দেশে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে দিনদিন। শুধু নারীরাও নয়, পুরুষরাও আক্রান্ত হচ্ছেন স্তন ক্যান্সারে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের মূলত দুই ধরণের কারণ দেখা যায়।
প্রথমত, অপরিবর্তনযোগ্য কারণসমূহ এবং পরিবর্তনযোগ্য কারণসমূহ। অপরিবর্তনযোগ্য এই কারণে বলা হচ্ছে যে এই ঝুঁকি সমূহ জেনেটিক, বংশ এবং হরমোনের কারণে হয়ে থাকে। পরিবর্তনযোগ্য ঝুঁকি সমূহ পুরোপুরি আমাদের নিজেদের হাতে থাকে। চলুন তবে এই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।
অপরিবর্তনযোগ্য কারণসমূহ :
১. জেনেটিক কারণে কিছু মানুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। বিআরসিএ১, বিআরসিএ২ নামের জিনের মিউটেশন ৫% থেকে ১০% স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী থাকে।
২. বংশগত কারণে এই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন অনেকেই। যেমন- মা, খালা, বোন বা মেয়ে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায় অনেকাংশে।
৩. মহিলাদের মাসিক শুরু এবং বন্ধের বয়সের ওপরেও এই রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি নির্ভর থাকে। যাদের ১২ বছর বয়সের পূর্বে মাসিক শুরু এবং ৫০ বছর বয়সের পর মাসিক বন্ধ হয় তাদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
৪. এস্ট্রোজেন হরমোনের প্রভাবে এই রোগে আক্রান্ত হতে দেখা যায়। যারা দীর্ঘ সময় ধরে অতিরিক্ত এস্ট্রোজেন হরমোনের সংস্পর্শে থাকেন, মাসিক বন্ধ হওয়ার পর মহিলাদের মধ্যে যারা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করেন, তাদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
৫. লিঙ্গভেদে ক্যান্সারে আক্রান্তের ঝুঁকি বাড়ে। একজন নারী পুরুষের তুলনায় অনেক বেশি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকিতে থাকেন।
৬. বয়স বাড়ার সাথে স্তন ক্যান্সারের আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ে বিশেষ করে ৫০ বছর বয়সের পর এই ঝুঁকি অনেক বেশি বেড়ে যায়, যা পরিবর্তন যোগ্য নয় মোটেও।
পরিবর্তনযোগ্য কারণ সমুহ :
১. অনেক বেশি বয়স পর্যন্ত বিয়ে না করা এবং ৩০ বছর বয়সের পর নারীদের প্রথম সন্তানের মা হওয়া কিংবা সন্তান না নেয়া মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়।
২. সন্তানকে নিয়মিত বুকের দুধ না খাওয়ানোর অভ্যাসের কারণে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।
৩. যারা অতিরিক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খান এবং খাদ্যতালিকায় একেবারেই শাক সবজি রাখেন না তাদের ক্ষেত্রে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের ঝুঁকি অনেক বেশি। এছাড়াও দীর্ঘসময় টিনজাত খাবার খাওয়া, প্রিজারভড খাবার, কৃত্তিম মিষ্টি ও রঙযুক্ত খাবার খাওয়া নারী ও পুরুষের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের জন্য দায়ী।
