদ্ধ। সেই স্বর্নযুগকে স্পষ্ট করার জন্য যেমন ক্যাম্পাস চাই আমি। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ জিনিসগুলোকে আলাদা আলাদাভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি।

১. শিক্ষার্থী-

প্রকৃত মেধা ও জ্ঞানের পরীক্ষা দিয়ে সকল স্তরের শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট সহজ প্রক্রিয়ায় ভর্তি হবে। এর সাথে আদিবাসী ও প্রতিবন্ধী কোটা থাকতে পারে। তবে আলাদা কোন পোষ্য কোটা থাকবে না। অপেক্ষমাণ এর নির্দিষ্ট তালিকা অমান্য করে এমনকি প্রশ্ন বিক্রি করে কোন শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবেনা। এরপর তারা একাডেমিক সকল কার্যাবলী বাস্তবতার প্রেক্ষিতে অনুধাবন করবে প্রয়োজনে সেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এ যুক্ত হয়ে। এতে তাদের জ্ঞান ও কাজের পরিধি বৃদ্ধি করবে। তবে অবশ্যই একাডেমিক কার্যাবলীতে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করতে হবে। লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতি থেকে দূরে থাকবে। তারা এদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক তাই তাদের চিন্তাভাবনা উন্মুক্ত ও জাতীয় স্বার্থ কেন্দ্রীক হবে। এছাড়াও শিক্ষা ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি এর সচ্ছ হিসাব কর্তৃপক্ষকে নিতে। সবশেষ দেশের ক্যাম্পাস গুলো এমন হবে যাতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য আমাদের দেশের বাহিরে যাওয়ার প্রয়োজন না পড়ে।

২. শিক্ষক-

নিজের মেধা, জ্ঞান ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ পাবে। শিক্ষার্থীদের সুবিধা ও জ্ঞানের ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাদে অন্য কোন কাজ যেমন রাজনীতি, পার্ট টাইম শিক্ষকতা সহ সকলকাজ থেকে বিরত থাকবেন। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া সকল পরিচালনার দায়িত্বে (যেমন হল, পরিবহন ও প্রশাসন) থাকবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ পরিচালনা পরিষদ। এদের কাজ হবে এসব পরিচালনা নিয়ে কেননা আমার মনে হয় একজন শিক্ষক যখন এসব প্রধান দায়িত্বে থাকে সে শিক্ষার্থীদের ক্লাস ও পরীক্ষায় নিয়মিত হতে পারেনা। এছাড়াও শিক্ষকরা যেন রাজনৈতিক ছাত্র নেতাদের তোষামোদি না করে চলে। দীর্ঘ এই পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা বলে শিক্ষকরা ছাত্র রাজনীতির গন্ডি থেকে বের হতে পারেনি। নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য। শিক্ষকরা একটা জাতিকে তৈরি করার দায়িত্ব নিয়েছে যা দেশের দায়িত্ব নেওয়ার প্রাথমিক ধাপ এটি। সুতরাং সততা ও সদিচ্ছার সাথে তাদের মেধা ও জ্ঞানের সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হবে।

৩. বিভাগ-

প্রত্যেকটা বিভাগ নির্দিষ্ট এজেন্ডা কিংবা উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের শিক্ষার্থীদের কোর্স বন্টন করবেন একধরনের প্রশিক্ষণের মত। যেখানে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয় স্পষ্টভাবে অবগত হবে কি শিক্ষালাভ হচ্ছে এবং কেন এসব তাদের প্রয়োজন। এতে তারা তাদের ক্লাসে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিবে সাথে শিক্ষার্থীদের দক্ষতা ও জ্ঞানের বৃদ্ধিতে।বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীর নিয়োগে সচ্ছতা এবং পর্যাপ্ততা রাখতে হবে।বেশিরভাগ বিভাগের অনেক ল্যাব সুবিধা আছে কিন্তু যত্ন নেই সেগুলোর যত্ন নিতে হবে। বিভাগের ওয়াশরুম পরিস্কারের যথেষ্ট কর্মচারী ও জবাবদিহিতা থাকবে।

