ফেসবুকে পরিচয় হয় তাদের। এরপর জড়ান প্রেমের সম্পর্কে। একপর্যায়ে ভালোবাসা প্রণয়ে রূপ পায় গত ১২ ডিসেম্বর। কাজী অফিসে গিয়ে দুইজন বিয়ে করেন। বলছিলাম কলেজছাত্র মামুন হোসেন (২২) ও নাটোরের খুবজীপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক খায়রুন নাহার (৪০) দম্পতির কথা।

ভালোই চলছিল মামুন-নাহার দম্পতির সংসার। হঠাৎ সেখানে নেমে এলো অন্ধকার। আট মাস পার না হতেই ভালোবাসার পরিসমাপ্তি ঘটল। নিভে গেল শিক্ষিকার জীবন। রোববার (১৪ আগস্ট) সকালে নাটোর শহরের বলারিপাড়া এলাকার ভাড়াবাসা থেকে শিক্ষিকা খায়রুন নাহারের লাশ উদ্ধার হয়।

মারা যাওয়া খায়রুন নাহার গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় পৌর এলাকার মো.খয়ের উদ্দিনের মেয়ে। তিনি উপজেলার খুবজীপুর এম হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক ছিলেন।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত শনিবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে মামুন প্রতিবেশীদের ডেকে বলেন, তার স্ত্রী খায়রুন নাহার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। প্রতিবেশীরা তার ঘরে গিয়ে দেখতে পান, খায়রুন নাহারের নিথর দেহ মেঝেতে শোয়ানো রয়েছে। এতে তাদের সন্দেহ হলে মামুনকে আটকে রেখে পুলিশে খবর দেন তারা।

নাটোর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। মামুনকে আটক করা হয়েছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’

 

নাটোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম উদ্দিন বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অন্য বাহিনীর সদস্যরাও তদন্ত করবে। তদন্ত ও লাশের ময়নাতদন্ত হলে এটা হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে হত্যা আর আত্মহত্যা যাই হোক না কেন, এমনটা ঘটল কেন তা পুলিশ খতিয়ে দেখার চেষ্টা করছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক বছর আগে ফেসবুকে শিক্ষিকা নাহারের সঙ্গে একই উপজেলার ধারাবারিষা ইউনিয়নের পাটপাড়া গ্রামের কলেজছাত্র মামুনের পরিচয় হয়। পরে তাদের দুজনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এক পর্যায়ে দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। ২০২১ সালের ১২ ডিসেম্বর কাউকে না জানিয়ে গোপনে বিয়ে করেন তারা। বিয়ের ৬ মাস পর তাদের সম্পর্ক জানাজানি হলে ছেলের পরিবার মেনে নিলেও মেয়ের পরিবার থেকে বিয়ে মেনে নেয়নি।

এর আগে ওই শিক্ষিকা বিয়ে করেছিলেন রাজশাহী বাঘা উপজেলার একজনকে। পারিবারিক কলহে সেই সংসার বেশি দিন টেকেনি। প্রথম স্বামীর ঘরে এক সন্তান রয়েছে তার।

মারা যাওয়ার আগে খায়রুন নাহার জানিয়েছিলেন, ‘প্রথম স্বামীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের পর মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন তিনি। আত্মহত্যা করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওই সময় ফেসবুকে পরিচয় হয় মামুনের সঙ্গে। মামুন আমার খারাপ সময় পাশে থেকে উৎসাহ দিয়েছে এবং নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখিয়েছে। পরে দুজন বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

মামুন বলেছিলেন, ‘মন্তব্য কখনো গন্তব্য ঠেকাতে পারে না। কে কী বলল, সেগুলো মাথায় না নিয়ে নিজেদের মতো সংসার গুছিয়ে নিয়ে জীবন শুরু করেছি।’ সেসময় সবার কাছে দোয়াও চেয়েছিলেন তিনি।