গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাজনীতিবিদদের সরিয়ে গত বছর সামরিক ক্যু’র মাধ্যমে মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকার (এনইউজি) প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে চলতি মাসে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশন ডাকা হয়েছে। এই অধিবেশনে মিয়ানমারের সরকারের প্রতিনিধি কে হবেন এবং তার কার্যক্রম কতটুকু থাকবে এ নিয়ে সংকট তৈরি হয়েছে।
এর মাধ্যমে দেশটির সরকার ব্যবস্থাকে এক ধরনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেওয়া হয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। অন্যদিকে মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এই সরকার সামরিক শাসকের প্রভাবমুক্ত। এ নিয়ে খোদ জাতিসংঘের মধ্যেই মতেদ্বৈততা রয়েছে। সব মিলিয়ে এবারের অধিবেশনে মিয়ানমারের অংশগ্রহণ নিয়ে এক সংকটময় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। খবর আলজাজিরা।
অস্ট্রেলিয়ায় মিয়ানমারের জাতীয় ঐক্যের সরকারের প্রতিনিধি ড. তুন-অং শের বরাত দিয়ে খবরে বলা হয়, আমন্ত্রণ জানালে জাতিসংঘকে এনইউজের প্রতিনিধি দলকে প্রত্যেক অধিবেশ ও সেশনে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। এভাবে জাতিসংঘের অন্য সংস্থাগুলোতেও তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।
তবে এ নিয়ে মিয়ানমারের অবস্থান তুলে ধরে ড. তুন-অং শে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই জাতীয় ঐক্যের সরকারকে সমর্থন দেওয়া উচিত, যে সরকার মিয়ারমারের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। তিনি আরও বলেন, এনইউজে মিয়ানমারের জনসাধারণের প্রতিনিধিত্ব করে, জাতিসংঘে মিয়ানমারের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করা সামরিক জান্তার বৈধতা নেই।
খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং সামরিক অভুত্থানের মাধ্যমে ২০২১ সালে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সাং সু কিকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর দলটির রাজনীতিবিদদের একাংশকে নিয়ে এনইউজে গঠন করা হয়। ক্ষমতা টিকে থাকতে সামরিক সরকার তার শাসনের বিরোধিতাকারী দমনে খড়গহস্ত হয়। তখন এনইউজে মন্ত্রণালয় সংগঠিত হয়ে জোটকে দেশে ও বিদেশে আরও সুসংহত করার চেষ্টা চালায়।
কিন্তু তা সত্ত্বেও জাতি সংঘ মিয়ানমারের সামরিক এই সরকারকে সংস্থায় পুরোপুরো অংশগ্রহণ করানো থেকে এড়িয়ে চলে।
জাতিসংঘ ২০২১ সালের ডিসেম্বরে ঘোষণা করেছিল যে তারা মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। এর কারণ হিসেবে বলা হয়, মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলেছে যে দেশটির অবনতিশীল পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রতিক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছে। এ ছাড়া এর মাধ্যমে সামরিক শাসনকে বৈধতা দেওয়ার ঝুঁকি রয়েছে।
খবরে বলা হয়, এমন পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে প্রতিনিধিত্ব করা নিয়ে জাতিসংঘের কর্তা ব্যক্তিরা মারাত্মক অসংগতি খুঁজে পেয়েছেন।
মিয়ানমার অ্যাকাউন্ট্যাবিলিটি প্রজেক্টের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার কাছে এই সমস্যাটি সমাধানের ক্ষেত্রে গুরুতর অসঙ্গতি রয়েছে। মিয়ানমারের এনইউজে সরকারকে প্রতিনিধিত্ব করার অনুমতি দিলেও, তারা কোনো শীর্ষ বৈঠকে অংশ নিতে পারবে না। এই প্রাতিষ্ঠানিক অসংগতি মিয়ানমারের মানুষ প্রত্যাখ্যান করেছে। কারণ, জাতিসংঘে তাদের প্রতিনিধিদের মুখোমুখি হওয়াটা খুব দরকার ছিল। একই সঙ্গে দেশের জনগণের প্রতি সহিংস দমন ও সশস্ত্র সংঘাতের কারণে মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি দিন দিন সংকটে পড়ছে।
স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চীনসহ জাতিসংঘের নয়টি দেশের একটি কমিটির দ্বারা সাধারণ পরিষদে অংশগ্রহণের অনুমতির সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়।
তবে সর্বশেষ অধিবেশনে জাতীয় ঐক্যের শরিকদের প্রতিনিধি সেনাপ্রধান কিয়াও মোয়ে তুনকে অংশ নেওয়ার অনুমতি দিলেও গণহত্যার প্লট রচানাকারী হিসেবে তাকে শীর্ষ পর্যায়ের সংলাপে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হয়নি।
তবে এখন কিয়াও মোয়ে তুন তার নিজের পছন্দের রাষ্ট্রদূত দিয়ে অধিবেশনে দেশটির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে চান।
অন্যদিকে এনইউজের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের ১৭ জন মন্ত্রীর মধ্যে ১০ জন মিয়ানমারের অংশগ্রহণ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের ওপর সামরিক সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই বলেও দাবি করা হয়েছে।
তবে এমন পরিস্থিতিতে উদ্ভুত সমস্যা নিয়ে হার্ভাড ল স্কুলের অধ্যাপক টাইলার জিয়ানিনি বলেন, এ নিয়ে জাতিসংঘের মধ্যে বিভক্ত এবং অসম্পূর্ণ স্বীকৃতি রয়েছে।
তবে জিয়াননি বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে প্রতিনিধিত্বের ধারাবাহিকতা থাকা উচিত, যা জনগণের ইচ্ছার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। সে হিসেবে মিয়ানমার অধিবেশনে অংশ নিতে দেওয়া উচিত।
তবে এই সংকট উত্তরণের জন্য একটা সমাধানে পৌঁছার দায়িত্বও জাতিসংঘের।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।