পূর্ব ইউক্রেনের দুটি রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাকামী অঞ্চলের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবারের সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে এ কথা জানিয়ে দেন তিনি। পশ্চিমারা তাৎক্ষণিকভাবে এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন ব্যবস্থার হুমকি দিয়েছে।
গতকালই এর আগে দুই অঞ্চলের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাকামী নেতারা রাশিয়াকে তাদের স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
পশ্চিমা শক্তিগুলোর আশঙ্কা, তাদের স্বাধীনতার ঘোষণার মতো পদক্ষেপকে রাশিয়া প্রতিবেশী দেশটিকে আক্রমণের অজুহাত হিসাবে ব্যবহার করতে পারে। এ কারণে পুতিনের এ উদ্যোগ ইউক্রেন নিয়ে উত্তেজনা আরো বাড়িয়ে দেবে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
পুতিনের ভাষণের পরপরই যুক্তরাজ্য ও জার্মানির নেতারা এর নিন্দা করেন। ইইউ একে ‘আন্তর্জাতিক আইনের চরম লংঘন’ আখ্যা দিয়েছে। ইউক্রেনের পাশে থেকে দৃঢ়তার সঙ্গে বিষয়টি মোকাবেলা করা হবে বলে তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়েছেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুল ফন ডার লেয়েন। ইইউ এর পররাষ্ট্র নীতি প্রধান জোসেফ বরেল আগে বলেছিলেন, তিনি এরকম কিছু হলে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব উত্থাপন করবেন।
লুহানস্ক ও দোনেস্ক অঞ্চলকে স্বাধীনতা দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে ভাষণে পুতিন বলেন, তিনি এ সংক্রান্ত দলিলপত্র সই করেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্টকে তা দ্রুত অনুমোদনের নির্দেশনা দেন।
গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় (বাংলাদেশে সোমবার দিবাগত রাত প্রায় ১টার দিকে) শুরু হওয়া ভাষণে পুতিন ইউক্রেন কর্তৃপক্ষের নিন্দা করেন ও বিভিন্নভাবে সতর্ক করে দেন। শুরুতেই তিনি ইঙ্গিত দেন ইউক্রেন একটি প্রকৃত রাষ্ট্রই নয়। তিনি বলেন, ‘লেনিন ইউক্রেনের প্রণেতা ও স্থপতি। …তিনি (ইউক্রেন প্রতিষ্ঠা করে) রাশিয়াকে অসুবিধাজনক অবস্থায় ফেলেছিলেন। ’
কেজিবির এই সাবেক প্রধান আরও বলেন, ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার মাধ্যমে রাশিয়াকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
টিভি ভাষণের আগে জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। বৈঠকে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা পূর্ব ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাকামীদের স্বাধীনতার স্বীকৃতির পক্ষে কথা বলেছেন বলে জানানো হয়।
ভাষণে পুতিন ন্যাটোর বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে ‘যুদ্ধের মঞ্চে’ পরিণত করার অভিযোগ করেন। ইউক্রেনের ন্যাটোতে অন্তর্ভুক্তি ‘একটি নিষ্পন্ন বিষয়’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ন্যাটোর সম্প্রসারণ হলে রাশিয়ার ওপর ‘আকস্মিক আঘাতের’ ঝুঁকি বাড়বে।
দীর্ঘ এক ঘণ্টার ভাষণে ইউক্রেনের প্রতি সতর্কতা উচ্চারণ করে পুতিন বলেন, ‘তাহলে আপনারা কমিউনিজমের চিহ্ন রাখতে চান না? বেশ, আমাদের অসুবিধা নেই। তবে মাঝপথে থামবেন না। আমরা দেখাবো কমিউনিজমের চিহ্ন দূর করা কাকে বলে। ’
ইউক্রেনকে ‘বাইরে থেকে’ কেউ চালাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন পুতিন। তিনি বিভিন্ন পরিসেবার চড়া মূল্য ও কথিত দুর্নীতির উল্লেখ করে সেখানকার সরকারের দেশ পরিচালনার নিন্দা করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে এর মাধ্যমে তিনি ইউক্রেনের পশ্চিম ইউরোপীয় কায়দার শাসন অনুকরণের প্রতি ইঙ্গিত করেন।
রুশ-সমর্থিত ইউক্রেনীয় বিদ্রোহীরা ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের সরকারি বাহিনীর সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক এলাকায় যুদ্ধ করছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তি থাকা সত্ত্বেও সেখানে নিয়মিত সহিংসতা ঘটছে। ইউক্রেন সীমান্তে সেনা সমাবেশের কারণে নুতন করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে অঞ্চলটি।
২০১৯ সাল থেকে রাশিয়া তার সীমান্ত-সংলগ্ন ওই দুটি ইউক্রেনীয় অঞ্চলে বসবাসকারী লোকদের জন্য বিপুলসংখ্যক পাসপোর্ট ইস্যু করেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এ দুটি অঞ্চলকে স্বাধীন হিসেবে স্বীকৃতি দিলে রাশিয়া তার নাগরিকত্ব দেওয়া লোকদের সুরক্ষার আড়ালে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে সেনা পাঠাতে পারবে।
রাশিয়া কিছুদিন ধরে মহড়ার নামে ইউক্রেনের সীমান্তে দেড় লাখের বেশি সেনা মোতায়েন করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো একে ইউক্রেনে বড় ধরনের আক্রমণের প্রস্তুতি হিসাবেই দেখছে। রাশিয়া প্রতিবেশী দেশটির পশ্চিমা সামরিক জোটে প্রবেশের ঘোর বিরোধী। তবে তারা ইউক্রেন আক্রমণের পরিকল্পনার কথা অস্বীকার করে আসছে।
সূত্র: বিবিসি
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।