কান চলচ্চিত্র উৎসবে ডিজাইনার পোশাকের ভিড়ে এ বছর নজর কেড়েছিল একটি ঢাকাই জামদানি শাড়ি। শাড়িটি পরেছিলেন অভিনেত্রী আজমেরি হক বাঁধন।
এপারের বাঁধন এখন ওপার বাংলাতেও এখন পরিচিত মুখ। সৌজন্যে একটি ওয়েব সিরিজ। সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ওয়েব সিরিজটি মুক্তি পেতে চলেছে আগামী ১৩ আগস্ট।
কান-এ এর আগে বহু অভিনেত্রীই শাড়ি পরেছেন। ঐশ্বর্য রাই বচ্চন থেকে দীপিকা পাড়ুকোন, সোনম কপূর, বিদ্যা বালন, নন্দিতা দাস, কঙ্গনা রানাউত, ডায়ানা পেন্টি, নিমরত কউর এমনকি পাকিস্তানের অভিনেত্রী মাহিরা খানও শাড়িতেই কানের রেড কার্পেটে হেঁটেছেন। তবে এই প্রথম বাংলার ঢাকাই জামদানি পরে কোনও নায়িকা কানের লাল গালিচা মাতালেন।
রেড কার্পেটে ঢাকাই শাড়ি পরা বাঁধন ফ্যাশন প্রহরীদের প্রশংসা কুড়িয়েছিলেন। একই সঙ্গে চলচ্চিত্র উৎসবে বিচারকদের প্রশংসা পেয়েছিল তার অভিনয়ও। তবে বাঁধন শুধু একজন অভিনেত্রী নন। পেশায় চিকিৎসক এই অভিনেত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং উত্থানের লড়াই চমকে দেওয়ার মতো।
বাঁধনের ছবি ‘রেহানা মারিয়ম নূর’ প্রদর্শিত হয়েছিল কানে ‘আঁ সেত্রা রিগা’ বিভাগে। এই প্রথম কোনও বাংলাদেশি ছবি কান-এর মতো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শনের আমন্ত্রণ পেল। বাঁধনও প্রথম বাংলাদেশি অভিনেত্রী, যিনি কান-এর রেড কার্পেটে হাঁটলেন।
বাঁধন জানিয়েছেন, প্রথমবার কান-এর মতো মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে অভিভূত হয়েছিলেন তিনি। তখনই ঠিক করেন, পোশাকের মাধ্যমে দেশের সংস্কৃতিকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে তুলে ধরবেন। সেই ভাবনা থেকেই রেড কার্পেটে ঢাকাই পরার সিদ্ধান্ত। এমনকি কান-এর মূল অনুষ্ঠানে বাঁধন যে লাল রঙের গাউন পরেছিলেন, সেটিও ছিল ঢাকাই মসলিনে তৈরি।
কান-এ প্রদর্শিত বাঁধনের ছবিটি ছিল নারী কেন্দ্রিক। মধ্যবয়সী এক সহকারী অধ্যাপক মুখ্য চরিত্র। বাঁধন ওই চরিত্রেই অভিনয় করেন। কান-এ ছবিটি শেষ হওয়ার পর তাকে উঠে দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন জুরিরা।
ছবিটি বানাতে দেড় বছর সময় লেগেছিল। তবে বাধন প্রথমবার ছবিটি দেখেন কান-এই। ছবির পরিচালক আবদুল্লাহ মহম্মদ সাদ তাকে বলেছিলেন, কান-এই পর্দার রেহানার সঙ্গে বাঁধনের দেখা হবে। প্রথমবার ছবিটি পর্দায় দেখার পাশাপাশি দর্শকদের প্রশংসা পেয়ে আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন বাঁধন।
সেই বাঁধনকে এবার দেখা যাবে ওপার বাংলার একটি ওয়েবসিরিজে। সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের পরিচালনায় একটি পরিচিত বাংলা ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ওয়েব সিরিজটি মুক্তি পেতে চলেছে ১৩ আগস্ট। নাম ‘রবীন্দ্রনাথ এখানে কখনও খেতে আসেননি।’
ছবিতে মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাহুল বসু, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, অঞ্জন দত্তের মতো অভিনেতা। তবে মুখ্য চরিত্র মুশকান জুবেরির ভূমিকায় দেখা যাবে বাঁধনকে।
এই প্রথম ওয়েব সিরিজে অভিনয় করবেন বাঁধন। তা-ও আবার ভারতীয় পরিচালকের নির্দেশনায়। রেহানা মারিয়ম নূর ছবিটি ছাড়া এর আগে আর মাত্র একটি ছবিতেই কাজ করেছেন তিনি। নাম নিঝুম অরণ্যে। ২০১০ সালে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। মাঝে অবশ্য বেশ কিছু ধারাবাহিকেও কাজ করছেন।
বয়স ৩৭। জন্ম বাংলাদেশের মুন্সীগঞ্জে। বাঁধন একজন পেশাদার দন্তচিকিৎসক। বাংলাদেশের ডেন্টাল কলেজ থেকে বিডিএস পাস করেছিলেন।
তবে গ্ল্যামার জগতের ডাক এড়াতে পারেননি। ২০০৬ সালে একটি সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। সেখানে প্রথম রানার আপ হয়েছিলেন বাঁধন। এরপর মডেলিং এবং সেখান থেকেই অভিনয়ে আসা।
২০১০ সালে প্রথম সিনেমায় অভিনয় করেন বাঁধন। ওই বছরই বিয়েও করেন। স্বামী মসরুর হোসেন সিদ্দিকি সনেট বয়সে অনেকটাই বড় তার থেকে। চার বছর পর বিচ্ছেদ হয় দু’জনের।
ততদিনে এক কন্যার মা হয়েছেন বাঁধন। মেয়ে সায়রা এখন তাঁর সঙ্গেই থাকেন। বাঁধন একা-মা। আপাতত অভিনয় আর মেয়েকে নিয়েই তার জগৎ।
তবে বাঁধন জানিয়েছেন, তিনি আপাতত বাঁধন ছিঁড়তেই আগ্রহী। নিজের অভিনয় ক্ষমতা নিয়ে আরও পরীক্ষা নীরিক্ষা করতে চান তিনি।
সুত্র-আনন্দবাজারপত্রিকা
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।