১৩২ দিন পর দেশে আবার এক দিনে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। এ ছাড়া নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে নতুন রোগী শনাক্তের হারও ১২ শতাংশের বেশি। আর ৮৮ দিন পর আবারও এক দিনে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা ১০ ছাড়াল। গতকাল বৃহস্পতিবার করোনা প্রতিরোধে দেশে নতুন করে বিধি-নিষেধের শুরুর দিনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এসব তথ্য জানিয়েছে। বিপরীতে দেশজুড়েই স্বাস্থ্যবিধি মানায় চরম উদাসীনতা দেখা গেছে।
গতকাল অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৩৫৯ জন। এ সময়ে ১২ জন মারা গেছে। এ নিয়ে দেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২৮ হাজার ১২৩ হলো। শনাক্ত হয়েছে ১৬ লাখ চার হাজার ৬৬৪ জনের।
গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃতদের মধ্যে ছয়জন পুরুষ, ছয়জন নারী। বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৯১ থেকে ১০০ বছরের একজন, ৭১ থেকে ৮০ বছরের দুজন, ৬১ থেকে ৭০ বছরের চারজন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের চারজন এবং ২১ থেকে ৩০ বছরের একজন মারা গেছে। এদের মধ্যে ঢাকা বিভাগের আটজন, চট্টগ্রামের একজন, খুলনার একজন, বরিশালের একজন এবং ময়মনসিংহের একজন।
বিধি-নিষেধ মানছে না অনেকে: করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকার নতুন করে ১১ দফা স্বাস্থ্যবিধি জারি করলেও অনেকে তা মানছে না। গতকাল থেকে এসব নির্দেশনা কার্যকর হওয়ার কথা। তবে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার, খাবারের দোকান, জনসমাগম বেশি হয় এমন জায়গাসহ গণপরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হতে দেখা গেছে। দেশের অন্য এলাকায়ও ছিল একই অবস্থা।
সরকারি বিধি-নিষেধে বলা হয়েছে, অফিস-আদালত, দোকান, শপিং মল, কাঁচাবাজার, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ জনসমাগম বেশি হয় এমন স্থানে সবাইকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক না পরলে আর্থিক জরিমানাসহ জেলের বিধান করা হয়েছে। কিন্তু রাজধানীতে স্বাস্থ্যবিধি মানায় দেখা গেছে উদাসীনতা। সরকারের পক্ষ থেকেও ছিল না কঠোর নজরদারি। গতকালও রাজধানীর আজিমপুর, শাহবাগ, গুলিস্তান, মিরপুর-১০, পল্লবী, রূপনগর, গাবতলী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাস্তায় চলাচল করা বেশির ভাগ মানুষ মাস্ক পরেনি।
বাসে ঠাসাঠাসি, যাত্রীর পকেটে মাস্ক: সদরঘাট থেকে ছেড়ে আসা ভিক্টর ক্লাসিক বাস গুলিস্তান পৌঁছে শান্তিনগর, বাড্ডা, নতুন বাজার, বিশ্বরোড বলে চিৎকার করে যাত্রী ডাকছিল। অথচ ওই বাসেই তখন অন্তত ১৫ জন যাত্রী দাঁড়ানো ছিল। এ অবস্থায় বাসে আরো যাত্রী তোলার বিষয়ে হেল্পার জামান বলেন, ‘আমাগো নির্দেশনা শনিবারথন মানতে অইবো। আরো দুই দিন বেশি যাত্রী নিতারুম।’
বাজারে নেই শারীরিক দূরত্বের বালাই: রাজধানীর বাজারগুলোয় বিক্রেতার বেশির ভাগ মাস্ক পরতে সরকারি নির্দেশনা জানেনই না। কাঁচাবাজারগুলোয় গাদাগাদি করেই চলছে বেচাকেনা। বিক্রেতাদের পাশাপাশি বেশির ভাগ ক্রেতাকে মাস্ক পরা অবস্থায় দেখা যায়নি। অনেকের সঙ্গে মাস্ক থাকলেও ব্যবহারে ছিল উদাসীন। জোয়ারসাহারা বাজার ও কালাচাঁদপুর এলাকায় নদ্দা সরকারবাড়ি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শাক-সবজি, মাছ, মাংস ও মুদি দোকানিরা মাস্ক না পরেই পণ্য বিক্রি করছেন।
হোটেল-রেস্তোরাঁয় দেখা হয় না টিকার সনদ: রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার হোটেল ও রেস্তোরাঁ ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই মানুষজন প্রবেশ করছে আর দেখতে চাওয়া হচ্ছে না টিকার সনদ। যদিও অনেক হোটেল-রেস্তোরাঁর প্রবেশপথে সতর্কবার্তা হিসেবে ‘টিকা কার্ড ছাড়া প্রবেশ নিষেধ’ লেখা রয়েছে।
দক্ষিণ কুড়িলের গুড টাইম রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে কয়েকজন খাবার খাচ্ছে। জানতে চাইলে রেস্টুরেন্টের সহকারী ব্যবস্থাপক সাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘মাস্ক ছাড়া আমরা কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছি না।’
ঢাকার বাইরের অবস্থা: গতকাল চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ঘুরে দেখা গেছে, কেউ মানছে না করোনার বিধি-নিষেধ। মাস্ক পরা ছাড়াই অনেকে চলাফেরা করছে। নগরের অক্সিজেন, লালখান বাজার, কদমতলী, স্টেশন রোডসহ বিভিন্ন সড়ক-উপসড়কেও একই দৃশ্য দেখা গেছে। হোটেল-রেস্তোরাঁয়ও খেতে গেলে দেখাতে হয় না টিকার সনদ। বাস ও হিউম্যান হলারে যাত্রীর ঠাসাঠাসি। যাত্রীর বেশির ভাগেরই মাস্ক পরা নেই।
এছাড়াও খুলনা ও বরিশালেও একই অবস্থা দেখা গেছে। গতকাল দুপুরে ময়মনসিংহের ভালুকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান শুরু করলে যানবাহনের চালক ও পথচারীদের মধ্যে মাস্ক কেনার হিড়িক পড়ে যায়। এ সময় চালকসহ ১৪ জনকে এক হাজার ৪০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।