ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
১১ মার্চ বিশ্ব কিডনি দিবস। সারা বিশ্বে কিডনি রোগের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এই দিনটি পালন করা হয়। প্রতিবছরের মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের বৃহস্পতিবার দিবসটি পালিত হয়।
তারই ধারাবাহিকতায় এবার পালিত হবে বিশ্ব কিডনি দিবস-২০২১বর্তমান বিশ্বে অসংক্রামক ব্যাধিগুলোর মধ্যে কিডনি রোগ অন্যতম। সারা বিশ্বে বেড়েই চলেছে কিডনি রোগীর সংখ্যা। পুরুষের তুলনা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে নারী।বাংলাদেশে দিন দিন কিডনি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এক জন কিডনি রোগী তার শরীরের দু’টি কিডনিই যখন ৬০ থেকে ৭০ ভাগ বিকল হয়ে পড়ে তখনই তিনি এ রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন। এ কারণে রোগ ধরা পরার পর রোগী চিকিৎসার জন্য খুব কম সময়ই পান। দীর্ঘমেয়াদি ও বহুমূল্যের ডায়ালিসিস করানোর মাধ্যমে কিডনিকে সচল রাখা যায়। তবে এর খরচ ব্যয়বহুল। ডায়ালিসিস এবং প্রতিস্থাপন ব্যয়বহুল হওয়ায় বেশির ভাগ রোগীর পক্ষেই এর চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব হয় না। এ ছাড়া কিডনি পাওয়া সাপেক্ষে কিডনি প্রতিস্থাপনের খরচ কমবেশি হলেও ৫-৭ লাখ টাকা এবং পাশাপাশি সারা জীবন ওষুধের খরচ চালাতে হয়।বিশ্বব্যাপী কিডনি রোগীর সংখ্যা এবং এর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা সঠিক ভাবে গণনা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। কারণ এক জন রোগী হৃদরোগে মারা গেলে তাকে হৃদরোগী ধরা হয়, কিডনির জন্য হৃদরোগের কারণ ধরা পড়ে না। অনেকেরই কিডনি ধীরে ধীরে বিকল হয়ে পড়ে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনও উপসর্গ থাকে না। ফলে রোগীরা বুঝতে পারে না এ রকম একটি ভয়াবহ রোগ তার শরীরে বাসা বেঁধেছে।যাঁদের ডায়াবেটিস আছে অথবা যাঁদের পরিবারে ডায়াবেটিস আছে, যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ আছে বা পরিবারের কারও কিডনি সমস্যা আছে, তাঁদের বছরে অন্তত এক বার কিডনি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কিডনি অকার্যকর হওয়ার প্রধান কারণগুলো হলো ডায়াবেটিস, নেফ্রাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, কিডনিতে জীবাণুর আক্রমণ, সিসটিক ডিজিজিস, বিশৃঙ্খল জীবনযাপন। আর ভেজাল ও কৃত্রিম খাবারের এ যুগে বড় একটি সমস্যা হল কিডনিতে পাথর। রক্তের ইউরিয়া ক্রিয়েটিনিন লেভেল পরীক্ষা, আলট্রাসনোগ্রাম ইত্যাদির মাধ্যমে কিডনি সমস্যা পরীক্ষা করা যায়। রোগ ধরা পড়লে নিয়ম অনুযায়ী চলাফেরা ও খাওয়া-দাওয়া করলে সুস্থ থাকা যায়। দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা, নিয়মিত ব্যায়াম ও শারীরিক পরিশ্রম করার মাধ্যমে কিডনি রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। মনে রাখতে হবে কিডনিকে সুস্থ রাখতে হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
