সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয়: প্রধানমন্ত্রী।
সুমনসেন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি-
কোভিড-১৯ মহামারি স্মরণ করিয়ে দেয়, সবাই নিরাপদ না হওয়া পর্যন্ত কেউ নিরাপদ নয়। এজন্য বৈষম্য হ্রাস, দারিদ্র্য বিমোচন ও কার্বন নিঃসরণ হ্রাস করে আমাদের গ্রহকে সুরক্ষিত করতে হবে। আরো জোরদার করতে হবে আমাদের বহুপাক্ষিক প্রয়াস।
মঙ্গলবার (১০ নভেম্বর) স্পেন সরকার আয়োজিত ‘বহুপাক্ষিকতা জোরদারে পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান’ শীর্ষক উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে আগে ধারণ করা ভিডিও বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একথা বলেন।
তিনি বলেন, আজকের গ্লোবালাইজড বিশ্বে গঠনমূলক বহুপাক্ষিকতার কোনো বিকল্প নেই। মানবজাতির অভিন্ন অগ্রগতি ও আইনভিত্তিক আন্তর্জাতিক নির্দেশনার এটিই একমাত্র পথ।
‘কোভিড-১৯ মহামারি আমাদের এই শিক্ষা দিয়েছে যে, সম্মিলিত কার্যক্রম, একতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ওপরই বৈশ্বিক সমৃদ্ধি নির্ভর করছে। ইতিহাস প্রমাণ করে যে সম্মিলিত প্রচেষ্টা থেকে যে কোনো বিচ্যুতি মানবজাতির জন্য বিপর্যয় নিয়ে আসবে। ’
মহামারির কারণে সংকটের মোকাবিলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের জনগণের জীবিকার সুরক্ষায় আমরা ইতোমধ্যেই ১৪.১৪ বিলিয়ন বরাদ্দ দিয়েছি, যা আমাদের জিডিপির ৪.৩ শতাংশ। মহামারির প্রভাব সত্ত্বেও সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ ৫.২৪ শতাংশ জিডিপি অর্জন করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ে বহুপাক্ষিক প্রচেষ্টা না নিলে বৈশ্বিক পুনরুদ্ধার হবে না এবং কখনোই সেটি টেকসই হবে না। আমাদের সবাইকে আন্তর্জাতিক শান্তি, সুরক্ষা ও বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের জন্য ক্ষতিকর জাতীয় কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।
‘বাংলাদেশ বহুপক্ষীয়তার পতাকা বাহক এবং জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সর্বোচ্চ উপস্থিতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শান্তি-সুরক্ষার পক্ষে জোরালোভাবে কাজ করছে। আমরা এসডিজি বাস্তবায়নে ‘গোটা সমাজ’ এই নীতি অবলম্বন করেছি, আমরা প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নে সমানভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ’
দ্বিতীয়বারের মতো ৪৮ সদস্যের ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের নেতৃত্বের জন্য নির্বাচিত হওয়ায় বাংলাদেশ সম্মানিত বোধ করছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এলডিসি অবস্থান থেকে উন্নয়ন ঘটিয়েছি। এক্ষেত্রে জাতিসংঘ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। এতে বহুপাক্ষিকতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতি ও আস্থা প্রতিফলিত হয়েছে।
জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকী স্মরণে বাংলাদেশে ২১ সেপ্টেম্বর রাজনৈতিক ঘোষণা গৃহীত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘোষণায় আমরা আমাদের একীভূত সমৃদ্ধির জন্য অংশীদারিত্বের দায়িত্ব ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার উপর জোর দিয়েছি। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যের জন্য ২০৩০ সালের এজেন্ডা এগিয়ে নিতে এবং প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। যদিও এসব আন্তর্জাতিক উপাদান ও বোঝাপাড়া থেকে সুবিধাগুলো অর্জনে বলিষ্ঠ বহুপক্ষীয়তা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বহুপাক্ষিকতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার চেতনা বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত। এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা স্বাধীনতায় উন্নতি করতে পারি এবং মানবজাতির প্রগতিশীল আকাঙ্ক্ষাগুলো বজায় রেখে আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার প্রতি আমাদের পূর্ণ অবদান রাখতে পারি। ’
তিনি আরো বলেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) তার ভাষণে সম্মিলিত প্রচেষ্টার গুরুত্ব এবং জাতিসংঘের ভূমিকার কথাও তুলে ধরেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘জাতিসংঘ দুঃখ, দুর্দশা ও সংঘাতের এই পৃথিবীতে ভবিষ্যৎ মানুষের আশার কেন্দ্র হয়ে থাকবে। ’ তার মন্তব্য এখনও আমাদের বহুপাক্ষিকতার ভিত্তি হয়ে আছে। ’
অনুষ্ঠানে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজ বক্তব্য রাখেন। এছাড়া সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন লোফভেন এবং কোস্টারিকার প্রেসিডেন্ট সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দেন।
দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট, কানাডার প্রধানমন্ত্রী, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী, জর্ডানের উপপ্রধানমন্ত্রী, সেনেগালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, তিউনিসিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং কেরিয়ার পররাষ্ট্র বিষয়ক ভাইস মিনিস্টারের আগে ধারণ করা ভিডিও ভাষণ অনুষ্ঠানে প্রচার করা হয়।
এসময় জাতিসংঘের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনের ভিডিও এবং জাতিসংঘ মহাসচিবের মন্তব্যের একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।