মিয়ানমারের সামরিক জান্তা দেশটির কুখ্যাত ইনসেইন কারাগার থেকে অং সান সু চির দলের এক মুখপাত্র এবং সুপরিচিত কৌতুক অভিনেতা জারগানারসহ কয়েকশ রাজনৈতিক বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। সোমবার মান্দালয়, লাসিও, মেইকতিলা ও মায়িক শহরের কারাগারগুলো থেকেও সাবেক সাংসদ, সাংবাদিকসহ অসংখ্য রাজনৈতিক বন্দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তবে মেইকতিলা কারাগার থেকে ছেড়ে দেওয়া ৩৮ জনের মধ্যে ১১ জনকে ফের গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মা। তাদের এই তথ্য সঠিক কিনা, তা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাই করতে পারেনি বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এর আগে জান্তাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের ভাষণের পর মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন অভ্যুত্থানবিরোধী বিক্ষোভে জড়িত থাকায় গ্রেপ্তার ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকা ৫ হাজার ৬০০র বেশি আন্দোলনকারীকে মুক্তি ও মানবতার খাতিরে ক্ষমা করা হচ্ছে বলে জানায়। দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর জোট আসিয়ান তাদের শীর্ষ সম্মেলন থেকে মিয়ানমারের জান্তাপ্রধানকে বাদ দেওয়ার বিরল পদক্ষেপ নেওয়ার পর এই বন্দিমুক্তি ও ক্ষমা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্ষমতাসীন সামরিক সরকারের ভাবমূর্তি বাঁচানোর নতুন চাল, বলছেন দেশটির গণতন্ত্রপন্থি অনেক কর্মী।
জাতিসংঘের বিশেষ র‌্যাপোর্টার টম অ্যান্ড্রুজ মিয়ানমারের হাজারো রাজবন্দির মুক্তিকে স্বাগত জানিয়েছেন; তাদেরকে প্রথম যখন আটক করা হয়, তা ‘গর্হিত কাজ’ ছিল- টুইটারে তিনি এমনটা বলেছেন বলেও এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে রয়টার্স। “মিয়ানমারের জান্তা রাজনৈতিক বন্দিদের ছাড়ছে, তাদের মন বদলেছে বলে নয়, ছাড়ছে চাপে পড়ে,” বলেছেন তিনি। ফেব্রুয়ারির অভ্যুত্থানের পর এ নিয়ে কয়েক দফায় মিয়ানমারের সামরিক জান্তা কয়েক হাজার বন্দিকে মুক্তি দিল। সম্প্রতি আসিয়ানের মন্ত্রিপর্যায়ের এক বৈঠকে অক্টোবরের ২৬ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত হতে যাওয়া শীর্ষ সম্মেলনে মিয়ানমার থেকে একজন অরাজনৈতিক প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়। বিরল এ সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মূলত ফেব্রুয়ারিতে অং সান সু চির নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে ক্ষমতায় বসা মিন অং হ্লাইংকে ‘তিরস্কার’ করা হয়েছে বলেই অনেকে মনে করছেন। “তারা (কারা কর্তৃপক্ষ) আজ আমার কাছে আসে এবং বলে তারা আমাকে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছে, এটুকুই,” সোমবার রাতে কারাগার থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় গণমাধ্যম ডেমোক্রেটিক ভয়েস অব বার্মাকে এমনটাই বলেছেন অং সান সু চির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) মুখপাত্র মোনইয়া অং শিন।
অভ্যুত্থানের দিন ১ ফেব্রুয়ারিতেই গ্রেপ্তার হয়েছিলেন তিনি, ৮ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে থাকার পর মুক্তি মিলল তার। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া অসংখ্য ছবি ও ভিডিওতে মুক্তি পাওয়া বন্দিদেরকে আনন্দে কাঁদতে থাকা তাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে মিলিত হতে দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি ছবিতে কারাগারের পেছনের ফটক দিয়ে বের হওয়া একাধিক বাসের জানালাগুলোর দিকে ঝুঁকে থাকা যাত্রীদেরকে বাইরে জড়ো হওয়া বিপুল সংখ্যক মানুষের উদ্দেশ্যে হাত নাড়াতে দেখা যায় বলেও জানিয়েছে রয়টার্স। বন্দিমুক্তি প্রসঙ্গে মিয়ানমারের কারা বিভাগের মুখপাত্র এবং সামরিক জান্তার মুখপাত্রের তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। দশককাল গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে চলার পর চলতি বছরের শুরুর দিকে হওয়া অভ্যুত্থান মিয়ানমারকে ফের টালমাটাল অবস্থার দিকে ঠেলে দিয়েছে।
জাতিসংঘ ও গণতন্ত্রপন্থি আন্দোলনকর্মীদের হিসাবে অভ্যুত্থানের পর থেকে এ পর্যন্ত দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে এক হাজার ১০০রও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে; সু চিসহ ৯ হাজারেরও বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মিয়ানমারে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক ও নিহতের হিসাব রাখা পর্যবেক্ষক গোষ্ঠী অ্যাসিস্ট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিকাল প্রিজনার্স (এএপিপি) ।