দিবসটি উপলক্ষে সারা বিশ্বের পাশাপাশি আমাদের দেশেও বিভিন্ন সামাজিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। আজ বিশ্ব কিডনি দিবস নিয়ে বিশেষ কলাম লিখেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট হোমিও গবেষক ডা.এম এম মাজেদ তাঁর কলামে লিখেন… কিডনি রোগের প্রধান কারণ ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ ১০ বছর পূর্বে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর হার ছিল ৫-৬ ভাগ; বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১-১২ ভাগ। উচ্চ রক্তচাপের হার ছিল ১০ ভাগ এবং এখন তা ২০-২৫ ভাগ। বর্ধিত হারে এই দুই রোগের কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর কিডনি রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কেননা কিডনি রোগের প্রধান কারণ হচ্ছে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৪০ হাজার রোগীর কিডনি বিকল হয়। এর মাত্র ২০ ভাগ রোগীর চিকিৎসার সুযোগ রয়েছে। বাকি ৮০ ভাগ রোগী চিকিৎসার অভাবেই মারা যায়। বছরে মারা যাচ্ছে প্রায় ৪০ হাজার মানুষ।মূএ যন্ত্রের এবং মূএের যে কোন পীড়া সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে হলেই প্রথমে যন্ত্রটি সম্পর্কে আমাদের একটি সঠিক ধারণা থাকতে হবে। মূএ যন্ত্রটিকে প্রধান চারটি ভাগে ভাগে ভাগ করা যায়. যথা ১.দুইটি কিডনী যা মূএ নিঃসৃত করে থাকে ২.দুটি মূএবাহী নালী বা ইউরেটারস যা প্রসাবকে কিডনী থেকে নীচে নিয়ে যায়।৩.একটি মূএস্থলী বা ইউরিনারী ব্লাডার যেখানে মূএ সঞ্চিত থাকে ৪.মূএনালী বা ইউরেথ্রা যা দিয়ে প্রসাব বেরিয়ে আসে। পুরুষদের ক্ষেএে ইহা এটি যোনি বহিঃইন্দ্রীয় এবং মেয়েদের ক্ষেএে একটি ছিদ্র। মূএযন্ত্রের অংশগুলো ১.লেফট্ কিডনী২.রাইট কিডনি,৩.এয়োর্টা,৪.ইনফিরিয়ার ভেনা কেভা, ৫.লেফট্ ইউরেটার, ৬.রাইট ইউরেটার, ৭.ইউরিনারী ব্লাডার ৮.ইউরেথ্রা,উল্লেখযোগ্য, ডান কিডনি বাঁ দিকের কিডনী থেকে একটু নীচে থাকে তার কারণ ডান দিকের কিডনীর উপর লিভার থাকে। প্রতিটি কিডনি লম্বায় প্রায় ৪/৫ ইঞ্চি এবং প্রান্তেই আড়াই ইঞ্চি। একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের কিডনির প্রতিটির ওজন হয় প্রায় ১৪০ গ্রাম। কিডনী আকৃতি অনেকটা বরবটি ভেতরের দানার মতো । ডানদিকের কিডনীর সামনে থাকে লিভার বৃহৎ অন্ত্র, ডিওডেনাম এবং ক্ষুদ্রান্ত্র।বাম দিকের কিডনি সামনে থাকে প্লীহা, প্যানক্রিয়াস,পাকস্থলীর অংশ,ক্ষুদ্রান্ত্র এবং বৃহৎ অন্ত্র। সম্প্রতি বাংলাদেশে ২ কোটিরও বেশি মানুষ কোনো না কোনো কিডনি রোগে আক্রান্ত। প্রায় ৭৫ শতাংশ কিডনি বিকল হওয়ার পর রোগীরা চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন। প্রতি বছর কিডনি রোগে আক্রান্ত রোগীর মধ্যে মারা যাচ্ছেন ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষ। অথচ গণসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ৬০ শতাংশ কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা হোমিওপ্যাথিতে সম্ভব। বাংলাদেশে কিডনী নষ্ট হওয়াসহ অন্যান্য মারাত্মক কিডনী রোগ বৃদ্ধির যে পিলে চমকানো খবর বেরিয়েছে, তাতে যে-কোন সচেতন ব্যক্তিমাত্র মর্মাহত হবেন। পরিসংখ্যান মতে, বাংলাদেশে প্রায় ১৭ কোটি মানুষের মধ্যে প্রায় দুই কোটি লোক কিডনী রোগে আক্রান্ত। এদের মধ্যে দীঘর্স্থায়ী জটিল কিডনী রোগে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় এক কোটি আশি লক্ষ। এই রোগে প্রতি ঘণ্টায় মৃত্যুবরণ করছে ৫ জন। যেহেতু কিডনী ডায়ালাইসিস এবং নতুন কিডনী লাগানোর মতো চিকিৎসায় লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়, সেহেতু বেশীর ভাগ রোগীই বলতে গেলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করে। তাছাড়া দীঘর্স্থায়ী কিডনী রোগীদের বেশীর ভাগই হার্টএটাকে মারা যায়। কারণ কিডনী রোগ, হাটর্এটাক এবং ডায়াবেটিস একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। রিপোর্টে বলা হয়েছে যে, এসব প্রাণনাশী কিডনী রোগের সংখ্যা কল্পনাতীত হারে বৃদ্ধির মুল কারণ হলো ভেজাল খাবার ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ এই তিনটি কারণকে এলোপ্যাথিক কিডনী বিশেষজ্ঞরা প্রকৃত কারণ বললেও আসলে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বরং বেশী বেশী এলোপ্যাথিক ঔষধ খাওয়াকেই কিডনী নষ্ট হওয়ার মূল কারণ বলতে হবে। কেননা আমরা অনেকেই জানি না যে, আমরা যতো ঔষধ খাই তার অধিকাংশই রক্তে প্রবেশ করে তাদের কাজ-কর্ম পরিচালনা করে থাকে। পরবর্তীতে তাদেরকে রক্ত থেকে সংগ্রহ করে ছেকে ছেকে শরীর থেকে বের করার দ্বায়িত্ব পালন করতে হয় এই কিডনী দুটিকে। ফলে আমরা যতো বেশী ঔষধ খাই, আমাদের কিডনীকে তত বেশী পরিশ্রম করতে হয় এবং ফলস্রুতিতে কিডনী দুটি তত বেশী দুর্বল-ক্লান্ত-শ্রান্ত-অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাছাড়া বেশী বেশী ঔষধ খেলে তাদেরকে শরীর থেকে বের করে দেওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হয়।কিন্তু আমাদের অনেকেই বেশী বেশী পানি খাওয়ার বিষয়টি মেনে চলি না। কিডনী ড্যামেজ হওয়ার মূল কারণ হিসেবে যে রোগকে বিবেচনা করা হয় তার নাম নেফ্রাইটিস এবং নেফ্রাইটিস হওয়ার মুল কারণও এই ঔষধ। কিডনী যদিও নিয়মিত আমাদের খাওয়া সকল ঔষধসমুহ নিষ্কাশন করে কিন্তু তার মাঝেও ঔষধের দুয়েকটা কণা কিডনীর অজান্তেই কিডনীর গায়ে লেগে থাকে। পরবর্তীতে সেই কণাটির ওপর নানারকমের জীবাণু, ক্যামিকেল, মৃতকোষ ইত্যাদি জমতে জমতে সেটির গঠন বদলে যায়। ফলে কিডনী আর সেই কণাটিকে চিনতে পারে না। এক সময় কণাটি নিজে কিডনীর একটি অংশ হওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু কিডনী সেই কণাটিকে গ্রহন করতে রাজী হয় না। শেষ পরযন্ত কিডনীর ভিতরে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় যাকে ডাক্তারী ভাষায় বলে অটোইমিউন রিয়েকশান এভাবে কিডনীর এক অংশ অন্য অংশকে চিনতে না পেরে শত্রু হিসেবে গণ্য করে এবং তাকে ধ্বংস করার জন্য উঠেপড়ে লেগে যায়। ফলে কিডনী নিজেই নিজের ধ্বংস ডেকে আনে এবং আমরা কবরের বাসিন্দা হয়ে যাই। সাথে সাথে আমাদের সন্তান-সন্ততীদের করে যাই পথের ভিখারী। কেননা এলোপ্যাথিক চিকিৎসায় কিডনী রোগের যে চিকিৎসা খরচ, তাতে যে-কোন কিডনী রোগীর পরিবারকে পথে নামতে ছয় মাসের বেশী লাগে না। কাজেই বলা যায় যে, উচ্চরক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস আমাদের কিডনীর যতটা ক্ষতি না করে, তারচেয়ে অনেক বেশী ক্ষতি করে এসব রোগ চিকিৎসার নামে যুগের পর যুগ খাওয়া মারাত্মক ক্ষতিকর এলোপ্যাথিক কেমিক্যাল ঔষধগুলি।
বিশেষ করে যে-সব এলোপ্যাথিক ঔষধ মানুষ বেশী বেশী খায় (যেমন-এন্টিবায়োটিক, ব্যথার ঔষধ, বাতের ঔষধ, ঘুমের ঔষধ, ব্লাড প্রেসারের ঔষধ, মানসিক রোগের ঔষধ ইত্যাদি), এগুলো কিডনীর এতই ক্ষতি করে যে, এদেরকে কিডনীর যম বলাই উচিত। একটি বাস-ব সত্য কথা হলো, প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কখনও সারে না ; বলা হয় এগুলো “নিয়ন্ত্রণে থাকে”। আসল কথা হলো, কোন ঔষধ যখন বছরের পর বছর, যুগের পর যুগ খাওয়া হয়, তখন সেই ঔষধ আর রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না বরং রোগই সেই ঔষধকে নিয়ন্ত্রণ করে ফেলে। ফলে এসব কুচিকিৎসায় ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ তো সারেই না বরং দিন দিন আরো নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। মাঝখানে মারাত্মক মারাত্মক ঔষধের ধাক্কায় কিডনীর বারোটা বেজে যায়। অথচ একজন বিশেষজ্ঞ হোমিও ডাক্তারের অধীনে চিকিৎসা নিলে ডায়াবেটিস, উচ রক্তচাপএবং নেফ্রাইটিস দুয়েক বছরের মধ্যেই কেবল নিয়নত্রণ নয় বরং