৪. হল-

হলের প্রভোস্ট নিয়ে আগেই বলেছি। তবে হলের পরিবেশ ও প্রক্রিয়া নিয়ে বলি। সীট বরাদ্দ হবে মেধা ও মানবিকতার(আর্থিক ভাবে অসচ্ছলতার) সমন্বয়ে। হলে নিয়মিত দৈনিক পত্রিকা পড়ার সুযোগ এবং গঠনমুলক একটা পাঠাগার থাকবে। হলের শিক্ষার্থীরা সেখানে নিজ বই এবং হল কর্তৃপক্ষের কিছু বেসিক বই থাকবে সেগুলো পাঠ করবে। হলের ওয়াশরুম সপ্তাহে কমপক্ষে দুইবার পরিমিত জীবাণুনাশক দিয়ে পরিস্কার করতে হবে। স্থায়ী নিয়োগের মাধ্যমে হলের ইলেকট্রিশিয়ান নির্ধারণ করতে হবে শিক্ষার্থীরা জরুরি প্রয়োজনে যেন দ্রুত সাড়া পায়। ডায়নিং এর খাবার হবে স্বাস্থ্যসম্মত প্রয়োজন হলে খাবারের মানের পরীক্ষা করে অনুমোদন দিতে হবে। হলের ওয়াইফাই নামমাত্র না হয়ে গতিশীল ওয়াই-ফাই বরাদ্দ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী হবে হল কেন্দ্রীক, প্রশাসন তা নিশ্চিত করবে।

৫. প্রশাসনিক ভবন-

আমাদের শিক্ষা জীবনের শেষ কাজটি করে প্রশাসনিক ভবন। অফিসাররা তাদের নিয়মিত রুটিন মাফিক কাজ করবে।প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ থাকবে তা অবশ্যই দুর্নীতি নয় দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে। এদের সবার উদ্দেশ্য থাকবে শিক্ষার্থী কেন্দ্রীক।

৬. লাইব্রেরি-

লাইব্রের হবে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের আতুরঘর। প্রতিদিন ২৪ ঘন্টা এই আতুরঘর খোলা থাকবে শিক্ষার্থীদের জন্য। এখানে একাডেমিক সহ তার যে যে সেক্টরে জ্ঞানের তৃষ্ণা সে সেখানে যত্নের সাথে মেটাবে।প্রয়োজনে নিজের বই ওখানে পড়ার পর্যাপ্ত সুবিধা গ্রহণযোগ্যতার সাথে পাবে।লাইব্রেরি হবে অফলাইন সহ পর্যাপ্ত অনলাইন সুবিধার অন্তর্ভুক্ত।

৭. টিএসসিসি-

টিএসসিসি হবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিলন মেলা। দিন রাত ২৪ ঘন্টা খোলা থাকবে।সবার উপস্থিতি ও সাংস্কৃতিক চর্চা অব্যাহত রাখতে যতটা কৌশল অবলম্বন করা যায় তা করতে হবে। ক্লাসের পরে চায়ের আড্ডায়, কবিতায় ও গানে মুখরিত থাকবে টিএসসিসি। এজন্য রুম কিংবা দরজা উন্মুক্ত করার বিকল্প নেই।

৮। ক্যাম্পাস-

সকল শিক্ষার্থীর অনলাইন ও অফলাইন সুবিধা গুলো নিশ্চিত হবে।তাদের পরিচয়বহন করে এমন একটি পরিচয়পত্র দিয়ে সকল কার্যাবলী সম্পন্ন করতে হবে।নির্দিষ্ট একটি ইমেইল এর সুবিধা ও ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ সর্বক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

সার্বিকভাবে ক্যাম্পাস হবে একটা শিক্ষাকেন্দ্র। এখানে জ্ঞানের অবাধ চর্চা ও স্বাধীনতা থাকবে। এখানে কেউ হবে সাহিত্যিক কেউ হবে বৈজ্ঞানিক আবার কেউ হবে প্রোগ্রামের বস আবার অনেকেই আছে সবাইকে সমন্বয় করে একটা বিশাল মেলা করবে। এখানে কেউ তার ভালো কাজে কোনোভাবে নিজেকে ছোট কিংবা কুন্ঠিত মনে করবে না। শিক্ষক-শিক্ষার্থী হবে একজন আরেকজনের জ্ঞানের আরাদ্ধ।

সবাই সবার চিন্তা ও উপলব্ধিকে সম্মান করবে তবে অবশ্যই জাতীয়ভাবে যেসব নিষিদ্ধ ইস্যু সেসব ইস্যু উপেক্ষা করবে।প্রয়োজনে তর্কে বিতর্কে লুটিয়ে পর্বে সবাই কিন্তু সব যুক্তিযুক্ত ও সঠিক তথ্যবহুল হবে।ক্যাম্পাস মুখরিত হবে প্রতিবছরের সমাবর্তনে সেখানে হারিয়ে যাবে বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।

গোলাম রব্বানী, শিক্ষার্থী ব্যবস্থাপনা বিভাগ।