৪. অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া এবং শারীরিক পরিশ্রম একেবারেই না করা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
৫. দীর্ঘদিন এয়ার ফ্রেশনার, কীটনাশক, অতিরিক্ত কেমিক্যালযুক্ত কসমেটিক, ডিওডোরেন্ট এবং তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে থাকলে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সম্ভাবনা বাড়ে।
স্তন ক্যান্সারের সতর্কতাসূচক লক্ষণঃ
১। স্তন কিংবা বুকে ব্যথাঃ স্তন কিংবা বুকে ব্যথা, ধড়ফড় করা, টনটন করা অথবা ধারালো ছুরির আঘাতের মতো ব্যথা কিংবা অস্বস্তি কোন ভালো লক্ষণ নয়। ব্রেস্ট ক্যান্সার থেকে বেঁচে যাওয়া এক রোগী ডাক্তারের কাছে বর্ণনা করেন, তীব্র ব্যথা যা আসে এবং চলে যায়। আরেকজন এই ব্যথাকে মৃদু বৈদ্যুতিক শকের সাথে তুলনা করেছেন। তিনি বলেন, এটা আমার বাম স্তন থেকে প্রবাহিত হয়ে ডান স্তনবৃন্তে যাচ্ছে বলে মনে হয়।
স্তন টিউমার বিভিন্ন ফর্মে হতে পারে। একক পিন্ড অথবা বিক্ষিপ্ত বীজের মতো নির্দিষ্ট আকারহীন একাধিক কর্ষিকার মতো স্তন টিস্যুর মধ্যে ছড়িয়ে থাকতে পারে। এগুলি স্তনবৃন্তের পিছনে কিংবা দুগ্ধ নালীতে থাকতে পারে। এই টিউমারের বৃদ্ধির ফলে ব্যথা অথবা অস্বস্তিবোধ হয়। অনেক সময় স্তন টিউমার চাকা কিংবা মাংসপিন্ডের মতো অনুভূত হয় না। এক্ষেত্রে শতকরা ৩০ ভাগের বেলায় একে সনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়।
এসব ক্ষেত্রে কখন, কিভাবে এবং কোথায় ব্যথা হয় তার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। ডাক্তারকে এবিষয়ে বিস্তারিত বলতে হবে। ডাক্তার যদি অ্যান্টিবায়োটিক দেয় তাহলে কোর্স পুরো শেষ করবেন। তারপরও ব্যথা না সারলে অন্যান্য টেস্ট করার জন্য তাকে অনুরোধ করুন।
২। স্তনে চুলকানিঃ এই লক্ষণ প্রদাহজনক স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ বলে বিবেচনা করা হয়। এটা আশ্চর্যের বিষয় যে, অনেক নারী এধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হবার পর, এটাকে চর্মরোগ বিবেচনা করে মাসের পর মাস চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন।
স্তনে ফুসকুড়ি হলে তীব্র চুলকানি থেকে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এক্ষেত্রে মলম ব্যবহার করেও কোন উপকার পাওয়া যায় না। এধরনের সমস্যায় স্তনের চামড়া আঁশযুক্ত হয়ে যায়। স্তনে টোল খায় অথবা খাঁজের সৃষ্টি হয়। স্তন কুঁচকে যায়।
এক্ষেত্রে দ্রুত বর্ধমান ক্যান্সার টিস্যুর কারণে স্তন টিস্যু দিয়ে লসিকা নালীর স্বাভাবিক প্রবাহ ব্যাহত হয়। অন্য যেকোন স্তন ক্যান্সারের তুলনায় প্রদাহজনক স্তন ক্যান্সার অনেক বেশি ভয়াবহ।
৩। পিঠের উপরের দিকে, কাঁধে কিংবা ঘাড়ে ব্যথাঃ স্তন ক্যান্সারের অনেক রোগীর ক্ষেত্রে বুকে ব্যথা না করে কাঁধে কিংবা ঘাড়ে, পিঠে ব্যথা করে। এ কারণে অনেকে মেরুদন্ড বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে স্বাভাবিকভাবেই ক্রনিক পিঠে ব্যথার চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। যা ফিজিক্যাল থেরাপি দিয়েও ঠিক করা যায় না।
