বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের জন্য উন্মুক্ত করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। একই সঙ্গে ইইউ অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে জোর দেওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ।

শনিবার (২১ মে) ইইউ কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, শুক্রবার (২০ মে) ব্রাসেলসে বাংলাদেশ-ইইউ’র দশম যৌথ কমিশন বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ইইউর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে এসব মতামত জানানো হয়।

ইইউ কমিশনের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে উভয়পক্ষ রাজনৈতিক অগ্রগতির পর্যালোচনায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের গুরুত্বসহ গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও সুশাসনের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে। বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের উন্মুক্ততাকে স্বাগত জানিয়ে ইইউ একটি প্রাণবন্ত নাগরিক সমাজে গণতন্ত্রের গুরুত্ব তুলে ধরে।

বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের যুগ্ম সচিব ফাতিমা জেসমিন। আর ইইউর পক্ষে এক্সটারনাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর পাওলা পাম্পালোনি।

দিনব্যাপী বৈঠকে গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকার, রোহিঙ্গা সংকট, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য সহযোগিতা, অভিবাসন, জলবায়ু পরিবর্তন, শিক্ষা, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়। এছাড়া, উভয়পক্ষ সংখ্যালঘুদের অধিকারের অগ্রগতি, নারী ও শিশুদের অধিকার এবং বহুপাক্ষিক ফোরামে মানবাধিকারের বিষয়ে সম্পৃক্ততার বিষয়ে নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে মতবিনিময় করে। এছাড়া, উভয় পক্ষ নীতি সংস্কারের অগ্রগতির বিষয়ে মতবিনিময় করে। বিশেষ করে শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন, পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট, ন্যায়বিচার, সামাজিক সুরক্ষা এবং জলবায়ু অভিযোজনের মতো বিষয়গুলোতে।

ইইউ এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন এবং প্রশমনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয় এবং অগ্রাধিকার নিয়েও আলোচনা করে। উভয়পক্ষ চলতি বছরের মধ্যে একটি জলবায়ু সংলাপ করা এবং একটি সম্ভাব্য সবুজ অংশীদারিত্ব নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত হয়েছে।

বৈঠকে উভয়পক্ষ এ অঞ্চলের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতি, সামুদ্রিক নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং জাতিসংঘ ফোরামের মধ্যে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করে।

মানবাধিকার নিয়ে ইইউ’র উদ্বেগ
বৈঠকে বাংলাদেশে মানবাধিকারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইইউ। বিশেষ করে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রতিবেদনে এবং এই ধরনের লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়।

ইইউ সাধারণ নাগরিকের অফলাইন এবং অনলাইনে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়ে উদ্বেগ উত্থাপন করে। বিশেষ করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (ডিএসএ) নিবর্তনমূলক ধারাগুলোর এখনো বিলুপ্ত বা সংশোধন না হওয়ার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়। যে কোনো ডিজিটাল অপরাধের লাগাম টানার ক্ষেত্রেও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা থাকার বিষয়টি তুলে ধরে বলা হয়েছে, চূড়ান্ত পদক্ষেপও মানবাধিকারকে সমুন্নত রাখা তথা সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ জরুরি।

ইইউ বলছে, জাতি, বয়স, লিঙ্গ পরিচয়, যৌন অভিমুখিতা, ধর্মীয় বা রাজনৈতিক সম্বন্ধ, অক্ষমতা বা আর্থ-সামাজিক পটভূমি নির্বিশেষে সকলের মানবাধিকারের প্রচার ও সুরক্ষা স্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

ইইউ আরও জানায়, আগামী বছর বাংলাদেশের পরবর্তী সার্বজনীন পর্যায়ক্রমিক পর্যালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বর্ধিত সহযোগিতা প্রদানের জন্য প্রস্তুত তারা।

ঢাকার পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকার সংবিধানে বর্ণিত সবার মানবাধিকারের নিশ্চয়তা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সন্ত্রাস ও সহিংস চরমপন্থার বিরুদ্ধে সরকারের ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থার উল্লেখযোগ্য সাফল্য তুলে ধরেছে।
জন পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেন৷ ফলে জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণ বাংলাদেশে একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে৷

এবারের একাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, ডেনমার্ক এবং ভারত এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষক পাঠানো নিশ্চিত করেছে৷ এছাড়া বাংলাদেশের ১১৮টি প্রতিষ্ঠানকে পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন৷ তবে এবার অধিকার, ফেমা এবং ব্রতী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি পায়নি৷

ঢাকার পক্ষ আরও বলা হয়, ইইউ’র সঙ্গে প্রায় পাঁচ দশকের দীর্ঘ অংশীদারিত্বকে মূল্যায়ন করে বাংলাদেশ। বস্তুনিষ্ঠ ও গঠনমূলক পর্যবেক্ষণের প্রশংসা করে।