বলিউডের এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী নীতা মেহতা। এই জগতে কাটিয়েছেন প্রায় দুই দশক। অভিনয় করেছেন ৪০টিরও বেশি সিনেমায়। বিনোদ খান্না, সঞ্জীব কুমারের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে হিট ছবিতে কাজ করতে দেখা যায় তাকে। বর্তমানে তিনি সন্ন্যাসীনির জীবন কাটাচ্ছেন।

মুম্বাইয়ের এক গুজরাটি পরিবারে জন্ম এই অভিনেত্রীর। বাবা ছিলেন আইনজীবী, মা চিকিৎসক। বাবা-মা চাইতেন, তাদের কন্যা পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার তৈরি করুক। কিন্তু ছোটোবেলা থেকেই নীতার মন ছিল অভিনয়ের দিকে। পড়াশোনা করলেও সেদিকে নীতার মন ছিল না। স্কুলের গণ্ডি পার করে কলেজের সন্ধানে ছিলেন তিনি। হঠাৎ একদিন খবরের কাগজে ফিল্ম টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার (এফটিআইআই) বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে তার। সেখানে ভর্তি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

 

কিন্তু নীতার বাবা-মা তাকে অভিনয় নিয়ে পড়াশোনা করার অনুমতি দেননি। তিনি বাড়ির বিরুদ্ধে গিয়ে এফটিআইআইয়ে ভর্তি হওয়ার ফর্ম পূরণ করেন। ২০ হাজার ছাত্রছাত্রীর মধ্যে মাত্র চার থেকে পাঁচ জনকে ভর্তি হওয়ার সুযোগ দিত এফটিআইআই। নীতা আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। এত জনের মধ্যে তিনি যে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন তা ভাবতেই পারেননি।

অবশেষে স্বপ্নপূরণ হয় নীতার। এফটিআইআইয়ে ভর্তি হওয়ার পর বলিউডের বড় বড় তারকাদের সঙ্গে পরিচিতি বাড়ে তার। মডেলিংও শুরু করেন তিনি। কলেজে পড়াকালীন ‘পোঙ্গা পণ্ডিত’, ‘ইয়ে হ্যায় জিন্দেগি’-এর মতো বিভিন্ন হিন্দি ছবিতে কাজ করার সুযোগ পান নীতা। কিন্তু তার জীবনে মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায় ১৯৭৮ সালের ‘ম্যায় তুলসি তেরে অঙ্গন কি’ ছবিটি। রাজ খোসলা পরিচালিত এই ছবিতে বিনোদ খান্না এবং আশা পারেখের মতো তারকাদের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন নীতা। এই ছবিতে তার অভিনয় দর্শকের মনে জায়গা করে নেয়।

তারপর আর নীতাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আশির দশকে একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয় করতে থাকেন তিনি। তবে সঞ্জীব কুমারের সঙ্গে পর্দায় তার জুটি বেশি পছন্দ করেছিলেন দর্শক। কাজ করার সূত্রে, সঞ্জীবের সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় নীতার। বলিপাড়ায় কানাঘুষা শোনা যায়, নীতা ও সঞ্জীব দুজনে সম্পর্কেও ছিলেন। অভিনেতাকে বিয়েও করতে চেয়েছিলেন নীতা। সঞ্জীবকে নাকি বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিয়ে করার জন্য শর্ত রেখেছিলেন সঞ্জীব। তিনি নীতাকে জানিয়েছিলেন, তাকে বিয়ে করলে অভিনয়জগতের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে নীতাকে। অভিনয় থেকে সরে আসতে পারলে তবেই তিনি বিয়ে করবেন।

ভালোবাসা পাওয়ার জন্য ক্যারিয়ার জলাঞ্জলি দিতে রাজি ছিলেন না নীতা। তাই সঞ্জীবকে ভালোবাসলেও তার কাছ থেকে সরে এসেছিলেন তিনি। ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যাপারটি জানাজানি হয়ে গেলে কাজ কম পেতে থাকেন নীতা।

‘জানি দুশমন’, ‘পত্থর সে টক্কর’, ‘হিরো’র মতো ছবিতে সঞ্জীবের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন নীতা। সঞ্জীব ভেবেছিলেন, অন্য নারীদের মতো নীতাও হয়ত তার যশ, প্রতিপত্তি দেখে তাকে বিয়ে করতে চেয়েছিলেন। তাই নীতা যখন তাকে বলেন, বিয়ের পরেও তিনি কাজ চালিয়ে যেতে চান তখন সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন সঞ্জীব।

আশির দশকে যে নীতা মুখ্য চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতেন, তিনিই পরের দিকে বয়স্কের চরিত্রে অভিনয়ের প্রস্তাব পেতে থাকেন। সেই ধরনের চরিত্রে কাজ করলেও পরে আর নীতাকে কেউ কাজের সুযোগ দিতে চাইতেন না।

বলিউডের শ্রীদেবী এবং জয়াপ্রদার মতো নায়িকারা এসে যাওয়ার পর নীতা বুঝতে পারেন, ইন্ডাস্ট্রিতে তার দিন শেষ হয়ে এসেছে। তাই অভিনয় থেকে সরে আসেন তিনি। সঞ্জীবের কাছ থেকে সরে আসার পর আর কাউকে বিয়েও করেননি তিনি। এর পর মুম্বাইয়ে একটি গহনার দোকান খোলেন নীতা। কিন্তু অভিনয় ছাড়ার পর বেশি দিন ব্যবসায় মন দিতে পারেননি তিনি। তাই দোকান বন্ধ করে তিনি ধর্মে মনোনিবেশ করেন।

ছোট থেকেই নীতা তার মাকে দেখতেন মা আনন্দময়ীর আশ্রমে যেতে। তিনিও ওই আশ্রমে যাতায়াত শুরু করলেন। আনন্দময়ীকে উৎসর্গ করে একটি বইও লেখেন তিনি। বর্তমানে ইউটিউবে নিজের একটি চ্যানেল খুলে সেখানে বিভিন্ন ধরনের ভিডিও পোস্ট করেন তিনি। বলিউড থেকে সরে গিয়ে এখন তিনি সন্ন্যাসিনী।