দেশের আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী বাড়ছে। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন এয়ারলাইনস চালু হলে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যাত্রীদের জায়গা সংকুলান হবে না। তাই ক্রমবর্ধমান যাত্রীর চাপ সামাল দিতে এবার সম্প্রসারণ করা হচ্ছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল। বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, পুরনো অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনের দ্বিতীয় তলায় আট হাজার বর্গফুটের একটি ফ্লোর নির্মাণ করা হচ্ছে। ফ্লোরের অর্ধেকজুড়ে থাকবে দুটি আন্তর্জাতিক মানের লাউঞ্জ। বাকি অর্ধেক অংশে থাকবে যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা, ধূমপান এলাকা, ডায়াপার চেঞ্জিং স্টেশন, মাদারস কর্নার ও প্রার্থনাকক্ষ। ফ্লোরে ওঠার জন্য থাকবে লিফট।

এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান ও যাত্রী চলাচল কয়েক বছরে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এতে বাড়ছে অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরগুলোর ব্যবহার। এর বড় একটি কারণ সাধারণ যাত্রীর পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরকারের মেগাপ্রকল্প চলমান থাকায় বিদেশি প্রকৌশলী, পর্যটক ও ব্যবসায়ীরা আকাশপথে চলাচল করছেন। চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট বাড়াচ্ছে। বিপুল এই যাত্রীর চাপ সামলাতে কয়েক মাস ধরে হিমশিম খাচ্ছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।

শাহজালালের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবনটি ছোট হওয়ায় দেশি-বিদেশি পর্যটক ও দেশি যাত্রীদের দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। কর্তৃপক্ষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পুরনো টার্মিনালের পাশে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি ফ্লোর নির্মাণ করেও পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছিল না। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাই নেওয়া হয়েছে আরেকটি প্রকল্প।

জানতে চাইলে এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ এ টি এম নজরুল ইসলাম গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে যাত্রীর চাপ অনেক বেড়েছে। সক্ষমতা না বাড়ায় একজন যাত্রীর বিমানবন্দর থেকে বের হতে বেশি সময় লাগছে। দোতলায় যাত্রী লাউঞ্জ সম্প্রসারণ হলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হবে। তবে দোতলায় যাত্রীরা যেতে চায় না। দোতলায় গাড়ির সুবিধাসহ ওঠানামার ভালো ব্যবস্থা রাখতে হবে। চলন্ত সিঁড়িসহ দোতলায় যাবতীয় সুবিধা রাখতে হবে।’

বেবিচক সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী ছিল সাড়ে ছয় লাখ, ২০১৭ সালে যাত্রী বেড়ে হয় সাড়ে ১২ লাখ। আর ২০১৯ সালে তা বেড়ে ১৮ লাখ ২১ হাজারে দাঁড়ায়। এ হিসাবে দেখা গেছে, অভ্যন্তরীণ রুটে ছয় বছরে যাত্রী বেড়েছে তিন গুণের বেশি। তবে করোনার কারণে ২০২০ সালের বেশির ভাগ সময় আকাশপথ বন্ধ থাকায় যাত্রী পরিবহন কমে যায়। তবে ২০২১ সালে তা আবার বাড়তে শুরু করে।

অভ্যন্তরীণ রুটে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বেসরকারি খাতের ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস, নভোএয়ার ফ্লাইট পরিচালনা করছে। কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ। তবে এ বছর পাখা মেলতে পারে ফ্লাই ঢাকা ও এয়ারঅ্যাসট্রা নামের নতুন দুটি বেসরকারি এয়ারলাইনস। এ দুটি এয়ারলাইনস যাত্রা শুরু করলে দেশে সক্রিয় বেসরকারি এয়ারলাইনসের সংখ্যা দাঁড়াবে চার।

বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, বেবিচকের ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এবং দুটি ব্যাংকের যাত্রীসেবা লাউঞ্জ স্থাপনের মাধ্যমে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। চলমান এই প্রকল্পে বেবিচকের কোনো আর্থিক ব্যয় হচ্ছে না।

সূত্র জানায়, যাত্রীদের চলাচলের সুবিধার্থে প্রথমবারের মতো অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে লিফট সংযুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩০০-এর বেশি যাত্রীর বসার জন্য আরামদায়ক চেয়ার, স্মোকিং রুমসহ ডায়াপার চেঞ্জিং স্টেশনেরও ব্যবস্থা থাকছে। প্রায় ৩০ বছরের পুরনো অব্যবহৃত ছাদে নির্মিত প্রকল্পটি ভবিষ্যতে যাত্রীর চাপ সামাল দেওয়ার পাশাপাশি ইজারা নীতিমালা অনুযায়ী রাজস্ব বাড়াতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

জানতে চাইলে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী অনেক বাড়ছে। বিষয়টি বিবেচনা করে আমরা বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল নতুন রূপে সাজাচ্ছি। এটি বাস্তবায়িত হলে যাত্রীদের আরো ভালো সেবা দেওয়া যাবে।’

রোজ