শিক্ষক নেই। স্কুল বন্ধ। কার্যক্রম নেই সরকারি ব্যাংকগুলোয়ও। ব্যাংকাররা নেমে এসেছেন পথে। রাজাপাকসেদের অপসারণ চেয়ে গণধর্মঘট পালন করেছেন শ্রীলংকার পেশাজীবীরা।

অর্থনৈতিক সংকটের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে ক্রমেই জোরালো হয়ে উঠছে গণবিক্ষোভ। এমনকি রেলস্টেশনগুলোয়ও অনড় দাঁড়িয়ে ট্রেন। ট্রেনচালকরাও নেমে এসেছেন বিক্ষোভে। সংগঠিত ধর্মঘটে পথে নামছে ট্রেড ইউনিয়নগুলো।

গতকাল বিক্ষোভে অচল ছিল পুরো শ্রীলংকা। বন্ধ ছিল বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। চলাচল করেনি যানবাহনও। কভিড-১৯ মহামারী, বৈদেশিক ঋণের চাপ, জ্বালানির আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা ও রিজার্ভ সংকট শ্রীলংকায় ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সূচনা করেছে। এ বিপর্যয় পথে টেনে নামিয়েছে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের। কখনো কখনো বিক্ষোভ রূপ নিচ্ছে সহিংসতায়।

দেশটির বর্তমান দুর্গতির জন্য রাজাপাকসে পরিবারের নিয়ন্ত্রণাধীন সরকারকেই দায়ী করছে শ্রীলংকার সাধারণ জনগণ। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত এক ব্যাংকের কর্মী সামান্থি একানায়াকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, এ সরকার আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। প্রতিনিয়ত পণ্যের দাম বাড়ছে। ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। মানুষের এখন বাঁচার কোনো উপায় নেই। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ দেখতে দেখতে আমরা ক্লান্ত। কোথাও জ্বালানি পাওয়া যাচ্ছে না। বাড়িতে গেলে দেখি বিদ্যুৎ নেই, এমনকি খাবার তৈরির জন্য গ্যাসও নেই।

ট্রেড ইউনিয়ন অ্যাক্টিভিস্ট ওসানথা সামারাসিংহে বলেন, শ্রমিকদের করা সবচেয়ে বড় সাধারণ ধর্মঘটের একটি এটি। এ প্রতিবাদে সমর্থন দিয়েছে এক হাজারেরও বেশি ট্রেড ইউনিয়ন। রাজধানী কলম্বোয় কিছু বিক্ষোভকারীকে প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে দুই কিলোমিটার দূরে প্রিমিয়ারের বাসভবনের বাইরে ক্যাম্প করতেও দেখা গিয়েছে।

যদি প্রেসিডেন্ট ও সরকার পদত্যাগ না করে, তাহলে শহরের ট্রেড ইউনিয়নের নেতারাও আগামী ৬ মে থেকে ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন। এ সপ্তাহেই একটি মধ্যবর্তী সরকার গঠনের ইচ্ছা পোষণ করেছে রাজাপাকসে সরকার। সেখানে নতুন প্রধানমন্ত্রী ও কেবিনেট গঠন করা হবে। যদিও পদত্যাগ করতে অসম্মতি জানিয়েছেন গোতাবায়ার বড় ভাই প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তিনি বারবার বলেছেন, ২২৫ সদস্যের সংসদে তার সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

কিছুদিন ধরেই ভারত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্রটি নিয়মিত এ ধরনের বিক্ষোভের মুখে পড়ছে। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসে সরকারের সব দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন শুক্রবার সংসদে গিয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের সম্ভাব্যতা নিয়ে আরো ভাবতে।

এপ্রিলের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়া শ্রীলংকার পুরো কেবিনেট পদত্যাগ করে। সে সময় বিরোধী দলগুলোকে একত্র করে সরকার গঠনের আহ্বান জানান গোতাবায়া রাজাপাকসে। কিন্তু রাজাপাকসেদের অধীনে গঠিত কোনো সরকারে অংশ নিতে অসম্মতি জানিয়েছে বিরোধী দলগুলো। তাদের অভিযোগ, গত ২০ বছরে সবভাবে মানুষের জীবনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে এ সরকার। দুটি বিরোধী দল প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনারও প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

১৯৪৮ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশের হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক পরিস্থিতির মুখে পড়েছে শ্রীলংকা। কমে গিয়েছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। টান পড়েছে জ্বালানি, গ্যাস ও ওষুধ আমদানিতে।

ফলে যেমন উচ্চহারে মূল্যস্ফীতি দেখা দিচ্ছে, তেমনি দোকান ও জ্বালানি স্টেশনের বাইরে লম্বা লাইনও চোখে পড়ছে। পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্বব্যাংক, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং ভারত ও চীনের মতো দেশগুলোর সহায়তা চেয়েছে শ্রীলংকা।