চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির এখন যে অবস্থা, তাতে করে এভাবে হাত পেতে ক্ষয়ে যাওয়া ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াতে পারবে না। সরকার টাকা দিতে প্রস্তুত, সরকার সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙ্গা করতে চায়; কিন্তু আপনি যদি সেই টাকা ব্যবহারের পথ না জানেন, ধারণা আপনার মাথায় না খেলে, তাহলে এই বিনোদনমাধ্যমকে কোনোভাবেই বাঁচাতে পারবেন না।

আসন্ন জাতীয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি হিসেবে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণার পরপর এক প্রশ্নের জবাবে কালের কণ্ঠকে এসব বলেন। শুক্রবার সকালে কালের কণ্ঠকে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘কোনো নির্বাচন করার জন্য প্রার্থী হচ্ছি বিষয়টি তেমন নয়। আমি কোনো নির্বাচন করতে আগ্রহী নই। বড় বড় ইলেকশন করার সুযোগ সামনে এসেছে, এসব এড়িয়ে গেছি।’
তাহলে শিল্পী সমিতির নির্বাচনে কেন প্রার্থী হচ্ছি? প্রশ্নের উত্তর দিলেন নিজেই। বলেন, ‘আমি যে নিজের ইচ্ছায় প্রার্থী হচ্ছি তা নয়, আমাকে এই ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা ও পরিণতি সম্পর্কে তরুণরা বলছিল। তাদের কথার সূত্র ধরেই কথাগুলোকে বিশ্লেষণ করি। এরপর মনে হলো, ওরা ভুল বলেনি।’

জানা গেছে, মাঠ পর্যায়েও নিজের গ্রহণযোগ্যতা যাচাই করেছেন বেদের মেয়ে জোছনা খ্যাত এই অভিনেতা। সেখানেই ইতিবাচক মনোভাব দেখতে পান, এরপরই সিদ্ধান্ত নেন নির্বাচন করার।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘এর বাইরে ফাইট ডিরেক্টর, নৃত্যপরিচালক, চিত্র পরিচালক, প্রযোজক- ইন্ডাস্ট্রির প্রকৃত কাজের মানুষরা আমাদের প্যানেলকে সমর্থন দিচ্ছেন। তারা মন থেকে চাইছেন আমি নির্বাচন করি। আমাদের শিল্পীরা অনুদান নিতে চায় না। তারা নিয়মিত কাজ করতে চায়। ইন্ডাস্ট্রির মানুষদের মধ্যে একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আমরা নির্বাচনে জয়ী হয়ে সেই দূরত্ব দূর করতে চাই।

চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রির কাঠামো দাঁড় করাতে চান ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, আমার নির্বাচন করার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে এই ক্ষয়িষ্ণু ইন্ডাস্ট্রির মেরুদণ্ড সোজা করানো। চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এ জন্য সঠিক পরিকল্পনার মানুষ দরকার। কিভাবে এই ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করানো যায় তার সঠিক পরিকল্পনা তৈরি করে এগোতে হবে। আমি দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন করে আসছি। দেশব্যাপী এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। আমি জানি কিভাবে সংগঠন পরিচালনা করতে হয়।

ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, প্রচুর টাকা পেলেও চলচ্চিত্রের এই রুগ্ণ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় নেই। ধরুন, আপনাকে চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে চাঙ্গা করার জন্য টাকা দিতে চায় সরকার। এখন আপনি সেই টাকা কোন জায়গায় কিভাবে ব্যয় করবেন জানেন না, তাহলে তো হবে না। আপনার সঠিক পরিকল্পনা থাকলে আপনি সেই টাকা নিতে পারবেন, এবং টাকা যথাযথ জায়গায় ব্যয় করে আপনি এই ইন্ডাস্ট্রিকে দাঁড় করাতে পারবেন।

তিনি বলেন, এমনও হতে পারে সরকার টাকা দিতে চাইছে, কিন্তু আপনি পরিকল্পনা দিতে পারছেন না, কিভাবে সে টাকা ব্যয় করবেন সেটাই জানেন না। তাহলে তো লাভ নেই। এসব ভেবেচিন্তে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটি সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলা চলচ্চিত্রের দুরবস্থা দূর করে সুদিন ফিরিয়ে আনব।

আসন্ন শিল্পী সমিতির নির্বাচনে আরেকটি প্যানেলের নেতৃত্ব দেবেন গত কমিটির সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান।

শিল্পী সমিতির নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন পীরজাদা হারুন। দুজন সদস্য হলেন বি এইচ নিশান ও বজলুর রাশীদ চৌধুরী। আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয়েছে সোহানুর রহমান সোহানকে। মোহাম্মদ হোসেন জেমী ও মোহাম্মদ হোসেনকে আপিল বোর্ডের সদস্য করা হয়েছে।