একেবারে নির্মুল হয়ে যায়। কেননা হোমিও ঔষধে যেহেতু ঔষধের পরিমাণ থাকে খুবই কম, সেহেতু এগুলো কয়েক যুগ খেলেও কিডনীতে জমে কিডনী নষ্ট হওয়ার সম্ভাবণা নাই। হ্যাঁ, অন্যান্য রোগের মতো কিডনী রোগের চিকিৎসাতেও হোমিও ঔষধ শ্রেষ্টত্বের দাবীদার। কারণ প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কিডনী রোগের কষ্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও কিডনী রোগের পেছনের মূল কারণসমূহ দূর করা যায় না। একমাত্র হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসার মাধ্যমেই কেবল কিডনী রোগের পেছনের মূল কারণসমূহ দূর করা সম্ভব হয় এবং এভাবে একই রোগ কয়েক বছর পরপর ঘুরে ফিরে বার বার ফিরে আসা ঠেকানো যায়। কিডনী নষ্ট হওয়ার কারণে যারা ডায়ালাইসিস করে বেঁচে আছেন, তারাও ডায়ালাইসিসের পাশাপাশি হোমিও চিকিৎসা গ্রহন করে তাদের বিকল কিডনীকে ধীরে ধীরে সচল করে তুলতে পারেন। হ্যাঁ, হোমিওপ্যাথিতে বংশগত রোগ প্রবনতার ইতিহাস এবং শারীরিক-মানসিক গঠন,বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ঔষধ প্রয়োগ করলে মানুষের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা,উজ্জীবিত হয় এবং ফলস্রুতিতে দেখা যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে নষ্ট কিডনী আবার ভালোভাবে কাজ করতে শুরু করে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে কিডনী পুরোপুরি ভালো না হলেও যথেষ্ট উন্নতি হওয়ার ফলে ডায়ালাইসিসের সংখ্যা কমানো যায়। যেমন- দেখা যায় যেই রোগীর প্রতি সপ্তাহে দুইবার ডায়ালাইসিস করতে হতো, তার হয়ত এখন পনের দিনে বা মাসে একবার ডায়ালাইসিস,আর কিডনী পুরোপুরি ভালো হয়ে গেলে ডায়ালাইসিস পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া যায়। অথচ প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসায় একবার ডায়ালাইসিস শুরু করলে কিডনী না পাল্টানলো পর্যন্ত আর সেটি বন্ধ করা যায় না। বরং যত দিন যায় ডায়ালাইসিস তত বেশী ঘন ঘন করতে হয়। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, ডায়ালাইসিসের মাধ্যমে নষ্ট কিডনী কখনও ভালো করা যায় না বরং ইহার মাধ্যমে কেবল কিডনী কাজ বিকল্প উপায়ে সমপন্ন করে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। হ্যাঁ, একথা সত্য যে, শতকরা নব্বইভাগ রোগ বিনা চিকিৎসাতেই ভালো হয়ে যায় (আমাদের শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার বদৌলতে)। এতে সময় বেশী লাগে কিন্তু উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহন করলে অনেক কম সময়ে রোগের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। সেহেতু অনেকের সাময়িকভাবে নষ্ট কিডনীও বিনা চিকিৎসায় ভালো হয়ে যেতে পারে। সাধারণত কিডনী রোগের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা রোগের ভয়াবহতার মাত্রা এবং রোগের পেছনের অনর্তনিহিত কারণ অনুযায়ী দুই থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ করা যায়। কিন্তু প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে কিডনী রোগের চিকিৎসা প্রায় সারাজীবনই চালিয়ে যেতে হয়। নষ্ট কিডনী প্রচলিত অন্যান্য চিকিৎসায় কখনও ভালো হয় না। কারণ তাদের টার্গেট হলো কিডনীকে ভালো করা নয় বরং কৃত্রিম উপায়ে কিডনীর কাজ অন্যভাবে চালিয়ে নেওয়া (যেমন- ডায়ালাইসিস করা এবং কিডনী পাল্টানো)। হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মায়াজমেটিক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে এতে