লিথুয়ানিয়ায় চলছে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর দুই দিনের সম্মেলন। আর সেখানেই বুধবার (১২ জুলাই) ন্যাটো নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মূলত ন্যাটোর সঙ্গে কবে নাগাদ যুক্ত হতে পারে ইউক্রেন সে সম্পর্কে স্পষ্ট টাইমলাইন ঘোষণার আহ্বান প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর এই সাক্ষাৎ করতে চলেছেন তিনি।
এর আগে ন্যাটোর সদস্যপদ পাওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা না পেয়ে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। বুধবার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা রয়টার্স।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বুধবার ন্যাটো নেতাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে চলেছেন। আর সেটিও এমন এক সময় যখন ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ এই জোটের মধ্যে রয়েছে বলে ন্যাটো ঘোষণা কলেও পূর্ব ইউরোপের এই দেশটির সদস্য হওয়ার নির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।
রয়টার্স বলছে, জেলেনস্কি ভিলনিয়াসে ন্যাটোর শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিলের উদ্বোধনী অধিবেশনের জন্য সামরিক এই জোটটির নেতাদের সাথে যোগ দেবেন। মূলত কিয়েভ এবং ৩১ সদস্যের ট্রান্সআটলান্টিক সামরিক এই জোটের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা হচ্ছে ন্যাটো-ইউক্রেন কাউন্সিল।
এছাড়া বৈঠকের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথেও আলাদাভাবে দেখা করবেন প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। মূলত গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণের ফলে সৃষ্ট যুদ্ধ চালিয়ে যেতে যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য ন্যাটো দেশগুলোর কাছ থেকে আরও অস্ত্র ও গোলাবারুদ চাইছেন ইউক্রেনীয় এই প্রেসিডেন্ট।
কর্মকর্তাদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানি কিয়েভকে উন্নত অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য সামরিক সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদী নিরাপত্তা সহায়তার আশ্বাস দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। সম্ভবত শীর্ষ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই সেই ঘোষণা দেওয়া হতে পারে।
এছাড়া অন্যান্য দেশও একইসময় তাদের নিজস্ব দ্বিপাক্ষিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ইউক্রেনকে সহায়তার দৌড়ে যুক্ত হবে বলেও কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এদিকে সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে ইউক্রেন কবে নাগাদ যুক্ত হতে পারে সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো টাইমলাইন বা সময়সীমা বেঁধে না দেওয়ায় মঙ্গলবার ভিলনিয়াসে একটি সমাবেশে জেলেনস্কি হতাশা প্রকাশ করেন। এছাড়া এমন সম্ভাবনাকে এর আগে তিনি ‘অযৌক্তিক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন।
ভিলনিয়াসে হাজার হাজার মানুষের সমাবেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘ন্যাটো ইউক্রেনকে নিরাপদ করবে, ইউক্রেন ন্যাটোকে আরও শক্তিশালী করবে।’
অবশ্য মঙ্গলবার রাতে ইউক্রেনীয় এই প্রেসিডেন্ট ন্যাটো মিত্রদের প্রতি বেশ নরম ভাষায় কথা বলেন। টুইটারে দেওয়া এক বার্তায় জেলেনস্কি বলেন, ‘আমাদের প্রতিরক্ষার বিষয়টিই আমাদের কাছে শীর্ষ অগ্রাধিকার এবং আমাদের অংশীদাররা নতুন যেসব পদক্ষেপ নিতে তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের যোদ্ধাদের জন্য আরও অস্ত্র পাঠানো হলে তা সমগ্র ইউক্রেনের জন্য আরও সুরক্ষা নিশ্চিত করবে! আমরা ইউক্রেনে নতুন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আনব।’
ন্যাটো বলেছে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত থাকা অবস্থায় ইউক্রেন তাদের জোটে যোগ দিতে পারবে না। মঙ্গলবার এই জোটের নেতারা ২০০৮ সালের একটি ঘোষণা পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগদান করবে।
তবে তারা এটিও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পরই তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে হবে না। নেতারা লিখিত ঘোষণায় বলেছেন, ‘যখন মিত্ররা সম্মত হবে এবং শর্ত পূরণ করা হবে। তখনই আমরা ইউক্রেনকে জোটে যোগদানের আমন্ত্রণ জানাব।’
বিবৃতিতে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, ন্যাটো সৈন্যদের সাথে কাজ করার জন্য ইউক্রেনীয় বাহিনীর সক্ষমতার অগ্রগতি দেখতে ন্যাটোকে। সেইসাথে ইউক্রেনের গণতান্ত্রিক ও নিরাপত্তা খাত সংস্কারেরও প্রয়োজন রয়েছে।
অবশ্য ন্যাটোর অবস্থান কিয়েভের সদস্যপদ নিয়ে তাদের সদস্যদের মধ্যে বিভক্তিই তুলে ধরছে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।