রাজাদের শাসনকাল থেকেই চলে আসছে অপরাধ করলে তার জন্য শাস্তি। কখনও অপরাধীদের দেশছাড়া হতে হত। কখনও বা রাজা মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দিতেন। কিন্তু প্রাচীন পারস্যের (বর্তমান ইরান) রাজারা মৃত্যুদণ্ডের নামে ভয়ঙ্কর পন্থা অবলম্বন করতেন।

প্রাচীন পারস্যে তখন সাইরাস দ্য গ্রেটের রাজত্ব। তার শাসনকালে ছিল অদ্ভুত নিয়ম। কেউ অপরাধ করলে এক বার নয়, তাকে তিন বার শাস্তি দেয়া হত তখন। ইতিহাস বলছে, সাইরাসের প্রথম অথবা দ্বিতীয় স্ত্রী এক নপুংসককে ‘ট্রিপল ডেথ’ অর্থাৎ তিন বার মৃত্যুসম শাস্তির নির্দেশ দিয়েছিলেন। রানির নির্দেশে প্রথমে ওই ব্যক্তির চোখ উপড়ে নেয়া হয়। তার পর তার চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। সুস্থ করে তোলার পর তার শরীরের চামড়া পুরোপুরি তুলে ফেলা হয়। কিন্তু রানির নির্দেশ অনুযায়ী তিন বার শাস্তি দিতে হবে। তাই তৃতীয় বার তাকে শাস্তি দিতে ক্রুশবিদ্ধ করে মারা হয়।

দারিয়াসের সভায় সিসামনেস নামে এক বিচারক ছিলেন। কোনও কারণে ঘুষ নিয়েছিলেন সিসামনেস। খবর পাওয়ার পর বিচারকের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে যান দারিয়াস। পরবর্তী বিচারক হিসাবে যিনি নিযুক্ত হবেন তিনিও যেন একই ভুল না করেন তার জন্য সিসামনেসকে মর্মান্তিক শাস্তি দেন দারিয়াস। গলা কেটে খুন করা হয় সিসামনেসকে। তার পর মৃতদেহের চামড়া কেটে তা দিয়ে একটি চেয়ার তৈরি করা হয়। মানুষের চামড়ার তৈরি সেই চেয়ারে দারিয়াস পরবর্তী বিচারককে বসার নির্দেশ দেন। বিষয়টি আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে, যখন সিসামনেসের পুত্রকেই পরবর্তী বিচারক হিসাবে বেছে নেন রাজা। সিসামনেসের পুত্রকে প্রতি দিন ওই চেয়ারে বসেই কাজ করতে হত। শোনা যায়, পরবর্তী বিচারকেরা আর কোনও দিন ঘুষ নেননি।

আরও এক ভয়ঙ্কর শাস্তি ছিল প্রাচীন পারস্যে। শাস্তি দেয়ার জন্য অপরাধীদের ৭৫ ফুট গভীর একটি টাওয়ারের ভিতর ফেলে দেয়া হত। সেই টাওয়ার ছাই দিয়ে ভরা থাকত। টাওয়ারের বাইরের দিকে লাগানো থাকত চাকা। চাকা ঘোরালে টাওয়ারের ভিতর ছাই উড়তে শুরু করত। টাওয়ারের ভিতর অপরাধীকে ফেলে বাইরে থেকে চাকা ঘোরানো হত। ছাই উড়তে শুরু করলে তা অপরাধীর নাক এবং মুখের ভিতর ঢুকে যেত। ফলে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যেতেন অপরাধী।

পারস্যের সম্রাট প্রথম শাপুরের ক্রীতদাস ছিলেন ভ্যালেরিয়ান। তিনি সবসময়ই ভ্যালেরিয়ানের হাত-পা চেন দিয়ে বেঁধে রাখতেন। ঘোড়ায় চড়ার সময় ভ্যালেরিয়ানের হাত এবং হাঁটুর উপর ভর দিয়ে উঠতেন রাজা। হঠাৎ শাপুরের মনবদল হল। ভ্যালেরিয়ানকে প্রাণে মেরে ফেলতে চাইলেন তিনি। যেমন ইচ্ছা তেমন কাজ। ভ্যালেরিয়ানের গলায় ফুটন্ত সোনা ঢেলে দেয়ার নির্দেশ দিলেন শোপার। তারপর মৃতদেহের ভিতর থেকে যাবতীয় প্রত্যঙ্গ বার করে তার বদলে খড় দিয়ে ভরাট করে দেয়া হল। রাজার নির্দেশে পারস্যের এক মন্দিরের সামনে বহুদিন ভ্যালেরিয়ানের দেহ ঝুলিয়ে রাখা ছিল।

পারস্যে চুরি বা ডাকাতি করলেও রেহাই মিলত না। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীর দেহ দু’টুকরো করে শাস্তি দিতেন রাজা। তবে তার পদ্ধতি ছিল ভিন্ন। দুই গাছের উপরের ডাল দড়ি দিয়ে বেঁধে দেয়া হত। অপরাধীর পা-ও দু’দিকে বেঁধে দেয়া হত ডালের সঙ্গে। গাছদু’টির ডাল যেখানে দড়ি দিয়ে বাঁধা, এর পর সেই দড়ি কেটে দেয়া হত।

ফলে গাছের ডালদু’টি দুই দিকে সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অপরাধীর দেহও দু’টুকরো হয়ে যেত। মৃত্যুর পরে অপরাধীর দেহের টুকরো দু’টি রাস্তার মাঝখানে, যেখানে অপরাধ করা হয়েছিল, সেই জায়গায় ফেলে রাখা হত। রাজা ভাবতেন, রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় ওই টুকরোগুলি চোখে পড়লে আর কেউ মৃত্যুভয়ে চুরি করবেন না। কখনও আবার অপরাধীকে প্রাণে না মেরে তাদের নাক, কান এবং জিভ কেটে ফেলা হত। কখনও আবার একটা চোখও উঠিয়ে নেয়া হত। কিন্তু অপরাধীদের প্রাণে মারা হত না। অর্ধমৃত অবস্থায় প্রাসাদের সদর দরজার বাইরে তাদের চেন দিয়ে বেঁধে রাখা হত।

শাস্তি দেয়ার জন্য কায়দা করে কাটা হত মোটা গাছের ডাল। তা অপরাধীদের নগ্ন শরীরে এমন ভাবে পরিয়ে দেয়া হত যেন তার হাত-পা এবং মুখের অংশটুকু দেখা যায়। দেহের বাকি অংশটুকু থাকত গাছের ডালের ভিতরে। অপরাধীকে দিনের পর দিন বলপূর্বক খাওয়ানো হত মধু এবং দুধ। এমনকি, দেহের অনাবৃত অংশে মধু মাখানো হত। মধুর আকর্ষণে মৌমাছি ঘিরে ফেলত অপরাধীর দেহের অনাবৃত অংশ। অপরাধীকেও সেই অসহ্য যন্ত্রণা দিনের পর দিন সহ্য করতে হত। প্রতি দিন অনবরত মধু এবং দুধ খাওয়ার ফলে ডায়ারিয়া হয়ে যেত অপরাধীর। এ ভাবেই তিলে তিলে এক দিন মারা যেতেন অপরাধী।