আজ ঢাকায় আসছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ইতোমধ্যে এ নিয়ে নিজের আগ্রহ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তিনি। দুইদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শুক্রবার (২৬ মার্চ) সকাল সাড়ে ১০টায় ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন নরেন্দ্র মোদি। এ নিয়ে ইতোমধ্যে তার টুইটারে দুটো টুইট করেছেন তিনি।
এতে তার আসার অপেক্ষার কথা উল্লেখ করে লিখেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের প্রতিবেশীসুলভ ও অংশীদারিত্বের সম্পর্ক বিদ্যমান। আমরা এটিকে আরও গভীরতর করতে ও সম্পর্কে বৈচিত্র্য আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন যাত্রা সমর্থন করি।
তিনি লেখেন, ‘আমি আগামীকাল বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা করবো। আমি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শ স্মরণ করার প্রত্যাশায় রয়েছি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর উদযাপনের পাশাপাশি আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে চাই।’
তার এই টুইটে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির লিংকও ছিল। যেটি ভারতীয় প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে মোদি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে ২২-২৬ মার্চ বাংলাদেশ সফর করবো। আমি আনন্দিত যে, করোনা মহামারির পর বন্ধুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী রাষ্ট্রে আমার প্রথম বিদেশ সফর, যাদের সঙ্গে ভারতের গভীর সাংস্কৃতিক, ভাষাগত সম্পর্ক বিদ্যমান।’
তিনি বলেন, ‘আগামীকাল বাংলাদেশের জাতীয় দিবস উদযাপনে আমি আমার অংশগ্রহণের প্রত্যাশায় রয়েছি, যা বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীও উদযাপন করবে। বঙ্গবন্ধু ছিলেন গত শতাব্দীর অন্যতম দীর্ঘ নেতা, যার জীবন ও আদর্শ লাখ লাখ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। তার স্মৃতিতে শ্রদ্ধা জানাতে আমি টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি দেখার অপেক্ষায় আছি।’
‘আমি পৌরাণিক ঐতিহ্যের ৫১টি শক্তিপীঠের মধ্যে অন্যতম প্রাচীন যশোরেশ্বরী কালী মন্দিরে দেবী কালিকে প্রার্থনা করার অপেক্ষায় রয়েছি। বিশেষত ওড়াকান্দিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমার আলাপচারিতার প্রত্যাশায় আছি, যেখান থেকে শ্রী শ্রী হরিচন্দ্র ঠাকুর তার শুদ্ধ বাণী প্রচার করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিষয়ে আলোচনায় বসবো। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গেও সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এছাড়াও আমি অন্যান্য বাংলাদেশি বিশিষ্টজনদের সঙ্গেও মতবিনিময়ের অপেক্ষায় রয়েছি।’
এদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বরণ করতে প্রস্তুত রাজধানী। ইতোমধ্যে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও কিছু স্থাপনা সেজেছে বর্ণিল সাজে। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে বসানো হয়েছে তোরণ। সড়কের খুঁটি, ভবন ও দেয়ালে মোদির ছবি সম্বলিত ব্যানার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে। সড়কের সৌন্দর্যবর্ধক ভাস্কর্যগুলোতেও ফুলের সঙ্গে শোভা পাচ্ছে মোদির ছবি। বড় বড় করে বিভিন্ন জায়গায় লেখা হয়েছে, ‘স্বাগতম ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি’।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে ভারতসহ বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ইতোমধ্যে চারটি দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা বাংলাদেশে সফর করেছেন। করোনার কারণে অনেক দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত না হয়ে পাঠিয়েছেন ভিডিও বার্তা।
১৭ থেকে ২৬ মার্চ ১০ দিনের অনুষ্ঠানে এর আগে বিদেশি নেতারা অংশ নিয়েছেন। শেষ দিন (২৬ মার্চ) অংশ নেবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী দেশ, প্রতিবেশী, ব্যবসা-বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানের কারণে দুই দেশের সম্পর্ক সুগভীর। ফলে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কদরও একটু বেশি। তাই তাকে বরণে সব প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশ।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবেন নরেন্দ্র মোদি। তাকে অভ্যর্থনা জানাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মোদিকে লাল গালিচা সংবর্ধনা এবং গার্ড অব অনার দেয়া হবে।
এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাবেন। ধানমন্ডি-৩২-এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতেও শ্রদ্ধা জানাবেন এবং বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর পরিদর্শন করবেন। বিকেলে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
সন্ধ্যায় মোদি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যৌথভাবে ‘বঙ্গবন্ধু-বাপু জাদুঘর’ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। তিনি তার সম্মানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এক রাষ্ট্রীয় ভোজসভায় অংশ নেবেন।
২৭ মার্চ শনিবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধি ও কাশিয়ানী উপজেলার মতুয়া সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান শ্রীধাম ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ি পরিদর্শন করবেন। ইতোমধ্যে সেখানেও তাকে স্বাগত জানাতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে উলু ও শঙ্খধ্বনি দিয়ে এবং ডঙ্কা ও কাঁসা বাজিয়ে মতুয়া ধর্মাবলম্বীরা নরেন্দ্র মোদিকে বরণ করবেন বলে জানা গেছে।
একই দিন সাতক্ষীরায় হিন্দু মন্দিরও পরিদর্শন করবেন মোদি। এছাড়াও বাংলাদেশ সফরে তিনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এ সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে অনেকগুলো চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা অন্যতম। এছাড়া তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে আসবে বলেও জানা গেছে। এমনটাই আভাস দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা।
নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে সফর উপলক্ষে দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে শ্রিংলা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রীর এ সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সফরে ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং দুই দেশের নাগরিকদের যোগাযোগ বাড়ানোর বিষয়টি গুরুত্ব পাবে। ২৭ তারিখ রাতে বাংলাদেশ ত্যাগ করবেন নরেন্দ্র মোদি।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।