অনেক স্তন টিউমার গ্রন্থিময় টিস্যুতে বিকশিত হয়, যা বুকের গভীরে প্রসারিত হয়। এই টিউমার বড় হয়ে পাঁজরে কিংবা মেরুদন্ডে চাপের সৃষ্টি করে। ফলে এসব এলাকায় ব্যথার উদ্ভব হয়। এ থেকে পরবর্তীকালে দ্বিতীয় পর্যায়ের হাড়ের ক্যান্সার হতে পারে।
এক্ষেত্রে পিঠের ব্যথা ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করুন। চিকিৎসায় ব্যথা ঠিক না হলে পিঠের স্ক্যান করান।
৪। স্তনের আকার পরিবর্তনঃ স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক সনাক্তকরণের ক্ষেত্রে জনপ্রিয় ধারণা হলো স্তনে চাকার উপস্থিতি। তবে ক্যালিফোর্নিয়ার স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ৪২ বছর বয়সি একজন নারী বলেন, চাকার পরিবর্তে আমার একটি স্তন ডিম্বাকৃতির মতো হয়ে গিয়েছিলো।
এই ধরণের সমস্যা অনুভব করার চেয়ে আয়নার সামনে বেশি দৃশ্যমান হয়। এক্ষেত্রে ব্রা খুলে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভালভাবে আপনার স্তন পর্যবেক্ষণ করুন।
৫। স্তনবৃন্তে পরিবর্তন কিংবা সংবেদনশীলতাঃ সাধারণত টিউমার স্তনবৃন্তের পিছনে অবস্থান করে। ফলে এর আকারের পরিবর্তন ঘটে। পুরুষের স্তন ক্যান্সারের ক্ষেত্রে প্রায় সময় স্তনবৃন্তের পরিবর্তন দেখা যায়। স্তনবৃন্তের আশপাশের জায়গা সংকুচিত হয়ে যায়। নিপল এ অসামঞ্জস্যতা দেখা যায় ও মোটা হয়ে যায়, স্তনের চামড়ায় ছোট ছোট ছিদ্রের মত দেখা যায়।স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তরা প্রায় সময় লক্ষ করেন তাদের স্তনবৃন্তের সংবেদনশীলতা হ্রাস পাচ্ছে। নিপল থেকে রক্ত, পুঁজ অথবা পানি জাতীয় পদার্থ বের হয়ে আসছে।
আমেরিকান সোসাইটি অব ব্রেস্ট সার্জন সম্প্রতি জানিয়েছে, পুরুষের স্তন ক্যান্সার নারীর তুলনায় দেরীতে সনাক্ত করা যায় এবং এটা মারাত্মক হয়ে থাকে।
৬। বগলে পিন্ড কিংবা ফোলাভাবঃ বগলে কোন ব্যথা হলে আঙ্গুল দিয়ে সতর্কতার সাথে পরীক্ষা করে দেখুন। স্তন থেকে নির্গত লসিকা তরলের মাধ্যমে বগলের লসিকা গ্রন্থিতে প্রথমে স্তন ক্যান্সারের বিস্তৃতি ঘটে। ঠান্ডা, ফ্লু অথবা সংক্রমণের কারণে লসিকা গ্রন্থি ফুলে গেলে অপেক্ষা করুন সেরে যাওয়া পর্যন্ত। যদি এক সপ্তাহের পরও বগলের ফোলা না কমে তাহলে ডাক্তার কে দেখাতে পারেন।
৭। লাল, ফোলা স্তনঃ স্তনে আঘাত লাগলে স্বাভাবিকভাবেই এটি ফুলে যাবে।কিন্ত স্তন যদি গরম অনুভূত হয় কিংবা লালচে রঙ এর হয়ে যায় তাহলে স্তনগ্রন্থির স্ফীতি অথবা প্রদাহ বলে সন্দেহ করতে পারেন। এটা প্রদাহজনক স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে। এছাড়া স্তনের টিউমারের কারণে স্তন ফুলে যেতে পারে। এক্ষেত্রে আপনি নিজেই ফোলাভাব পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।
রোগ নির্ণয় :
