চিত্রনায়িকা পরীমণির ইস্যুতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির আচরণে হতবাক ও বিস্মিত হয়েছেন ঢাকাই ছবির শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। শনিবার তিনি বলেন, ‘একজন সহকর্মী হিসেবে যতটা জেনেছি, পরীমণি বাবা-মাহীন একটি মেয়ে। তার বেড়ে ওঠার সঙ্গে আর দশটা তরুণ-তরুণীর বেড়ে ওঠার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য আছে। তার স্ট্রাগল এবং আর দশটা মানুষের স্ট্রাগল এক হবে না। হয়তো অভিভাবকের অভাবেই অনেক সময় সঠিক সিদ্ধান্তটা নিতে পারেনি।’
পরীমণিকে আটক করা হয়েছে ৪ আগস্ট। আর শাকিব তার অভিমত প্রকাশ করছেন ১৪ আগস্ট। ১১ দিন পরে শাকিবের এই অভিমতে হতবাক হয়েছেন নেটিজেন ও সহশিল্পীরা। অনেকেই মনে করছেন ‘শাকিব সেইফ সাইডে খেলছেন।’ কেননা পরীমণি তার সহ অভিনেত্রী। দুটি চলচ্চিত্রে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন। নায়িকা আটকের পর শাকিবের একটা বিবৃতি প্রয়োজন ছিল শীর্ষ নায়ক হিসেবে।’ নেটিজেনরা বলছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে বিশিষ্ঠ নাগরিকেরা পরীমণির মুক্তির বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছেন।
এরপরে হাওয়া একটু ঘুরতে থাকে, তারপরে শাকিব অনুকূল আবহাওয়ায় বিদ্রোহীর মতো পোস্ট দিলেন। যেন খুব শুভাকাঙ্ক্ষী।’ কয়েকজন শিল্পী বলছেন, ‘শিল্পী সমিতি এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, শাকিবের খারাপ লেগেছে, হতবাক হয়েছেন তিনি। এতো দেরি করে কেন হতবাক হলেন? তার তখনই কথা বলা উচিৎ ছিল না?’ যারা পরীমণিকে বিপথে নিয়ে গেছে, তাদেরও বের করতে হবে- শাকিবের এমন মন্তব্যে নায়কের দিকে তীর ছুঁড়েছেন একজন তরুণ গায়ক।
তিনি বলেছেন, আপনি কি এতোদিন জানতেন না যে পরীমণি বিপথে না সুপথে চলছে তখন কই ছিলেন?’ শাকিব খান বলেন, গত ১০ আগস্ট আদালত চত্বরে পরীমণির শতবর্ষী নানা তার নাতনিকে দেখতে ছুটে গিয়েছিলেন। করোনার ভয়াবহতাও তাকে আটকাতে পারেনি। রক্তকে উপেক্ষা করতে পারেনি রক্ত। কিন্তু সময় কি নিষ্ঠুর। নাতনীর সঙ্গে দেখাই হলো না তার নানার। আদালত চত্বরেই তার নানাকে বলতে শুনেছি, নিজের জন্য জীবনে কিছুই করেনি পরীমণি। সব মানুষের জন্য দান করে গেছে। আর এখন পরিস্থিতির শিকার হয়েছে।
‘ শাকিব লিছেন, ‘বিষয়টা এখন বিচারাধীন, ওই বিষয়ে কিছু বলছি না। তিনি যে মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে গেছেন, তার কী অপরাধ সেটা বিশ্লেষণে যাচ্ছি না। দেশের প্রচলিত আইন-আদালতে যা আছে, নিশ্চয়ই নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে সঠিক বিচার হবে। শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে পরীমণিকে গ্রেপ্তারের পর তার প্রতি কোনো ধরণের সহযোগিতার হাত না বাড়িয়ে, দুঃসময়ে শিল্পীর পাশে না থেকে, উল্টো তড়িঘড়ি করে সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। কোনো কিছু না ভেবে পরীমণির সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করা হয়েছে।
এটা কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো। সমিতির এই আচরণ ব্যক্তিগতভাবে আমাকে হতবাক ও বিস্মিত করেছে। আমি মনে করি, সহশিল্পীর সঙ্গে সংগঠনের এটি একটি অমানবিক আচরণ। প্রশ্ন থেকে যায়, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি তাহলে কাদের স্বার্থে?’ শাকিব খান বলেন, ‘যারা পরীমণিকে বিপথে নিয়ে গেছে, তাদেরকেও খুঁজে বের করা উচিত। ৩০টির বেশি সিনেমার সঙ্গে তিনি জড়িত বলে জানতে পেরেছি। তার হাতে আছে আরও বেশ কিছু সিনেমা। কিন্তু যারা বছরের পর বছর একটি সিনেমাতেও কাজ না করে দিনের পর দিন শিল্পী সাইনবোর্ড ব্যবহার করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছে, তাদেরও আয়ের উৎস খুঁজে বের করা উচিত।
‘ ‘সহশিল্পী হিসেবে আশা রাখি, পরীমণির ক্ষেত্রে আইন তার স্বকীয়তা বজায় রাখবে। পরীমণি যখন ফিরবে, তার ভুল থেকে শিক্ষাও নেবে। যে শিক্ষা তার আগামী জীবনে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করবে। খেয়াল করছিলাম, অপেক্ষাও করছিলাম। প্রত্যাশা ছিল, বিপরীতে বেড়েছে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা।
গত কয়েকদিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে থেকে শুক্রবার আদালতের নির্দেশে পরীমণিকে কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’] উল্লেখ্য, শাকিব খান পরীমণি ধুমকেতু ও আরো ভালোবাসবো তোমায় নামের দুই ছবিতে জুটিবদ্ধ অভিনয় করেছেন। নায়িকার এহেন পরিস্থিতিতে শাকিবের এতোদিন চুপ থাকায় হতবাক হয়েছেন কিছু শিল্পী ও নেটিজেনরা।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।