অনেক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটতে দেখা যায়, যা অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতিতে অকল্পনীয়। যেমন- হোমিও চিকিৎসায় কিডনীর ধ্বংস হওয়া কোষন্তুর জায়গায় ভালো টিস্যু গজাতে দেখা যায়। সাধারণত কিডনী পাল্টানোর পরে অনেক ক্ষেত্রে কিডনী গ্রহীতার শরীর এই নতুন কিডনীকে গ্রহন করতে চায় না নতুন কিডনীকে সে প্রত্যাখান করে নতুন কিডনীকে প্রত্যাখ্যানের এই হার বেশ উচ্চ। রক্ত সম্পর্কের আত্মীয় ছাড়া অন্যদের কিডনী গ্রহন করলে এসব বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে থাকে। প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে নতুন কিডনীর বিরুদ্ধে শরীরের এই বিদ্রোহকে সামাল দিতে লক্ষ লক্ষ টাকা ব্যয় করতে হয় ; অথচ এসব ক্ষেত্রে অপারেশনের পূর্ব থেকেই (অথবা অপারেশনের পরেও) যদি হোমিও চিকিৎসা অবলম্বন করা হয় তবে অন্তত একশগুণ কম খরচে বিদ্রোহ সামাল দেওয়া সম্ভব। নতুন কিডনী সংযোজনের পরে অনেক সময় দেখা যায় কিডনীর সাথে সম্পর্কিত রোগের (যেমন-ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদির) মাত্রা বেড়ে গিয়ে এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, তাকে আর নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ডায়াবেটিস এবং উচ্চরক্তচাপের মতো কিডনীর সাথে সম্পর্কিত রোগসমুহ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় যে কত সহজে দমন করা যায়, তা পুর্বেই বলেছি। কিডনী রোগীদের পাশাপাশি যাদের কিডনী রোগ নাই কিন্তু ফ্যামিলিতে কিডনী রোগের ইতিহাস আছে, তাদের উচিত প্রতিরোধমুলক হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা নিয়ে কিডনী নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকা। কারণ একজন দক্ষ হোমিও ডাক্তার যে-কোন মানুষের সামগ্রিক ইতিহাস শুনলে অদুর অথবা দুর ভবিষ্যতে তার কি কি রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আছে, তা বুঝতে পারেন এবং সেই অনুযায়ী ঔষধ প্রয়োগ করে তাকে সে রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থেকে রক্ষা করতে পারেন। যারা জন্মের পর থেকেই একজন হোমিও বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসার অধীনে থাকেন, তাদের কিডনী নষ্ট হওয়ার কোনই সম্ভাবনা নাই। আবার যে-সব ডায়াবেটিস রোগী একই সাথে উচ্চ রক্তচাপেও ভোগছেন, তাদের কিডনী নষ্ট হওয়ার হাত থেকে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা গ্রহন করা। হোমিওসমাধানঃরোগ নয় রোগীকে চিকিৎসা করা হয় এই জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক কে ডা.হানেমানের নির্দেশিত হোমিওপ্যাথিক নিয়মনীতি অনুসারে কিডনী রোগীর ডায়ালাইসিসহোমিওপ্যাথি সহ যে কোন জটিল কঠিন রোগের চিকিৎসা ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্য ভিওিক লক্ষণ সমষ্টি নির্ভর ও ধাতুগত ভাবে চিকিৎসা দিলে আল্লাহর রহমতে চিকিৎসা দেয়া সম্ভব।উল্লেখ্য, ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর মার্চ মাসের দ্বিতীয় বৃহস্পতিবার বিশ্ব কিডনি দিবস পালিত হচ্ছে।
লেখক,
ডা.মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
স্বাস্থ্য বিষয়ক উপদেষ্টা, হিউম্যান রাইটস রিভিউ সোসাইটি কেন্দ্রীয় কমিটি
স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম
সহসাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক কল্যাণ সোসাইটি
ইমেইলঃdrmazed96@gmail.com
মোবাইল: ০১৮২২-৮৬৯৩৮৯
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।