পুরুষের স্তন ক্যান্সার (মেইল ব্রেস্ট ক্যান্সার) কি?

ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তনের ক্যান্সার পুরুষদেরও হতে পারে, যদিও এর সম্ভাবনা খুবই বিরল। এই রোগে পুরুষদের শরীরে স্তনবৃন্তের পেছনে এবং আশেপাশে অবস্থিত স্তনকোষে ক্যান্সার দেখা দেয়।

ছবি সংগৃহীত: পুরুষের স্তন ক্যান্সার 

পুরুষদেহে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্দেশকারী সাধারণ লক্ষণ ও উপসর্গগুলি হল:

কোনো একটি স্তনে মাংসপিন্ড তৈরী হওয়া। যদিও এই মাংসপিন্ড অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ব্যথাহীন হয়। অন্যদিকে, গাইন্যাকোম্যাস্টিয়া নামক আরেক ধরনের অবস্থায় পুরুষদেহের স্তনগ্রন্থিতে একধরণের ক্যান্সারবিহীন পিন্ড তৈরী হয়, যার ফলে শরীরের ওই অংশ ফুলে ওঠে ও আকারে বৃদ্ধি পায়।
স্তনবৃন্ত সংকুচিত হয়ে যায়,
স্তনবৃন্ত বা নিপলে ঘা দেখা দেয়,
স্তনবৃন্ত থেকে পুঁজ নিঃসৃত হয়,
যদি ক্যান্সার শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে, তবে যে উপসর্গগুলি দেখা দেয়, সেগুলি হল:
হাড়ে ব্যথা,
লিম্ফ নোড বা লসিকাগ্রন্থি ফুলে ওঠা,
ক্ষিদে কমে যাওয়া ও বমি ভাব
জন্ডিস
পুরুষের স্তন ক্যান্সারের কারণ ও ঝুঁকির সম্ভাবনা
পুরুষদেহে ব্রেস্ট ক্যান্সার হওয়ার সঠিক কারণ এখনো স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তা সত্বেও কিছু জিনিসের প্রভাবে এই ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় বলে মনে করা হয়। এগুলি হল:

ছবি সংগৃহীত: পুরুষের স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ

বয়স: বয়স বাড়ার সাথে সাথে পুরুষদেহে ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। সাধারণতঃ ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী পুরুষদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

পরিবারে এই রোগের ইতিহাস: যদি পরিবারের কোনো সদস্যের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে থাকে, তবে অন্যান্য পুরুষ সদস্যদের ক্ষেত্রে এই রোগ হবার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

জিনগত বিবর্তন: জিনগত কারণ এবং কিছু বিরল জিনগত অসুখ, যেমন ক্লাইনফেল্টার সিনড্রোম ইত্যাদি কারণে পুরুষদেহে ব্রেস্ট ক্যান্সার দেখা দিতে পারে। উপরিউক্ত কারণগুলির ফলে পুরুষদেহে স্বাভাবিকের তুলনায় কম টেস্টোস্টেরন হরমোন নিঃসরণ হয়, যা ব্রেস্ট ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ বলে বিবেচিত।

ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি: টেস্টোস্টেরনের মাত্রা হ্রাসের মতই পুরুষদেহে ইস্ট্রোজেন বা স্ত্রী হরমোনের মাত্রা বেড়ে যাওয়াও ব্রেস্ট ক্যান্সারের একটি অন্যতম কারণ।

পেশাগত ঝুঁকি: যেসমস্ত পুরুষ উচ্চ তাপমাত্রযুক্ত পরিবেশে কাজ করেন, তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার হবার সম্ভাবনা বেশী বলে মনে করা হয়।

বিকিরণের প্রভাব: ক্ষতিকর রশ্মির বিকিরণের ফলেও পুরুষদেহে ব্রেস্ট ক্যান্সারের সম্ভবনা দেখা দিতে পারে।

পুরুষের স্তন ক্যান্সার নিরূপণ:

শারীরিক পরীক্ষা নিরীক্ষা: এই রোগ নিরূপণের জন্য চিকিৎসক স্তনগ্রন্থিতে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং লসিকাগ্রন্থি ফুলে উঠেছে কিনা পরীক্ষা করে দেখবেন।

ম্যামোগ্রাম: এটি একধরনের এক্স-রে পরীক্ষা, যা স্তনগ্রন্থিতে ক্যান্সারের নির্দেশক যেকোনো পরিবর্তন চিহ্নিত করতে সাহায্য করে।

