আমি অবিবাহিত আমার বয়স ১৯। ৪মাস ধরে আমার পিরিয়ড হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আমার করণীয় কী? বর্তমানে আমাদের জীবন শৈলী পরিবর্তনের কারণে মেয়েদের এই সমস্যাটি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মা বোনদের মাসিক চক্র প্রকৃতির এক বিচিত্র নিয়ম। বয়সন্ধিকালে , যৌবন আরম্ভে সুস্থ ও স্বাভাবিক মেয়েদের জরায়ু হতে প্রতি ২৮ দিন অন্তর একবার করে শোণিতস্রাব বা রজঃস্রাব হয়। সচরাচর মেয়েদের ১০-১২ বছর বয়স পর হতে ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত স্বভাবতঃই প্রতি মাসে তিন থেকে পাঁচ দিন করে রজঃ নিঃসৃত হয়, একেই ঋতুস্রাব বলে এবং সেই মেয়েদের রজঃ স্বলা বলা হয়।
বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া, সামাজিক ও পারিবারিক এবং বিশেষ কিছু খাদ্য ও যৌন হরমোনের প্রভাবে অতি অল্প বয়সে মেয়েরা রজস্বলা হচ্ছে এমনকি ছোট্ট ছোট্ট মেয়েরা বাচ্চার জন্ম দিচ্ছে যা খুবই চিন্তার বিষয়।
মেয়েদের মাসিকের সময় বিশেষ কিছু নিয়ম পালন করা উচিত। অন্যথায় রজঃরোধ ,শারীরিক এবং মানসিক নানা ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে দেখা যায়। এর ফলে অনিয়মিত রজঃস্রাব, কখনো দুই তিন মাস বা ছয় মাস অন্তর আবার কখনো মাসে দু তিনবার রজঃস্বাব দেখা দেয়।
এর মূল কারণ হলো —
রজস্রাব কালে কোন নিয়ম-শৃঙ্খলা না মানা, বাসে ট্রেনে, ঝুলে ঝুলে যাতায়াত করা, অতিরিক্ত শারীরিক ও মানসিক পরিশ্রম বা নির্যাতন করা।
ঠান্ডা লাগানো বা ঠান্ডা জলে স্নান করা।
অতিরিক্ত আইসক্রিম, চকলেট বা জাঙ্ক ফুড যেমন পিজ্জা, বার্গার আদি খাওয়া ।
অতিরিক্ত রাত জেগে সোশ্যাল মিডিয়া বা মোবাইল ব্যাবহার করা।
রাতজেগে পর্নোগ্রাফি বা ব্লুফিল্ম আদি দেখা, যার ফলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফল অনিয়মিত যৌন হরমোনের নিঃসরণ।
রজস্রাব কালে তিন থেকে পাঁচ দিন শারীরিক, মানসিক ভাবে প্রস্তুত থাকা এবং নিজেকে আনন্দে ও সুস্থ পরিবেশে জীবন যাপন করা বিশেষ প্রয়োজন।
একমাত্র গর্ভধারণ ব্যতীত প্রতি মাসে ২৮ দিন অন্তর ঋতুস্রাব হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উপরোক্ত কারণে অনিমত রজঃস্রাব হলে অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক বা স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। তা না হলে শারীরিক ও মানসিক বিকৃতি দেখা দিতে পারে। দীর্ঘদিন অন্তর রজঃস্বাব হওয়ার ফলে অনেক সময় গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়।
তাছাড়া ধাতু গত কারণ ,পুষ্টিকর খাদ্যের অভাব, অতিরিক্ত শ্বেতস্রাব ও পুরাতন জটিল রোগের সমস্যা থাকলে ঋতুস্রাব অনিয়মিত হয়ে থাকে।
নিয়ম ও পথ্য:—ঋতুর প্রথম তিন দিন অগ্নি সেবা অর্থাৎ রন্ধনাদি মেয়েদের পক্ষে বিশেষভাবে নিষিদ্ধ। আগের দিনে মাসিক চলাকালীন মেয়েদের গৃহকার্য, রান্না বারা ,এমনকি খেলাধুলা সবকিছু বর্জিত ছিল ।
বিশেষতঃ ভাড়ি ভাতের হাড়ি ,করাই ,বড় বালতি ভর্তি জল টানা,অতিরিক্ত লাফালাফি করলে এই সময় জরায়ু রক্তে পরিপূর্ণ থাকে এবং জরায়ু স্থান চ্যুতির সম্ভাবনা ঘটে।
এই তিন দিন স্বামী বা পুত্রকন্যাদি সহ শয়ন করলে তাদের দেহে রোগবিষ সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই কারণেই হিন্দু সমাজে ঋতুর তিনদিন পৃথক শয়নের নির্দেশ আছে। বর্তমানে পাশ্চাত্য সমাজের অনুকরণে আমাদের দেশে মেয়েদের মধ্যে এসব নিয়ম প্রথার প্রতি অবহেলা দেখা যায় এর ফলস্বরূপ নানা রকম যৌন সমস্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে । গ্রীষ্ম প্রধান এশিয়া মহাদেশ বা ভারত উপমহাদেশের মেয়েদের এই নিয়ম পালন করা বিশেষ প্রয়োজন। গ্রামের মেয়েরা মাসিক ঋতুর সময় সমাজের প্রাচীন প্রথা এখনো মেনে চলে তাই তাদের যৌন সমস্যা অনেক কম।
ৠতুকালে অতিরিক্ত ঠান্ডা লাগানো ,স্যাত স্যাতে বা ভিজে মেঝেতে শয়ন করা এবং ভাড়ি কাজ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
আজকাল গ্রামের মেয়েরাও নেপকিন কিংবা প্যাড ব্যবহার করে থাকে। পুরনো নোংরা কাপড় ব্যবহার করলে অনেক সময় নানা রকম ইনফেকশনের সম্ভাবনা থাকে। প্রয়োজনে সাবান দিয়ে ভালো করে ধুয়ে,রোদে শুকিয়ে কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে। অনেক মেয়েদের ৠতুকালে অতিরিক্ত তলপেটে ব্যথা এবং নানা রকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়।
গরম জল বা গরম পানীয় ,দুধ,চা পান করলে এবংকাঁচের বোতলে বা হটওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করলে অনেকটা আরাম বোধ হয়। অতিরিক্ত ঠান্ডা জল আইসক্রিম এবং জাঙ্ক ফুড ব্যবহার করা উচিত নয়।
নিয়মিত যোগভ্যাস করলে ঋতুস্রাবের সময় পেটের অসহ্য যন্ত্রণা লাঘব হবে এবং প্রতিমাসে নিয়মিত স্রাব হবে। তাছাড়া হোমিওপ্যাথিক ওষুধ ধর্য্য সহকারে সেবন করলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।