রোগ নির্ণয়ের মূল পরীক্ষা হচ্ছে, অনুভূত চাকা বা দলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে হিস্টো বা সাইটোপ্যাথলজি পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষের উপস্থিতি শনাক্তকরণ। নমুনা সংগ্রহের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। বিভিন্ন পদ্ধতির মধ্যে সূক্ষ্ম সুই ফুটিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা এখন বিশ্বজুড়ে আধুনিক পদ্ধতি হিসেবে প্রচলিত আছে। এই পরীক্ষা পদ্ধতিকে ইংরেজিতে বলা হয় FNAC. এই FNAC পরীক্ষা নির্ভুল করার জন্য নমুনা সংগ্রহ করার সময় আল্ট্রাসনোগ্রাফির সহায়তা নেয়া যেতে পারে। FNAC পরীক্ষায় শত ভাগ নিশ্চিত না হলে পরিকল্পিত অস্ত্রোপচারের শুরুতে Frozen Section হিস্টো প্যাথলজি করে নিশ্চিত হয়ে যথাযথ অস্ত্রোপচার করা যায়। কাজেই সনাতন পদ্ধতিতে কেটে নমুনা সংগ্রহ করা, অর্থাৎ Open Biops- করা এখনকার দিনে আর প্রয়োজন হয় না। নমুনা সংগ্রহের আগে ক্ষেত্রবিশেষে স্তনের বিশেষ ধরনের X-ray ম্যামোগ্রাফি কিংবা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে চাকা বা দলার কিছু বৈশিষ্ট্য যাচাই করা যেতে পারে, যা রোগ নির্ণয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করে মাত্র। কাজেই সুনিশ্চিতভাবে চাকা বা দলা অনুভব করা গেলে প্রথম পরীক্ষা হিসেবে সুই ফুটিয়ে নমুনা সংগ্রহ করাই যৌক্তিক বা বাস্তবভিত্তিক পরীক্ষা। স্তন সমস্যা হলে ঢালাওভাবে গধসড়মৎধঢ়যু করা আদৌ যৌক্তিক নয়, বরং তাতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্তনে অপ্রয়োজনীয় রেডিয়েশন প্রবাহের ঘটনা ঘটে, যা পরবর্তীকালে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়। আর ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ বছর বয়সের নিচের মহিলাদের Mammography করাই উচিত নয়। তাই স্তনের ইমেজিং বা ছবির মাধ্যমে নিরীক্ষণ দরকার হলে হাই রেজুলেশন আল্ট্রাসনোগ্রাফি করা উত্তম ও নিরাপদ। তা ছাড়া ভালো আল্ট্রাসনোগ্রাফি মেমোগ্রাফি থেকে বেশি তথ্য প্রদানে সক্ষম। তাই আমি ব্যক্তিগতভাবে আল্ট্রাসনোগ্রাফিকেই প্রথম বিবেচ্য ইমেজিং পরীক্ষা হিসেবে অনুমোদন করি, যদি ইমেজিংয়ের নিতান্তই প্রয়োজন হয়। রোগ নির্ণয়ের পর অনেক পরীক্ষা করা হয়, তা মূলত অসুখের পর্যায় নির্ণয় ও সঠিক চিকিৎসার যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ করার জন্য। অপারেশনের পর টিউমার নমুনা থেকে আরো অনেক পরীক্ষা করা হয়, যেমন- বিভিন্ন ধরনের হরমোন রিসেপ্টর পরীক্ষা, যেগুলো ক্যান্সারের জৈবিক চরিত্র বিশ্লেষণে সহায়ক এবং হরমোন চিকিৎসার যৌক্তিকতা ও ফলাফলপ্রাপ্তির ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হিসেবে কাজ করে।
চিকিৎসা :
সুনিশ্চিতভাবে স্তন ক্যান্সার নির্ণয় হলে সঠিক চিকিৎসা নির্ভর করে কিছু বিষয়ের ওপর। বিষয়গুলো হলো- রোগীর বয়স, ক্যান্সারের আকার-আকৃতি ও অবস্থান, ক্যান্সারের পর্যায় ও বিস্তৃতি, বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসাপ্রাপ্যতার সুযোগ এবং সর্বোপরি রোগীর ব্যক্তিগত ইচ্ছা ও পছন্দ ইত্যাদি। আধুনিক বিশ্বে স্তন ক্যান্সার চিকিৎসার পরিকল্পনা করা হয় সম্মিলিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এবং