মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র আল-আকসা মসজিদে ফের হামলা ও অভিযান চালিয়েছে ইসরায়েলের নিরাপত্তা বাহিনী। এতে কয়েকশ’ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কারও কারও অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম।
সোমবার (১০ মে) সকালে তারা ফিলিস্তিনিদের ওপর রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট কর্তৃপক্ষ এক সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে জানিয়েছে, সহিংসতায় কয়েকশ মানুষ আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত ৫০ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্থানীয় ফিলিস্তিনি সূত্র জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর ছোড়া টিয়ার গ্যাসের শিকার হয়েছেন অন্তত ছয়জন সাংবাদিক। এছাড়া ফাতিমা আল-বাকরি নামে আরেকজন সাংবাদিককে শারীরিকভাবে হেনস্তা করা হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আল-আকসা মসজিদের ভেতর নারী মুসল্লিদের দিকে সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়া হচ্ছে। টিয়ার গ্যাস ছোড়া হয়ে আল কিবলি মসজিদের ভেতরও।
এর আগে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার শঙ্কায় সোমবার ইহুদিদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে মিছিল নিয়ে আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ নিষিদ্ধ করে পুলিশ।
১৯৬৭ সালে ইসরায়েলিদের পূর্ব জেরুজালেম দখলের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ‘জেরুজালেম দিবস’ পালন করে কট্টর ইহুদিরা। হিব্রু ক্যালেন্ডার অনুসারে এ বছর ৯ ও ১০ মে পড়েছে সেই দিবস। এ উপলক্ষে সোমবার পতাকা মিছিল নিয়ে পবিত্র আল-আকসা প্রাঙ্গণে যাওয়ার ডাক দিয়েছিল কয়েকটি উগ্র ইহুদি সংগঠন। তীব্র উত্তেজনার আশঙ্কা সত্ত্বেও ইহুদিদের ওই মিছিল করার অনুমতি দিয়েছিল পুলিশ।
এদিন ভোরে আল-আকসা মসজিদে ফজরের নামাজে অংশ নেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি। নামাজের পরে তাদের একটি বড় অংশ মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন।
বিক্ষোভ শেষেও বহু ফিলিস্তিনি উগ্র ইহুদিদের মিছিল ঠেকাতে মসজিদ প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন। এর কিছুক্ষণ পরেই তাদের ওপর চড়াও হয় পুলিশ। পাল্টা জবাবে ইসরায়েলিদের দিকে ইট-পাথর নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীরা।
এদিন পুরোনো শহরটির শেখ জাররাহ এলাকাতেও ফিলিস্তিনিদের প্রতিরোধে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে ইহুদি দখলদাররা। অবৈধ উচ্ছেদের জেরে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের সঙ্গে ইসরায়েলি পুলিশের দ্বন্দ্বে গত কয়েকদিন ধরে উত্তপ্ত শেখ জাররাহ। সোমবার ওই এলাকার দিকে কয়েকশ’ ইহুদি দখলদার এগোতে থাকলে প্রতিরোধ করে ফিলিস্তিনিরা।
পার্শ্ববর্তী ইসাইয়া এলাকার মসজিদের মাইক থেকে ফিলিস্তিনিদের শেখ জাররাহ এলাকায় ছুটে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এর পরপরই বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে মানুষ পায়ে হেঁটে ও গাড়িতে করে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তাদের তীব্র প্রতিরোধের মুখে শেষপর্যন্ত পিছু হটতে বাধ্য হয় ইসরায়েলি দখলদাররা।
মুসলিমদের কাছে তৃতীয় পবিত্রতম স্থাপনা আল-আকসা মসজিদ। ইহুদিরা এটিকে ‘টেম্পল মাউন্ট’ বলে থাকে। তাদের দাবি, এখানে প্রাচীনকালে ইহুদিদের দুটি উপাসনালয় ছিল।
১৯৬৭ সালে ছয় দিনব্যাপী আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে পূর্ব জেরুজালম দখল করে ইসরায়েলি ইহুদিরা। এরপর বিভিন্ন সময়ে অধিকৃত অঞ্চল বাড়িয়েছে তারা। তবে তাদের এই কাজের স্বীকৃতি দেয়নি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়।
সূত্র: টিআরটি ওয়ার্ল্ড, আনাদোলু এজেন্সি
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।