ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এককভাবে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে। যদিও বিজেপির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট তিন শ আসন ছুঁতে পারেনি। দারুণ সাফল্য দেখিয়েছে কংগ্রেসের উদ্যোগে গড়া ‘ইন্ডিয়া’ জোট।
ভোটের লড়াইয়ে ব্যক্তিগত চমক দেখিয়েছেন অনেক প্রার্থী। তাদের মধ্যে একজন রাকিবুল হুসেইন। তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন আসামের ধুবুরি আসন থেকে। কংগ্রেসের এই প্রার্থী এবার জিতেছেন ১০ লাখ ১২ হাজার ভোটের ব্যবধানে।
বিস্ময়কর ব্যাপার হল রাকিবুল যাকে হারিয়েছেন তিনিও একজন একজন মুসলিম তবে কোনো সাদামাটা প্রার্থী নন, অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (এআইইউডিএফ) প্রধান বদরুদ্দিন আজমল। তার দলকে আসামের তৃতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আসামের ১৪টি আসনের মধ্যে মাত্র তিনটি জিতেছে কংগ্রেস। এর মধ্যে একটি রাকিবুলের ধুবুরি।
রাকিবুল যে ধুবরিতে এত বড় ব্যবধানে জিতলেন সেটা তার নিজের এলাকা নয়। সেখান থেকে প্রায় তিনশো কিলোমিটার দূরে সামাগুড়ি থেকে তিনি বারবার বিধায়ক হয়েছেন। ২০০৯ সাল থেকেই জিতে আসছেন রাকিবুল। ২০১১ সালে প্রফুল্ল মহন্তাকে হারিয়ে দিয়েছিলেন, যিনি সেবার আসামের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে ছিলেন। ২০১৬ সালে যখন বিজেপির জোয়ার চলছিল তখনও সামাগুরিতে বিজেপি প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন তিনি।
রাকিবুল জয়ী হওয়ার কিছুক্ষণ পরে, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং বিজেপি নেতা হিমন্ত বিশ্ব শর্মা তাকে ‘হিরো অব দ্যা ডে’ (দিনের নায়ক) বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, তার আলোচনা সামনে আসা উচিত।
অথচ এই হিমন্ত বিশ্ব শর্মার সঙ্গে রকিবুলের সম্পর্ক খুবই উত্তেজনাকর! এমনকি নির্বাচনের আগে হিমন্তের বিরুদ্ধেই সবচেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়েছেন রাকিবুল।
৪ জুনের ফল শুধু ধুবরিতে নির্বাচনি ইতিহাসই রচনা করেনি, রাকিবুলের মেধার প্রমাণ যেমন হয়েছে তেমনি যারা তার প্রার্থিতা নিয়ে সন্দেহ করেছিলেন তাদেরও চুপ করিয়ে দিয়েছে।
ভূমিধস বিজয়ের পর স্ত্রী এবং ছেলেকে নিয়ে নির্বাচনি কার্যালয় থেকে শংসাপত্র গ্রহণ করতে যান রাকিবুল। যে কাগজটি হয়তো শোভা পাবে তার ড্রয়িং রুম কিংবা রিডিং রুমের দেয়ালে। যাতে রাকিবুলের নামের পাশে ভোটের সংখ্যাটি ১৪ লাখ ৭১ হাজার ৮৮৫। যখন তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আজমলের নামে পাশে ৪ লাখ ৫৯ হাজার ৪০৯ ভোট। বিজয়ের ব্যবধান বিস্ময়কর ১০ লাখ ১২ হাজার ৪৭৬ ভোট।
জানা যায়, রাকিবুল হুসেইনের জন্ম ৭ আগস্ট ১৯৬৪। আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেছেন। তিনি সামাগুড়ি থেকে বিধায়ক এবং ২০২১ সাল থেকে আসাম বিধানসভায় বিরোধী দলের উপনেতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এবার ধুবরি থেকে ইতিহাস গড়া জয় পেয়ে লোকসভায় যাবার অপেক্ষায় আছেন।
তার বাবা নুরুল হোসেনও বিধায়ক ছিলেন। রাকিবুল ২০০১ সাল থেকে আসাম বিধানসভার সামাগুড়ি নির্বাচনি এলাকার প্রতিনিধিত্ব করছেন। ২০০২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত তরুণ গগৈ সরকারে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রিত্বও করেছেন। আসামের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মার কংগ্রেস সরকারেও মন্ত্রীত্ব করেছেন। হেমন্তর মতো তুখোড় নেতাও একবার নির্বাচনে হেরেছেন কিন্তু রাকিবুল কখনও হারেননি।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।