সে সিদ্ধান্ত গ্রহণে অংশগ্রহণ করেন ব্রেস্ট সার্জন, অনকোলজিস্ট, রেডিও থেরাপিস্ট, প্লাস্টিক সার্জন ও ক্যান্সার আক্রান্ত রোগী নিজে। সব বিষয় বিবেচনা করে একটি সুষ্ঠু চিকিৎসা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, যা সমন্বিতভাবে কিংবা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হয়। চিকিৎসার বিভিন্ন পন্থা হলো অস্ত্রোপচার, ক্যামোথেরাপি, রেডিওথেরাপি, হরমোনথেরাপি। প্রাথমিক পর্যায়, অর্থাৎ স্তন ক্যান্সার শুধু স্তন কিংবা স্তনসংলগ্ন বগলের লসিকাগ্রন্থির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে চিকিৎসার প্রথম ও মৌলিক ধাপ হিসেবে অস্ত্রোপচার সর্বজনস্বীকৃত। এই অস্ত্রোপচার স্তন সংরক্ষণ করে শুধু টিউমার অপসারণ ও বগলের লসিকাগ্রন্থির নমুনা সংগ্রহ কিংবা টিউমারসহ সমস্ত স্তন কর্তন এবং সেই সাথে বগলের লসিকাগ্রন্থির নমুনা সংগ্রহ বা লসিকাগ্রন্থিগুলোর অপসারণ হতে পারে। কার বেলায় কোন ধরনের অস্ত্রোপচার প্রযোজ্য তা নির্ণিত হয় ক্যান্সারের বিভিন্ন ধরনের বৈশিষ্ট্য ও রোগীর ইচ্ছার ওপর। তারপর বিস্তারিত তথ্যের ভিত্তিতে সম্পূরক চিকিৎসা হিসেবে ক্যামোথেরাপি, রেডিওথেরাপি কিংবা হরমোনথেরাপি দিতে হবে। যদি স্তন ক্যান্সার স্থানীয়ভাবে অগ্রবর্তী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়, সে ক্ষেত্রে প্রথমেই ক্যামো (নিওঅ্যাডজুভেন্ট) কিংবা রেডিওথেরাপি প্রয়োগ করে টিউমারের বিস্তৃতি নিম্নগামী (ডউন স্টেজিং) করে তার অস্ত্রোপচার করা যেতে পারে। অস্ত্রোপচারের পর অবশ্যই সম্পূরক চিকিৎসা হিসেবে ক্যামো, রেডিও বা হরমোনথেরাপি দিতে হবে। স্তন ক্যান্সার নির্ণয়ের পর্যায়ে যদি দেখা যায়, রোগ স্তনের বাইরে অনেক অংশেই বিস্তার লাভ করেছে, সে ক্ষেত্রে তা আর নিরাময়যোগ্য পর্যায় হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসার নীতিমালা হলো রোগীর বিভিন্ন ধরনের কষ্টদায়ক উপসর্গ বা উপসর্গগুলোর উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা প্রদান করে কষ্ট লাঘব করা। এ ক্ষেত্রে কষ্ট লাঘবের জন্য ক্যামো বা রেডিওথেরাপি, ব্যথানাশক ও অন্যান্য অনুষঙ্গিক চিকিৎসা প্রদান করাই বাঞ্ছনীয়। স্তন ক্যান্সারের এমন অগ্রবর্তী পর্যায়ে রোগ নিরাময়ের চিন্তা করা আদৌ সমীচীন নয়।
প্রতিকার :
স্তন ক্যান্সার প্রতিকার বা প্রতিরোধ করতে হলে আগে উল্লিখিত কারণগুলোর মধ্যে যেগুলো পরিহার বা পরিত্যাগ করা যায় তা পালন করা। তবে সত্যিকার অর্থে প্রাথমিক প্রতিকার বা প্রতিরোধ করা হয়তো সম্ভব নয়। তাই প্রাথমিক প্রতিকারের চেয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয়কেই মূলত প্রাধান্য দেয়া উচিত। যারা স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি গোত্রের পর্যায়ে পড়েন, তাদের স্বাস্থ্য সচেতনতা ও নিয়মিতভাবে যথাযথ পদ্ধতিতে নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা উচিত এবং সে পরীক্ষায় সন্দেহজনক কিছু মনে হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।