আল্ট্রাসাউন্ড: এই পরীক্ষায় উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন শব্দতরঙ্গের মাধ্যমে স্তনগ্রন্থির অভ্যন্তরের ছবি তোলা যায়, যা থেকে ঐ অঙ্গের অবস্থা বোঝা সম্ভব হয়।

বায়োপসি: এই পরীক্ষার মাধম্যে আক্রান্ত অংশের কিছু নমুনা সংগ্ৰহ করে গবেষণাগারে পরীক্ষা করে দেখা হয় যে তাতে ক্যানসারের কোষ রয়েছে কিনা।

পুরুষের স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা:

ক্যান্সারের বর্তমান পরিস্থিতি, স্তর বা স্টেজ এবং গুরুত্ব অনুযায়ী ওর চিকিৎসা ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়।

এই রোগের জন্য উপলব্ধ চিকিৎসা পদ্ধতিগুলি হল নিম্নরূপ:

সার্জারি বা অপারেশন:ক্যান্সার আক্রান্ত অংশ বাদ দেবার জন্য ম্যাস্টেক্টমি নামক অপারেশন করা হয়। এই অপারেশনে স্তনবৃন্ত ও তার আশেপাশের অংশের সম্পূর্ণ স্তনগ্রন্থি কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

কেমোথেরাপি:কেমোথেরাপি হল একটি অতি প্রচলিত ক্যান্সারের চিকিৎসা পদ্ধতি, যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষগুলির দ্রুত বিভাজন ও বৃদ্ধির হার রোধ করে। এইভাবে কোষগুলির দ্রুত বিভাজন ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধির হারকে নিয়ন্ত্রণ করে কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধগুলি সারা শরীরে ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকায়।

যদিও কেমোথেরাপির বেশ কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে, তা সত্ত্বেও এটি ক্যান্সারের চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বাধিক প্রচলিত পদ্ধতি। এই চিকিৎসা পদ্ধতি রেডিয়েশন বা ক্যান্সারের অপারেশনের চাইতে আলাদা। কারণ, রেডিয়েশন থেরাপি বা অপারেশন ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষগুলিকে তাদের নির্দিষ্ট স্থানে লক্ষ্য করে চিকিৎসা করে। অন্যদিকে, কেমোথেরাপির ওষুধ মেটাস্টেসিস পর্যায়ে থাকা অর্থাৎ দেহের অন্যান্য অংশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সার সেলগুলিকেও ধংস করতে সক্ষম।

রেডিয়েশন থেরাপি:রেডিয়েশন থেরাপি হল এমন এক ধরণের ক্যান্সার চিকিৎসা যাতে ক্যান্সার সেলগুলি ধংস করার জন্য উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রশ্মি প্রয়োগ করে টিউমারটি বা টিউমারগুলিকে সঙ্কুচিত কর হয়। এই উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন রশ্মি ক্যান্সার সেলের ডি এন এ ধ্বংস করে শরীরের ক্যান্সার নির্মূল করে। ক্ষতিগ্রস্ত ডি এন এ বিশিষ্ট ক্যান্সার সেলগুলি আর বাড়তে পারেনা, ফলে তা ক্রমশঃ ধ্বংস হয়ে যায়। এরপর , সেই ধ্বংসপ্রাপ্ত কোষগুলি দেহের স্বাভাবিক নিয়মেই দেহ থেকে অপসারিত হয়ে যায়, এবং এইভাবে ক্যান্সার নির্মূল হয়।
হরমোন থেরাপি:আমাদের শরীরের বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা বা এন্ডোক্রিন গ্রন্থি যেমন থাইরয়েড, অগ্ন্যাশয়, গর্ভাশয় এবং শুক্রাশয় ইত্যাদিতে দেহের প্রয়োজনীয় হরমোন তৈরী হয়। এর মধ্যে কিছু কিছু হরমোন ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে, বিশেষতঃ প্রস্টেট এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এই ঘটনা দেখা যায়। হরমোন থেরাপির মাধ্যমে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে বিশেষ কিছু ওষুধ দেওয়া হয়, যা ক্যান্সারের বৃদ্ধিতে সাহায্যকারী হরমনগুলির ক্ষরণের মাত্রা হ্রাস করে ক্যান্সারকে ছড়িয়ে পড়া থেকে আটকায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওই ধরণের ক্যান্সারের সাহায্যকারী হরমোনের উৎপত্তি রোধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট গ্রন্থিটিকেই অপারেশনের মাধ্যমে কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়।

তাই আসুন মেয়েদের মত পুরুষের ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার কে অবহেলা না করে সচেতন হই ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার থেকে দূরে থাকি।