ডেস্ক রিপোর্ট : বুক না কেটে বাংলাদেশে দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে দুই রোগীর এওটিক ভালভ (Aortic Valve) প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। গত ২৫ ও ২৬ অক্টোবর ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকার, সহযোগী অধ্যাপক কার্ডিওলজির নেতৃত্বে একটি টিম জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালে ৬৫ বছর বয়সী একজন পুরুষ ও ৮০ বছর বয়সী এক মহিলার শরীরে TAVR পদ্ধতিতে সাফল্যজনকভাবে এওটিক ভালভ প্রতিস্থাপন করেন। বর্তমানে তারা দুজনই সুস্থ আছেন |

ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকার একজন ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট। এর আগে তিনি ২০১৯ সালের ৫ই জানুয়ারি সরকারি হসপিটালে প্রথমবারের মতো অপেক্ষাকৃত কম খরচে এই চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করেন এবং তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি এই ধরনের অপারেশন করেছেন |

ডা. প্রদীপ কুমার কর্মকার জানান, আমরা জানি হৃদপিণ্ড মানবদেহে রক্ত সঞ্চালন করে, এই রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়ায় হৃদপিন্ডের বিভিন্ন ধরনের ভালভ থাকে, এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভালভ হল এওটিক ভালভ (Aortic Valve), যেটি হৃদপিণ্ড হতে শরীরে রক্ত সঞ্চালন করে। এই ভালভ সরু হয়ে গেলে হৃদপিণ্ড থেকে রক্ত সঞ্চালন করতে পারে না এবং রোগীর শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যথা ও অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। এইসব উপসর্গ দেখা দিলে দুই বছরের মধ্যে বেশিরভাগ রোগী মারা যায় এবং সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এওটিক ভালভ সরু হয়ে যাওয়া রোগীরা ফুসফুস ক্যান্সার রোগীদের চাইতো বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এবং কম দিন বাঁচে । তিনি আরও জানান, এই রোগের দুই ধরণের চিকিৎসা আছে। একটি হলো বুকে কেটে এওটিক ভালভ প্রতিস্থাপন করা।

এই পদ্ধতিতে রোগীকে সম্পূর্ণ অজ্ঞান করতে হয়, বুকের হাড় কাটতে হয় এবং প্রক্রিয়াটি ঝুঁকিপূর্ণ ও পরিপূর্ণ সুস্থ হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে যায়। আরেকটি আধুনিক পদ্ধতি, তার চিকিৎসা হলো বুক না কেটে , অজ্ঞান না করে , কম ঝুঁকিপূর্ণ এবং পায়ের কুচকি দিয়ে এওটিক ভালভ প্রতিস্থাপন করা। যাকে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা টেভার (TAVR)- ট্রান্স ক্যাথেটার এওটিক ভালভ রিপ্লেসমেনট (Transcatheter Aortic Valve Replacement) বলেন।

ডা. প্রদীপ জানান, এ পদ্ধতিতে অপারেশনের পরে রোগী হাসপাতাল থেকে তিনদিনের মধ্যে বাসায় চলে যেতে পারে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে কাজে যোগ দিতে পারে। তাই সারা বিশ্বে এই চিকিৎসা পদ্ধতি খুব দ্রুত জনপ্রিয়ত হচ্ছে এবং জনপ্রিয় চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে | এই চিকিৎসা পদ্ধতি ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিতে বাংলাদেশের জন্য একটি মাইলফলক।

সরকারিভাবে আরো পৃষ্ঠপোষকতা পেলে পরবর্তীতে রোগীরা অপেক্ষাকৃত আরো কম খরচে এই জটিল চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করতে পারবে বলে মনে করেন ডাক্তার প্রদীপ কুমার কর্মকার। তিনি জানান, ইতিপূর্বে এই ধরনের রোগীরা দেশে এই চিকিৎসা পদ্ধতি না থাকায় বিদেশে উচ্চ মূল্যে চিকিৎসা গ্রহণ করতে হতো , আমরা আশা করছি এই চিকিৎসা পদ্ধতি পরিপূর্ণভাবে দেশে চালু হলে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে।