নিজের অস্ত্রে আর হয়তো শান দেওয়ার ক্ষমতা নেই সার্স-কভ-২ ভাইরাসের। মানবদেহের প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধোঁকা দিতে নিজেদের অস্ত্রকে বার বার আরও বেশি ধারালো করে তুলেছে এটি। তার ফলে গত দেড় বছরে ভাইরাসের আলফা, বিটা, গামা ও ডেল্টা রূপের হদিস মিলেছে।
দৃশ্যত ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দিয়েই চূড়ায় পৌঁছেছে এই ভাইরাস। গবেষকদের আশা, এরপর আর কোনও স্ট্রেইন এতোটা মারাত্মকভাবে আবির্ভূত হবে না। এ সংক্রান্ত একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান গবেষণা পত্রিকা ‘নেচার’।
এতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে ভাইরাসের ধার শীর্ষ চূড়ায় পৌঁছে গেছে। এরপর ধার দিতে গেলে ভাইরাসের তলোয়ারটিই ভেঙে যাবে!’ বর্তমানে ভারতে যে ডেল্টা প্লাস স্ট্রেইনের সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে, সেটিও আসলে ডেল্টা পরিবারেরই সদস্য বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, আলাদা ভ্যারিয়েন্ট হতে গেলে স্পাইক প্রোটিনে যতটা পরবির্তন হওয়ার দরকার ডেল্টা প্লাসে তা দেখা যাচ্ছে না।
করোনাভাইরাসের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রথম হদিস মিলেছিল ভারতে। গত ফেব্রুয়ারিতে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই এটি বিশ্বের ৮৫টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গবেষকদের আশঙ্কা, অল্প সময়ের মধ্যেই এটি আরও বেশি সংখ্যক দেশে ছড়িয়ে পড়বে।
গত দেড় বছর ধরে সংক্রমণের ক্ষেত্রে একের পর এক ভ্যারিয়েন্টের জন্ম দিয়েছে সার্স-কভ-২। প্রতিবারই নিজেদের অস্ত্রকে আরও ধারালো করে তোলায় ভাইরাসটি বিশ্বের ভয়ঙ্কর আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংক্রমণে আরও বেশি ক্ষমতাধর হয়ে উঠেছে।
মানুষের মৃত্যুর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। টিকা নেওয়া বা আগে সংক্রমিত হওয়ার পর মানবদেহে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিকেও কিছু ক্ষেত্রে ধোঁকা দিতে সমর্থ হয়েছে কোভিডের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
এমন পরিস্থিতিতেই আশার কথা শোনালেন গবেষকরা। সোমবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টই সার্স-কভ-২ ভাইরাসের ‘যোগ্যতম’ রূপ। যার অর্থ, সংক্রমণ ও মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়ে ওঠার ‘সর্বাধিক যোগ্যতা’য় উপনীত হয়েছে এই ভ্যারিয়েন্ট।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ক্রিপস রিসার্চ ট্রান্সলেশনাল ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা এরিক টোপল বলেছেন, ‘ডেল্টাই সার্স-কভ-২ ভাইরাসের সবকটি ভ্যরিয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুপারস্প্রেডার।
ভাইরাসটির সবচেয়ে ধারালো চেহারা।’ যাকে সঙ্গে নিয়ে নেচার-এ গবেষণাপত্রটি লিখেছেন টোপল, ইটালির সেই ভাইরোলজিস্ট পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক রবার্টো বুরিয়োনি বলেছেন, ‘আমরা গবেষণায় যা দেখেছি, তাতে বলা যায় সার্স-কভ-২ খুব সম্ভবত এমন অবস্থায় (ডেল্টা রূপে) পৌঁছে গেছে যেখানে ভাইরাসটির স্পাইক প্রোটিনে আর কোনও মিউটেশন হবে না।
হবে না আর কোনও ছোটখাট রদবদলও। এটাই হয়তো এই ভাইরাসের সর্বশেষ রূপ। অনেক দিন বা বছর পর হয়তো তার সামান্য কিছু মিউটেশন হতে পারে। যেমন ফ্লু ভাইরাসের ক্ষেত্রে হয়। তাই ফ্লু ভাইরাসের টিকাও বদলাতে হয় কয়েক বছর পরপর।’ সূত্র: আনন্দবাজার।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।